পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজ্য থেকে বেরিয়েছি, পাসপোর্ট নেওয়া যে দরকার তা জানতুম না। তবে শিকার এবং দেশ-বিদেশ দেখা ছাড়া আমাদের আর কোনও অসাধু উদ্বেগু নেই। "নানাবিধ গল্প করতে করতে সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হয়ে গেল । এইবার কাপ্তেন দু'বোয়া ফরাসী শিষ্টতার চরম করলেন, আমাদের নৈশ ভোজনের নিমন্ত্রণ জানালেন। শুধু তাই নয়, রাত্রে তার বাড়ীতে আমাদের শয়নের ব্যবস্থা হ’ল । রাজপুরুষের এই অযাচিত সহৃদয়ত আমাদের পক্ষে যেমন অভাবনীয় তেমনই অস্বস্তিকর। ‘রাত্রে আহারে বসে কাপ্তেন হঠাৎ এক সময় জিজ্ঞাসা করলেন,—আপনার ব্রিটিশ ফৌজি-রাইফেল কোথায় পেলেন ? বললুম,—আৰ্ম্মি ষ্টোর থেকে মাঝে মাঝে পুরনো বন্দুক বিক্ৰী হয়, তাই কিনেছি। কাপ্তেন আর কিছু বললেন না । ‘অনেক রাত্রি পর্য্যন্ত গল্পগুজব হ’ল । তার পর কাপ্তেন নিজে এসে আমাদের শোবার ঘরের দোর পর্য্যন্ত পৌছে দিয়ে গেলেন। অনেক দিন পরে নরম বিছানায় শয়ন করলুম। কিন্তু তবু ভাল ঘুম হ’ল না । ‘শেষরাত্রির দিকে জঙ-বাহাদুর আমার গা ঠেলে চুপি চুপি বললে,—চলুন—পালাই। আমি বললুম—আপত্তি নেই। কিন্তু দরজায় শাস্ত্রী পাহার দিচ্ছে যে । ‘জঙ-বাহাদুর দরজা ফাক ক’রে একবার উকি মেরে আবার বিছানায় গিয়ে গুয়ে পড়ল । ‘ভোর হতে না হ’তে কাপ্তেন সাহেব নিজে এসে আমাদের ডেকে তুললেন। তার পর স্বমিষ্ট স্বরে স্বপ্রভাত জ্ঞাপন করে আমাদের নদীর ধারে বাঁধাঘাটে নিয়ে গেলেন । ‘দেখলুম, কিনারায় একটি ছোট বেতের ডোঙা বাধা রয়েছে, আর ঘাটের শানের উপর বারো জন রাইফেলধারী সেপাই স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে । “কাপ্তেন আমাদের করমর্দন ক’রে বললেন,—আপনাদের সজ-স্নখ পেয়ে আমার একটা দিন বড় আনন্দে কেটেছে। কিন্তু এবার আপনাদের যেতে হবে। পরপারের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন,—প্তামরাজ্যের ঐ অংশটা বড় অন্তর্বর, এক-শ মাইলের মধ্যে লোকালয় নেই। আপনাদের সঙ্গে খাবার দিয়েছি। রাইফেলও দিলাম, আর পাচটা কাৰ্বজ। এরই সাহায্যে আশা করি আপনার নিৰ্ব্বিঘ্নে লোকালয়ে পৌছতে পারবেন। — বঁ ভোয়াজ । ‘আমি আপত্তি করতে গেলুম, তিনি হেসে বললেন,— ডোঙায় উঠুন। নদীর এপারে নামবার চেষ্টা করবেন না, তা হলে—সৈন্যদের দিকে হাত নেড়ে দেখালেন । ‘ডোঙায় গিয়ে উঠলুম, বারো জন সৈনিক বন্দুক তুলে আমাদের দিকে লক্ষ্য ক’রে রইল । "তীর থেকে বিশ গজ দূরে ডোঙা যাবার পর আমি জিজ্ঞাস করলুম,—আমাদের অপরাধ কি তাও কি জানতে পারব না ? - “তিনি ঘাট থেকে ভাঙা-ভাঙা ইংরেজীতে বললেন,— আনামে ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্থান নেই । এই পৰ্য্যস্ত বলিয়া প্রমথেশ রুদ্র থামিলেন। তাহার মুখে ধীরে ধীরে একটি অদ্ভুত হাসি ফুটিয়া উঠিল। তিনি বলিলেন, ‘একেই বলে দৈব বিড়ম্বন । কাপ্তেন দু'বোয় আমাদের হাতে মিলিটারি বলুক দেখে আমাদের ইংরেজের গোয়েন্দা মনে করেছিলেন ।” আমি বলিলাম, কিন্তু ইংলণ্ড আর ফ্রান্সে ত বন্ধুত্ব চলছে !’ "স্থ –একেবারে গলাগলি ভাব। কিন্তু ওরা আজ পর্য্যস্ত কখনও পরস্পরকে বিশ্বাস করে নি, যত দিন চন্দ্রস্থধ্য থাকবে তত দিন করবে না। ওরা শুধু দুটাে আলাদা জাত নয়, মানব-সভ্যতার দুটাে সম্পূর্ণ বিপরীত অাদর্শের প্রতীক । কিন্তু সে যাক—’ বলিয়া আবার গল্প আরম্ভ করিলেন । যতক্ষণ নদী পার হলুম, সিপাহীরা বন্দুক উচিয়ে রইল। বুঝলাম, দুটি মাত্র পথ আছে—হয় পরপার, নয় পরলোক । তৃতীয় পন্থ নেই। পরপারেই গিয়ে নামলুম। তার পর বন্দুক আর খাবারের হাভারস্যাক্ কাধে ফেলে শুীমদেশের লোকালয়ের সন্ধানে রওনা হয়ে পড়া গেল । ‘প্রায় নদীর কিনারা থেকেই পাহাড় আরম্ভ হয়েছে। আনাম-রাজ্য এবং মেকং নদী পিছনে রেখে চড়াই উঠতে এখন