পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

હ૧૦ শীলনে কেবল আমাদের বুদ্ধিবৃত্তির ও জ্ঞানপিপাসার চরিতার্থত হয় তাহা নহে, মনের উদার ভাবের উন্মেষণ ও চিত্তে ভূমার সংস্পৰ্শ লাভ হয়। বিশ্বমানব একই মূল হইতে উদ্ভূত এবং একই ধারার চিস্তা, ভাব ও বাসনায় অন্তঃপ্রাণিত, ও জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে একই লক্ষ্যের অভিমুখে পাবিত, সমগ্র মানব জাতির এক-জাতিত্বের এই উপলব্ধির দ্বারা আত্মার অসীমত্বের প্রকাশ অবশ্যম্ভাবী। সেই আত্মপ্রসারের ফলে নৃতত্ত্বসেবী সাধকের হৃদয়ে সাৰ্ব্বজনীন সহানুভূতির ও প্রীতির প্রচ্ছন্ন উৎস উন্মুক্ত ও প্রকটিত হয়। এবং মানবেতর জীবজগতের জৈব-দ্বন্দ্বের (biological rivalry-র ) পরিবর্তে “বন্ধধৈব কুটুম্বকম্‌” এই সাৰ্ব্বজনীন আত্মীয়তাবোধ পরিস্ফুট হয়। এই প্রবন্ধের প্রারম্ভে বলিয়াছি যে নৃতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় মানব-সভ্যতার ইতিহাসের গোড়ার কথা—প্রথম অধ্যায়ের বিষয়ীভূত। আর নৃতত্ত্ব-অনুশীলনের ফলে যে একাত্মামুভূতি জন্মে তাহাই সভ্যতার ইতিহাসের শেয কথা। এজন্য নৃতত্বকে সমগ্র মানব-সভ্যতার প্রকৃত ইতিহাস বলা বোধ হয় অত্যুক্তি হইবে না। নৃতত্বাতুশীলনের স্বফল কেবল নৃতত্ত্বসেবীর নিজের জ্ঞানলাভ ও চিত্তের প্রসারেই পর্য্যবসিত হয় না। নৃতত্ত্বজ্ঞানের সাহায্যে নানা জাতির সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, ধৰ্ম্মবিশ্বাস ও সংস্কার, সুখ-দুঃখ, ভয় ও আশার সহিত পরিচিত হইলে ধৰ্ম্মপ্রচারক, শিক্ষক, সমাজ-সংস্কারক, রাষ্ট্রশাসক এবং বিচারকও স্ব-স্ব কৰ্ত্তব্য ও জীবনব্ৰত অধিকতর নিপুণভাবে পালন করিতে সমর্থ হইবেন। আর নৃতত্ত্বজ্ঞান হইতে যে সাৰ্ব্বজনীন সহানুভূতি, সমবেদনা ও প্রীতি উদ্ভূত হয় তাহ দ্বারা অনুপ্রাণিত হইয়া কোন কোন নৃতত্ত্ববিৎ স্ব-স্ব শক্তি ও স্বযোগানুসারে প্রবলের অত্যাচারে প্রপীড়িত, নানাবিধ কুসংস্কারে সমাচ্ছন্ন, দুনীতিমূলক ও পীড়াদায়ক সামাজিক আচারে ক্লিষ্ট আদিম জাতিদের হিতকল্পে সাধ্যানুযায়ী যত্ন ও পরিশ্রম করিতে প্রবৃত্ত হইবেন । বহুকাল যাবৎ আর্থিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিকুল অবস্থার পীড়নে ষে-সমস্ত অস্ত্যজ আদিম জাতির গতিশক্তি এত দিন রুদ্ধপ্রায় আছে, তাহাজের প্রতি আমাদের কৰ্ত্তব্যপালনে নৃতত্ত্বজ্ঞান আমাদিগকে প্রবুদ্ধ করিবে। নৃতত্ত্বাকুশীলনের