পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বন্দুক দেয়ালে হেলাইয়া রাখিলে গৃহস্বামী বলিলেন, *আপনার ওটা কি বন্দুক ? বলিলাম, সাধারণ শুটু-গান। কিন্তু ; এখানকারই তৈরি।" তিনি আসিয়া বন্দুকট হাতে তুলিয়া লইলেন। তাহার বন্দুক-ধরার ভঙ্গী দেখিয়াই বুঝিলাম আগ্নেয়াস্ত্র-চালনায় তিনি অনভ্যস্ত নন। বন্দুকের ঘাড় ভাঙিয়া নলের ভিতর দিয়া দৃষ্টি চালাইয়া তিনি বলিলেন,—মন্দ জিনিষ নস্থত। পচাত্তর গজ পর্য্যন্ত পরিষ্কার পাল্লা মারবে। একটু বেশী ভারি— তা ক্ষতি কি ?—কই কি পার্থী মেরেছেন দেখি ? তিনি নিজেই থলে আজাড় করিয়া পার্থীগুলি বাহির করিলেন। তার পর আনন্দে বলিয়া উঠিলেন,—"বাঃ এ যে তিতির আর বন-পায়রা দেখছি। দুটো হারিয়ালও পেয়েছেন —এদিকে অনেক হারিয়াল পাওয়া যায়—আমি দেখেছি।" দেখিলাম অকৃত্রিম শিশুস্কলভ আনন্দে তাহার মুখ ভরিয়া গিয়াছে। এতক্ষণ আমাদের মাঝখানে যে একটা অস্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবধান ছিল তাহ যেন অকস্মাং লুপ্ত হইয়া গেল । পাখীগুলিকে সস্নেহে নাড়িয়া-চাড়িয়া অবশেষে তিনি সোজা হইয়া দাড়াইলেন, একটু লজ্জিত স্বরে বলিলেন, "চায়ের আশ্বাস দিয়ে আপনাকে এনে কেবল পার্থীই দেখছি । অম্বিন চায়ের ব্যবস্থা করি । আপনি বক্ষন ; কিন্তু বসতে দেব কোথায়।—একটু অপেক্ষ করুন।’ তিনি দ্রুতপদে ঘর হইতে বাহির হইয়া গিয়া পরক্ষণেই দুটি ছোট মজবুতগোছের প্যাকিং কেস লইয়া ফিরিয়া আসিলেন, একটিকে টেবিলের পাশে বসাইয়া এদিক-ওদিক চাহিয়া শয্যার দিকে গেলেন, সেখান হইতে একটা সাদা লোমশ আসন জানিয়া বাক্সের উপর বিছাইয়া দিয়া বলিলেন, ‘এবার বন্ধন।' শাদা আস্তরণটা আমার কৌতুহল আকৃষ্ট করিয়াছিল, সেটা হাতে লইয়া পরীক্ষা করিয়া দেখিলাম, কোন জন্তুর চামড়া, ধবধবে সাদা রেশমের মত মোলায়েম দীর্ঘ লোমে ঢাকা চামড়াটি ; দেখিলেই লোভ হয় । জিজ্ঞাসা করিলাম, “কিসের চামড়া ? তিনি বলিলেন, ‘হরিণের।’ থাটি দেশী জিনিষ • বিম্মিত ভাবে বলিলাম, হরিণের । কিন্তু—সাদা হরিণ " তিনি একটু হাসিলেন, ‘হা—সাদা হরিণ।" সাদা হরিণের কথা কোথাও শুনি নাই, কিন্তু, কে জানে, থাকিতেও পারে। প্রশ্ন করিলাম, কোথায় পেলেন ? উত্তরমেরুর হরিণ নাকি ?” তিনি মাথা নাড়িলেন, ‘ন, অত দূরের নয়, গুমিদেশের । ওর একটা মজার ইতিহাস আছে –কিন্তু আপনি বন্ধন’ বলিয়া আতিথ্যসৎকারের আয়োজন করিতে লাগিলেন । দেখা গেল তাহার প্যাকিং বাক্সটি কেবল টেবিল নয়, র্তাহার ভাড়ারও বটে। তাহার ভিতর হইতে একটি ষ্টোভ বাহির করিয়া তিনি জালিতে প্রবৃত্ত হইলেন। চায়ের কোঁট, চিনির মোড়ক, জমানে দুধের টিন ও দুটি কলাই-করা মগ বাহির করিয়া পাশে রাখিলেন। তার পর একটি আলুমিনিয়ামের ঘটিতে জল লইয়া ষ্টোভে চড়াষ্টয়া দিলেন । র্তাহার ক্ষিপ্ৰ নিপুণ কাৰ্য্যতৎপরতা দেখিতে দেখিতে আমি বলিলাম, "আচ্ছ, আপনি যে এক জন পাকা শিকারী তা ত বুঝতে পারছি, আপনার নাম কি ? র্তাহার প্রফুল্ল মুখ একটু গম্ভীর হইল, বলিলেন, “আমার নাম গুনে আপনার লাভ কি ? “কিছুই না। তবু কৌতুহল হয় না কি ? ‘তা বটে । মনে করুন আমার নাম—প্রমথেশ রুদ্র ।” বুঝিলাম, আসল নামটা বলিলেন না । কিছুক্ষণ নীরবে কাটিল । তার পর সসস্কোচে জিজ্ঞাসা করিলাম, "আপনি একলা এই ভাঙা বাড়াতে কেন রয়েছেন এ প্রশ্ন করাও খুষ্টতা হবে কি ? তিনি উত্তর দিলেন না, যেন আমার প্রশ্ন শুনিতে পান নাই এমনি ভাবে ষ্টেভে পাম্প করিতে লাগিলেন ; মনে হইল তাহার চোখের উপর একটা অদৃপ্ত পর্দা নামিয়া আসিয়াছে । ক্রমে চায়ের জল ষ্টোভের উপর বিঝিপোকার মত শবদ করিতে আরম্ভ করিল। তিনি সহজভাবে বন্সিলেন, "চায়ের জলও গরম হয়ে এল। কিন্তু শুধু চা খাবেন ? আমার ঘরে এমন কিছু নেই ষা-দিয়ে অতিথিসেবা করতে পারি। কাল রাত্রে তৈরি