পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্থূল ধারণা করিতে পারি। আর সেই প্রত্ন-ইতিহাসের পরিপূরকরূপে পাশ্চাত্য নৃতত্ত্ববিদেরা বর্তমান জাতিদের জীবনধারা পৰ্য্যালোচনা করিয়া মানব-সভ্যতার ও মানব-সমাজের শৈশব-যুগের চিত্র অধিকতর পরিস্ফুট করিয়া তুলিতেছেন । নৃতত্বের এই সমস্ত তথ্যগুলিই মানবের ও মানব-সভ্যতার ইতিহাসের গোড়ার কথা । সিদ্ধান্ত হিসাবে ইহা সৰ্ব্ববাদিসম্মত হইলেও কাৰ্য্যতঃ বিশ্বমানবের ইতিহাসের এই প্রথম অধ্যায় বাদ দিয়াই সাধারণতঃ ইতিহাস গ্রন্থ রচিত হয়। আমাদের স্কুলকলেজেও এইরূপ মূল-অঙ্গহীন ইতিহাসের অধ্যাপনা চলিয়া আসিতেছে। ইতিহাস-শিক্ষার্থী প্রায় কোনও ছাত্রই নৃতত্বের অনুশীলন করেন না বা করিবার স্বযোগও প্রাপ্ত হন না। ভারতবর্ষে এ-বিষয়ের অল্পশীলন বা প্রচার প্রায় কিছুই হয় নাই বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। সমগ্র ভারতের পঞ্চদশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কেবলমাত্র কলিকাত বিশ্ববিদ্যালয়েই, প্রাতঃস্মরণীয় স্বৰ্গীয় স্তর আশুতোষের নেতৃত্বে পৃথকভাবে এবং ভারতের প্রাচীন ইতিহাসের অংশস্বরূপ নৃতত্ত্ব শিক্ষার ব্যবস্থা পনর-ষোল বৎসর যাবৎ হইয়াছে। এবং সম্প্রতি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৰ্ত্তমান ভাইস-চ্যান্সেলার ত্রযুক্ত খামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের প্রযত্নে নৃতত্ত্ব মধ্য-পরীক্ষার ( Intermediate ) পাঠ্যতালিকাভুক্ত হইয়াছে। এতদ্ব্যতীত কেবল বম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক সমাজতত্বের, অন্ধ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের, ও লক্ষ্মেী বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থশাস্ত্রের অঙ্গস্বরূপ কেবল আংশিকভাবে নৃতত্ত্ব শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। প্রাচীন ভারতে নৃতত্বের এরূপ অনাদর ছিল না। নৃতত্ব বর্জন করিয়া পুরাবৃত্ত বা ইতিহাস রচিত বা অধীত হইত না। কিংবা, তাহা হইতে পারে, এরূপ ধারণাও প্রাচীন হিন্দু ঋষিদের ছিল না। পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা যাহাকে ইতিহাস (History) to avow (Anthropology) বলেন এই উভয় শাস্ত্রেরই স্থান প্রাচীন ভারতে অধিকার করিত আমাদের পুরাণ গ্রন্থগুলি ও কতিপয় সংহিতা বা ধৰ্ম্মশাস্ত্র। আর ভারতের দুইখানি অমূল্য মহাকাব্য— রামায়ণ ও বিশেষতঃ মহাভারত,—আংশিক অতিশয়োক্তি ও অতিরঞ্জন সত্ত্বেও, নৃতত্ত্ব ও ইতিহাসের নানা তথ্যের ইতিহাস ও নৃতত্ত অসভ্য. به پایا আকর। আমাদের পুরাণকার ঋষিরা তাহাদের জ্ঞান ও বিশ্বাস-মতে মানবের ও মানব-সমাজের উৎপত্তি হইতে আরম্ভ করিয়া পৌরাণিক যুগ পৰ্য্যস্ত বিভিন্ন যুগের অবস্থা-পরম্পরার একটি সমগ্র-চিত্র পুরাণ গ্রন্থগুলিতে অঙ্কিত করিবার চেষ্ট করিয়াছেন। পুরাণ-বণিত কোন তথ্য কত দূর প্রামাণ্য তাহা স্বতন্ত্র কথা । এখনও সে-সম্বন্ধে সম্যকৃ গবেষণা হয় নাই । সে যাহা হউক, পুরাণ-প্রণেতা ঋষিদের প্রধান লক্ষ্য ছিল আনিত্যের মধ্যে মিত্যের সন্ধান, বাস্তবের মধ্যে আদর্শের সন্ধান ও সেই আদর্শকে ইতিহাসের মধ্যে পরিস্ফুট ও প্রচার করা। কেবল ঐহিক ঘটনাবলীর ইতিহাস অনুশীলনে র্তাহারা তৃপ্ত হইতেন না। ইতিহাস ও নৃতত্ত্ব সম্বন্ধে আমাদের প্রাচীন আযঋষিদের ধারণার সহিত পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের ধারণার অবগু সম্পূর্ণ মিল হয় না। তাহার প্রধান কারণ এই যে পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের দৃষ্টি প্রধানতঃ বহুিমুখী, কিন্তু ভারতের আযাঋষিদের দৃষ্টি ছিল অস্তমুখী। পাশ্চাত্য সভ্যতার আদর্শ প্রধানত বহিঃপ্রকৃতির উপর সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব-স্থাপন ; ভারত-সভ্যতার আদর্শ অস্তঃপ্রকৃতির উপর সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপনের দ্বারা মানবের অস্তনিহিত দেবত্বের পূৰ্ণ প্রকাশ। প্রাচীন আধ্য ঋষিদের নিরূপিত পারিবারিক নীতি ও ক্রিয়াকাও, সমাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষানীতি, রাষ্ট্রনীতি প্রভৃতি মানবজীবনের চরম লক্ষোর উদ্দেশে প্রবর্তিত । হিন্দু ধৰ্ম্মশাস্ত্রের বিধি-বিধানের মধ্যে কালক্রমে অনেক আবর্জন প্রক্ষিপ্ত ও সঞ্চিত হষ্টলেও তাহাদের মূল লক্ষ্য ছিল মানবেন্স পশুপ্রকৃতিকে বশীভূত করিয়া দেব-প্রকৃতির ফুরণ ও তাহার আধিপত্য স্থাপনের উপায় বিধান। হিন্দুর দুর্গাপ্রতিমা মানবের দেবভাবের দ্বারা পশুভাবের পরাজয়েরষ্ট প্রতীক। চওঁীর মহিষাসুর-বধ ইহারই রূপক । আমাদের পুরাণ গ্রন্থগুলি সাধারণের বোধগম্য সহজ সরল আখ্যায়িকার সাহায্যে ইতিহাস ও নৃতত্ত্ব ও ধর্থনীতি শিক্ষা দিতেছে। সামাজিক ইতিহাস, নৃতধের আধার স্বরূপ সমগ্র ভারতের তৎকালীন প্রচলিত লৌকিক রীতিনীতি, জন্ম-মৃত্যু, বিবাহ-সংস্কার ও বজ্ঞাদি ধৰ্ম্মান্তৰ্ধান, আশ্ৰম-ধৰ্ম্ম, দায়-বিভাগ, দণ্ডনীতি, রাষ্ট্রনীতি প্রভৃতি সমাহরণ, সংশ্লেষণ ও সমীকরণ করিয়া পুরাণ ও সংহিতাগুলিতে যথারীতি বিধিবদ্ধ