পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহামতি দ্বিজেন্দ্রনাথ শ্ৰীবিধুশেখর ভট্টাচাৰ্য্য স্বৰ্গীয় পূজ্যপাদ দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের মৃত্যুতিথি আসন্ন। র্তাহার অনেক কথা আজ মনে হইতেছে। এক দিকে দ্বিজেন্দ্রনাথ ও অপর দিকে রবীন্দ্রনাথ, এই হিমালয় ও বিন্ধ্যের মধ্যবর্তী আর্যভূমিতে বাস করিবার সময় উভয়েরই সহিত এই লেখকের একটা ঘনিষ্ঠত হইয়াছিল। তাহারই ফলে হয়তে এমন কয়েকটি কথা আমার জানিবার স্থবিধা হইয়াছিল যাহা অন্যে জানেন না। দ্বিজেন্দ্রনাথের সম্বন্ধে এইরূপই কয়েকটি কথা আজ লিখিতেছি । র্যাহারা তাহাকে জানেন, অথবা র্যাহারা জানেন না, উভয়েই ইহাতে আনন্দ অনুভব করিতে পরিবেন। দ্বিজেন্দ্রনাথ বড় রসিক ও পরিহাসশীল ছিলেন। একবার পূজাবকাশে আমি বাড়ী গিয়াছিলাম। সে বার পূজা হইয়াছিল কাতিক মাসে। দ্বিজেন্দ্রনাথ আমাকে একখানি পত্র লিখিয়াছিলেন, ইহা ছিল একখানি খামের মধ্যে। খামখানি ছিড়িয়া পত্রের প্রথমেই ডান দিকে তারিখের সংখ্যার পরে দেখিলাম সারি সারি ছয়টি মুণ্ড অণক রহিয়াছে। তাহার পর সালের সংখ্যা । কী বিচিত্ৰ ! উহার মানে কী ? আমার বুঝিতে দেরী হইল না। ঐ ছয়টি মুণ্ডে দ্বিজেন্দ্রনাথ কাতিক মাস বুঝাইয়াছেন। কাৰ্ত্তিকের একটি নাম যড়ানন। ইহাই হইল তাহার ঐ কৌতুকের মূলে। দ্বিজেন্দ্রনাথ বাঙলার রেখাক্ষর লইয়া দীর্ঘকাল, এমন কি শেষ সময় পর্যন্ত আলোচনা করিয়া গিয়াছেন। এই রেখাক্ষরের এক-একটি কবিতায় তাহার পরিহাসপ্রিয়তা চমৎকার ফুটিয়া উঠিয়াছে। তিনি ইহার একখানি আমাকে দিয়াছিলেন। ইহাতে আমার নামের পূর্বে একটি চমৎকার বিশেষণ বসাইয়াছিলেন। তাহা এই— “নিখিল শাস্ত্রপারাবারের অগস্ত্য মুনি " বলা বাহুল্য পাঠকের বুঝিতে দেরী হইবে না, উহার অর্থ হইতেছে, অগস্ত্য মুনি যেমন এক চুমুকে সমুদ্রকে পান করিয়াছিলেন, এই ব্যক্তিও তেমনি সমস্ত শাস্ত্র অধিকার করিয়া শেষ করিয়াছে ! দ্বিজেন্দ্রনাথের স্বাস্থ্য খুবই ভাল ছিল। তিনি নিজে আমাকে বলিয়াছিলেন, ত্রিশ বৎসরের মধ্যে র্তাহার মাথাও ধরে নাই। পরে একবার তাহার গুরুতর পীড়া হয়। তিনি নিজের আমলককুঞ্জে (নীচু বাঙলায় ) ছিলেন। র্তাহার পুত্র স্বৰ্গীয় দ্বিপেন্দ্রনাথ ও অন্যান্ত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের পরামর্শে ঐ অনুস্থাবস্থায় তাহাকে শাস্তিনিকেতনের অতিথিশালার দোতালার উপর আনা হয়। র্তাহার নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেই ইহা হইয়াছিল। রোগ যখন ক্রমশ বাড়িতে লাগিল তখন তাহাকে কলিকাতায় আনিয়া চিকিৎসা করান স্থির হয় । তদনুসারে রেলগাড়ীর উপযুক্ত ব্যবস্থা প্রভৃতি সমস্ত ঠিকঠাক। কিন্তু র্তাহাকে যখন ইহা জানান হইল তিনি একেবারেই বাকিয়া বসিলেন, কিছুতেই তিনি যাইবেন না। তাহার ডাক্তারী চিকিৎসায় একটুও শ্রদ্ধা ছিল না । তিনি বলিলেন, “তোমরা ত আমাকে লইয়৷ যাইবে, কিন্তু এমন (অর্থাৎ শান্তিনিকেতনের মত) atmosphere সেখানে কোথায় ?” যখন তিনি কলিকাতায় আসিতে কিছুতেই রাজী হইলেন না, তখন মিথ্যার আশ্রয়ে আনিবার চেষ্ট হইল। তাহাকে বলা হইল, ভাল, তিনি না-হয় কলিকাতায় না-ই যাইবেন । কিন্তু তাহার নিজের আমলককুঞ্জে গেলে ভাল হয়। তিনি ইহাতে সম্মত হইলেন। এই স্বযোগে তাহাকে মোটর গাড়ীতে উঠাইয়া একেবারে ষ্টেশনে আনিয়া রেলগাড়ীতে উঠান হয়, এবং এইরূপে কলিকাতায় জোড়াসাকোতে নিজের বাড়ীতে আনা হয়। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে তিনি ভাল হইয়া উঠেন, কিন্তু দুৰ্ব্বল ছিলেন বহুদিন পর্য্যস্ত। এই সময়ে আমি কলিকাতায় আসিয়া প্রথমে গুরুদেবের