দ্বারা আমরা প্রবাসী SN98\రి সম্যক হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিব যে ঐ সব পশ্চাৎপদ জাতির আমাদেরই ভ্রাত-ভগ্নী। তাহাদের প্রতি আমাদের কর্তব্য কবির ভাষায় বলিতে গেলে— “এই সব মৌল স্নান মক মুখে দিতে হবে ভাব, এই সব শান্ত বুকে ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশ ।” দৈবছুৰ্ব্বিপাকে স্বদীর্ঘকালব্যাপী প্রতিকূল আবেষ্টনীর প্রভাবে ও সভ্যতর জাতিদের এবং উচ্চতর সংস্কৃতির সংস্পর্শের অভাবে (মন্সর ভাষায়, "ব্ৰাহ্মণীনাং আদর্শনাৎ” ) অনেকগুলি আদিম জাতি প্রায় স্থাণুবৎ নিশ্চল রহিয়াছে । আর অপর পক্ষে ভগবৎপ্রসাদে অন্তকূল প্রাকৃতিক আবেষ্টনীর প্রভাবে এবং বিভিন্ন জাতির সংস্পর্শে ও আংশিক সংমিশ্রণে বর্তমান সভ্য জাতিদের অভিব্যক্তির বেগ ক্রমশ: বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইয়াছে। এই জন্যই ঐ সমস্ত আদিম জাতির প্রতি সভ্যতাভিমানী জাতিদের দায়িত্ব অত্যন্ত অধিক। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে আমরা এ পর্য্যস্ত আমাদের এই অতুল্পত পশ্চাৎপদ আত্মীয়দের সম্বন্ধে বিশেয কোন চিন্তাই করি নাই। ইহাদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তার, সমাজসংস্কার ও ধৰ্ম্মসংস্কারের যথাসাধ্য সহায়তা করা আমাদের একান্ত কৰ্ত্তব্য, এ কথা আমরা এতদিন বুঝিয়াও বুঝিতেছি না। এই কৰ্ত্তব্য পালনে আশা করা যায়, নৃতত্ত্বজ্ঞান আমাদিগকে উদ্বুদ্ধ করিবে। আর সভ্যতার নব নব ক্ষুধাতৃষ্ণ মিটাইতে গিয়া এই সব জাতি যাহাতে স্থধার সঙ্গে হলাহল পান না করে এ সম্বন্ধেও, আশা করা যায়, সমাজসংস্কারকের নৃতত্ত্বজ্ঞানের সাহায্যে যথাযথ উপায় অবলম্বন করিতে সক্ষম হইবেন। রাষ্ট্রশাসন ও বিচারকার্য্যে নৃতত্ত্বজ্ঞানের উপযোগিতা ও উপকারিতা সম্বন্ধে পাশ্চাত্য রাষ্ট্রপরিচালকেরা এখন সজাগ হইয়াছেন ; ভরসা করি ভারতসরকারও হইবেন । দুঃখের বিষয়, যদিও ভারতীয় সিভিল সাভিসের জন্ত বিলাতে যে পরীক্ষা হয় তাহাতে নৃতত্ত্ব অন্যতম বিষয়ৰূপে নিদিষ্ট আছে, ভারতে যে পরীক্ষা হয় তাহাতে নৃতত্ত্ব এখন পরীক্ষার বিষয়ের মধ্যে পরিগৃহীত হয় না। সে যাহা হউক, নৃতত্ত্ব-অনুশীলন হইতে আর একটি প্রকৃষ্ট ফল প্রত্যাশা করা যায়। তাহা এই যে নৃতত্ত্বজ্ঞানের সাহায্যে সমগ্র মানব-জাতির ভ্রাতৃত্ব-সম্বন্ধ উপলব্ধি হইলে জগতে যথার্থ মহা-মানব-সংঘ,—জেনেভা-মার্ক রাজনৈতিক