পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরম্ভ করলুম। পাহাড়ের পথ বন্ধুর ভুলভ্য হয়ে ডমতে লাগল। কিন্তু আমরা পথশ্রমে অভ্যন্ত হয়ে পড়েছিলুম ; এই পাৰ্ব্বত্য ভূমি যত শীঘ্র সম্ভব পার হবার জন্তে সজোরে প চালিয়ে দিলুম। 源 ‘দুপুরবেল নাগাদ এমন এক জায়গায় এসে পৌছলুম যেখান থেকে চারি দিকে অগণ্য নীরস পাহাড় ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না—গাছপালা পৰ্য্যন্ত নেই, কেবল পাথর আর পাথর । ‘বিলক্ষণ ক্ষিদে পেয়েছিল। খাবারের ঝুলি নামিয়ে দু-জনে খেতে বসলুম। বুলি খুলে দেখি, তাজ খাবার কিছু নেই, কেবল কতকগুলা টিনের কৌটা। যাহোক, যেঅবস্থায় পড়েছি তাতে টিনে-বন্ধ চালানি খাবারই বা ক’জন পায় ? কিন্তু টিনের লেবেল দেখে চক্ষুস্থির হয়ে গেল— beef–গো-মাংস ! পরস্পর মুখের দিকে তাকালুম। জঙ-বাহাদুর খাটি হিন্দু, কিছুক্ষণ মূৰ্ত্তির মত স্থির হয়ে বসে রইল, তার পর একটা নিশ্বাস ফেলে উঠে পড়িাল । ‘কোনও কথা হ'ল না, দু-জনে আবার চলতে আরম্ভ করলুম। অখাদ্য টিনগুল পিছনে পড়ে রইল । "তার পর আমাদের যে দুৰ্গতির অভিযান আরম্ভ হ’ল তার বিস্তৃত বর্ণনা দিয়ে আপনাকে দুঃখ দেব না। আকাশে একট পাখী নেই, মাটিতে অন্ত জন্তু ত দূরের কথা, একটা গিরগিটি পৰ্য্যন্ত দেখতে পেলুম না। তৃষ্ণায় টাকরা শুকিয়ে গেল কিন্তু জল নেই। ‘প্রথম দিনট এক দানা খাদ্য বা এক ফোটা জল পেটে গেল না। রাত্রি কাটালুম খোলা আকাশের নীচে কম্বল মুড়ি দিয়ে। দ্বিতায় দিন বেলা তিন প্রহরে একটা জন্তু দেখতে পেলুম, কিন্তু এত দূরে যে, সেটা কি জন্তু তা চেনা গেল নী । কিন্তু আমাদের অবস্থা তখন এমন যে, মা ভগবতী ছাড়া কিছুতেই আপত্তি নেই। প্রায় তিন-শ গজ দূর থেকে তার ওপর গুলি চালালুম-কিন্তু লাগল না। মোট পাচটি কার্জ,জ ছিল, একটি গেল। ‘সেদিন সন্ধ্যার সময় জল পেলুম। একটা পাথরের ফাটল দিয়ে ফোটা ফোট জল চুইয়ে পড়ছে, আধ ঘণ্টায় Corned এক গণ্ডুষ জল ধরা বায়। জঙ-বাহাদুরের মুখ ঝামার মত কালো হয়ে গিয়েছিল ; আমার মুখও যে অমুরূপ বর্ণ ধারণ করেছিল তাতে সন্দেহ ছিল না । শরীরের রক্ত তরল বস্তুর অভাবে গাঢ় হয়ে আসছিল ; সেদিন জল না পেলে বোধ হয় বঁাচতুম না । কিন্তু তবু শুধু জল খেয়ে বেঁচে থাকা যায় না। শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছিল, মাথাও বোধ হয় আর ধাতস্থ ছিল না । তৃতীয় দিনের ঘটনাগুলা একটানা দুঃস্বপ্নের মত মনে আছে । একটা লালচে রঙের খরগোশ দেখতে পেয়ে তারই পিছনে তাড়া করেছিলুম-দিগ্বিদিক জ্ঞান ছিল না। খরগোশট। আমাদের সঙ্গে যেন খেলা করছিল ; একেবারে পালিয়েও যাচ্ছিল না, আবার বন্দুকের পাল্লার মধ্যেও ধরা দিচ্ছিল না। তার পিছনে ঘটে। কার্ভ জ খরচ করলুম ; কিন্তু চোখের দৃষ্টি তখন ঝাপসা হয়ে এসেছে, হাতও কঁপিছে, খরগোশটা মারতে পারলুম না । 'সন্ধোবেল একটা লম্ব বাঁধের মত পাহাড়ের পিঠের ওপর উঠে খরগোশ মিলিয়ে গেল। দেহে তখন আর শক্তি নেই, বন্দুকটা অসহ ভারি বোধ হচ্ছে ; তবু আমরাও সেখানে উঠলুম। বুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত হয়ে তখন চলছি ন, একটা অন্ধ আবেগের ঝোকেই খরগোশের পশ্চাদ্ধাবন করেছি। পাহাড়ের ওপর উঠে দাড়াতেই মাথাটা পুরে গেল, একটা সবুজ রঙের আলো চোখের সামনে ঝিলিক্ মেরে উঠল , তার পর সব অন্ধকার হয়ে গেল। ‘যখন মূৰ্ছী ভাঙল তখন রোদ উঠেছে । জঙ-বাইছর তখনও আমার পাশে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে । আর—আর সামনেই ঠিক পাহাড়ের কোলে যত দূর দৃষ্টি যায় একটি সবুজ ঘাসে-ভরা উপত্যক । তার বুক চিরে জরির ফিভের মত একটি সরু পৰ্ব্বত্য নদী বয়ে গেছে । ‘কিছুক্ষণ পরে জঙ-বাহাদুরের জ্ঞান হ’ল । তখন দু-জনে দু-জনকে অবলম্বন করে টলতে টলতে পাহাড় থেকে নেমে সেই নদীর ধারে গিয়ে উপস্থিত হলুম। ‘তৃষ্ণ নিবারণ হ'ল। আকণ্ঠ জল থেয়ে ঘাসের ওপর অনেকক্ষণ পড়ে রইলুম। আপনি এখনি চায়ের সঙ্গে অমৃতের তুলনা করছিলেন ; আমরা সেদিন যে-জল খেয়েছিলুম, অম্বতও বোধ করি তার কাছে বিস্বাদ ।