পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

` : নূতন বিপৎপাতের ধাক্কাটা সামলাইয়া লইয়া ভাবিলাম, যেদিকে হোক চলিতে যখন হইবেই তখন সামনে চলাই ভাল ; পিছু ফিরিলে হয়ত আবার জঙ্গলের দিকেই চলিয়া যাইব। এটা যদি কাচা রাস্তাই হয় তবে ইহার প্রাস্তে নিশ্চয় লোকালয় আছে । একটা মামুষের সাক্ষাৎ পাইলে আর ভাবনা নাই। লোকালয় ও মানুষের সাক্ষাৎকার যে একেবারে আসন্ন হইয় পড়িয়াছে তাহা তখনও বুঝিতে পারি নাই। দু-প: অগ্রসর হইয়াছি এমন সময় চোখের উপর একট। তীব্র আলোক জলিয়া উঠিল এবং আলোকের পশ্চাৎ হইতে কড়া মুরে প্রশ্ন আসিল, ‘কে ? কোন হায় ? আলোকের অসহ রূঢ়তা হইতে অনভ্যস্ত চক্ষুকে বঁাচাইবার জন্য একটা হাত আপন হইতে মুখের সম্মুখে আসিয়া আড়াল করিয়া দাড়াইল ; তখন আরও কড়া হুকুম আসিল, হাত মামাও। কে তুমি ? হাত নামাইলাম ; কিন্তু কি বলিয়া নিজের পরিচয় দিব ভাবিয়া পাইলাম না, দু-বার ‘আমি—আমি বলিয়া থামিয় গেলাম । আলোকধারী আরও কাছে আসিয়া আমাকে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করিল। এতক্ষণে আমার চক্ষুও আলোকে অভ্যন্ত হইয়াছিল ; দেখিলাম আলোট যত তীব্র মনে করিয়াছিলাম তত তীব্র নয়—একটা সাধারণ বৈদ্যুতিক টর্চ। আলোকধারীকেও আবছায়া ভাবে দেখিতে পাইলাম, সে বঁ-হাতে টর্চ ধরিয়াছে এবং ডান হাতে কি একটা জিনিষ আমার দিকে নির্দেশ করিয়া আছে। আলোকধারী আবার কথা কহিল, এবার স্বর বেশ নরম। বলিল, “আপনি বাঙালী দেখছি। এ সময়ে এখানে কি ক’রে এলেন ? এই প্রশ্নটা আমার মনেও এতক্ষণ চাপ ছিল, পরিস্ফুট হইতে পায় নাই। আমি বলিলাম, আপনিও অবাঙালী – এখানে কি করছেন ? "সে কথা পরে হবে। আপনি কেন এখানে এসেছেন আগে বলুন। আবার স্বর একটু কড়া। ক্ষীশ্বস্বরে বলিলাম, কাছেই জঙ্গল আছে, সেখানে শিকার করতে গিয়েছিলাম। ফিরতে রাত হয়ে গেল—পথ হারিয়ে ফেলেছি।" وج ـ هما ‘আপনার বাড়ী কোথায় ?” ‘মুঙ্গের, এখান থেকে চার-পাচ মাইল হবে। ‘নাম কি ? নাম বলিলাম। মনে হইল যেন আদালতের কাঠগড়ায় দাড়াইয়া উকিলের জেরার উত্তর দিতেছি । কিছুক্ষণ আর কোনও প্রশ্ন হইল না। লক্ষ্য করিলাম, প্রশ্নকৰ্ত্তার উগত ডান হাতখানা পকেটের দিকে অদৃগু হইয়া গেল । টর্চের আলোও আমার মুখ হইতে নামিয়া মাটির উপর একটা উজ্জল চক্র স্বজন করিল। "আপনি নিশ্চয় বাড়ী ফিরতে চান ?" সাগ্রহে বলিলাম, 'সে কথা আর বলতে ! তবে একটা আলো না পেলে--' প্রচ্ছন্ন অনুরোধটা অসমাপ্ত রাখিয়া দিলাম। কিছুক্ষণ কোনো জবাব নাই । তার পর হঠাৎ তিনি বলিলেন, "আস্কম আমার সঙ্গে । আপনি শিকারী ; আমি শিকারীর ব্যথা বুঝি। বোধ হয় খুব ক্ষিদে পেয়েছে, ক্লান্ত ৪ হয়েছেন ; এক পেয়াল গরম চা বোধ করি মন্দ লাগবে না ; আমি কাছেই থাকি —আসুন । গরম চায়ের নামে সৰ্ব্বাঙ্গ আনন্দে শিহরিয়া উঠিল । দ্বিরুক্তি না করিয়া বলিলাম, চলুন।" ૨ দুই জন পাশাপাশি চলিলাম। টর্চের রশ্মি অগ্রবর্তী হইয় আমাদের পথ দেখাইয়া লইয়া চলিল । বেশী দূর যাইতে হইল না, বিশ কদম যাইতে-নযাহতে একটি ভগ্ন জরাজীর্ণ বাড়ীর উপর আলো পড়িল । বাড়ী বলিলাম বটে, কিন্তু বস্তুত সেটা একটা ইট-কাঠের শুপ। চারিদিকে খসিয়-পড়াইট ছড়ানো রহিয়াছে ; যেটুকু দাড়াইয়া আছে তাহাও জঙ্গলে, কাটাগাছে এমন ভাবে আচ্ছন্ন যে সেখানে বাঘ লুকাইয়া থাকিলেও বিস্ময়ের কিছু নাই। একটা তরুণ অশথগাছ সম্মুখের ছাদহীন দালানের ভিত্তি কাটাইয়া মাথা তুলিয়াছে এবং ভিতরে প্রবেশের পথ ঘন-পল্লবে অন্তরাল করিয়া রাখিয়াছে। বাড়ীখান সত্তর-আশ বছর আগে হয়ত কোনও স্থানীয় জমিদারের বাসভবন ছিল, তার পর বহুকাল পরিত্যক্ত