পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খানকয়েক শুকনো রুটি আছে, কিন্তু সে বোধ হয় আপনার গলা দিয়ে নামবে না।' আমি বলিলাম, "ক্ষিদের সময় গলা দিয়ে নামে না এমন কঠিন বস্ত পৃথিবীতে কমই আছে। কিন্তু তা ছাড়াও ঐ পার্থীগুলা ত রয়েছে । ওগুলার সৎকার করলে হয় না ? ‘ওগুলা আপনি বাড়ী নিয়ে যাবেন না ? ‘বাড়ী নিয়ে গিয়েও ত খেতেই হবে । তবে এখানে খেতে দোষ কি ? পার্থীগুলা এক জন যথার্থ শিকারীর পেটে গিয়ে ধম্ভ হ’ত ” তিনি হাসিলেন, ‘মন্দ কথা নয়। পাখীর স্বাদ ভুলেই গেছি।’ তাহার মুখে একটা বিচিত্র হাসি খেলিয়া গেল ; যেন পার্থীর স্বাদ ভুলিয়া যাওয়ার মধ্যে একটা মিষ্ট কৌতুক লুকায়িত আছে। হাসিটি আত্মগত, আমাকে দেখাইবার ইচ্ছা বোধ হয় তাহার ছিল না ; তাই ক্ষণেক পরে সচকিত হইয়া বলিলেন, তাহলে ওগুলাকে ছাড়িয়ে ফেলা যাক—কি বলেন ? নরম মাংস, আধ ঘণ্টার মধ্যেই তৈরি হয়ে যাবে।” তিনি অভ্যন্ত ক্ষিপ্রতার সহিত পার্থী ছাড়াইতে লাগিলেন। আমি তাহার পানে তাকাইয়া বসিয়া রহিলাম। সেই পুরাতন প্রশ্নই মনে জাগিতে লাগিল—কে ইনি ? লোকচক্ষুর আড়ালে লুকাইয়া শুকনা রুটি খাইয়া জীবনযাপন করিতেছেন কেন ? এক সময় তিনি সহাস্তে মুখ তুলিয়া বলিলেন, ‘আজ একটু শীত আছে। চামড়াটা বেশ গরম মনে হচ্ছে ত ? "চমৎকার । আচ্ছ, আপনি অনেক দেশ ঘুরেছেন— না ? স্থ্য ।” ‘প্রশ্ন করতে সাহস হয় না, তবে সম্ভবত শিকারের জন্যেই দেশ-বিদেশে ঘুরে বেরিয়েছেন " ‘তা বলতে পারেন।” যিনি নিজের সম্বন্ধে প্রশ্ন করিলে অপ্রসন্ন হুইয়া উঠেন র্তাহার সহিত অল্প কথা বলাই ভাল। তাই ইচ্ছা করিয়া শিকারের আলোচনাই আরম্ভ করিলাম, বিশেষতঃ সাদা চামড়াটা সম্বন্ধে বেশ একটু কৌতুহলও জাগিয়াছিল। বলিলাম, ‘শুামদেশে সাদা হরিণ পাওয়া যায় ? কিন্তু কোথাও পড়ি নি ত?” তিনি মুখ তুলিয়া বলিলেন, ‘না পড়বারই কথা। ও হরিণ আর কেউ চোখে দেখে নি। চোখে দেখার জিনিষ ও নয় ।” “কি রকম ? ‘পৃথিবীতে যত রকম আশ্চর্য জীব আছে—ঐ হরিণ তার মধ্যে একটি। প্রকৃতির স্বষ্টিতে এর তুলনা নেই।’ কি ব্যাপার বলুন ত? অবশু সাদা হরিণ খুবই অসাধারণ, কিন্তু—” 'আপনি কেবল সাদা চামড়াটা দেখছেন। আমি কিন্তু ওকে দেখেছি সম্পূর্ণ অন্য রূপে—অর্থাৎ দেখিনি বললেই হয়। “আপনি যে ধাধা লাগিয়ে দিলেন। কিছুই বুঝতে পারছি না।’ তিনি একটু ইতস্ততঃ করিয়া শেষে বলিলেন, “অদৃশু প্রাণীর কথা কখনও শুনেছেন ? “অদৃপ্ত প্রাণী । সে কি ? ‘ই্যা-ঘাদের চোখে দেখা যায় না, চোখের সামনে যার মরীচিকার মত মিলিয়ে যায়। খামদেশের উত্তর-পূৰ্ব্ব অঞ্চলে দুর্ভেদ্য পাহাড়ে ঘেরা এক উপত্যকায় আমি তাদের দেখেছি,-বিশ্বাস করছেন না ? আমারও মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়, তখন ওই চামড়াটা স্পর্শ ক'রে দেখি I' ‘বড় কৌতুহল হচ্ছে ; সব কথা আমায় বলবেন কি ? তিনি একটু খামখেয়ালি-হাসি হাসিলেন, বলিলেন, “বেশ —চায়ের জল হয়ে গেছে, মাংসটা চড়িয়ে দিয়ে এই অদ্ভুত গল্প আরম্ভ করা যাবে। সময় কাটাবার পক্ষে মন্দ হবে না ।" Vo চায়ের পাত্র সম্মুখে লইয়া দু-জনে মুখোমুখি বসিলাম । এক চুমুক পান করিতেই মনে হইল শরীরের ভিতর দিয়া অত্যন্ত মুখকর উত্তাপের একটা প্রবাহ বহিয়া গেল । বন্ধু জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন চা?" বলিলাম, "চা নয়—নির্জলা অমৃত । আরম্ভ করুন।" তিনি কিছুক্ষণ শূন্যের পানে তাকাইয়া রহিলেন। ক্রমে তাহার চক্ষু স্মৃতিচ্ছায়ায় আবিষ্ট হইল। তিনি খামিয়া খামিয়া অসংলগ্ন ভাবে বলিতে আরম্ভ করিলেন । এবার গল্প