পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হরিণ আমাদের চোখের সামনে মূৰ্ত্তি পরিগ্রহ করে দাড়াল । মুগ্ধ অবিশ্বাস ভরে চেয়ে রইলুম। এও কি সম্ভব ? : এর কি সত্যিই শরীর-ধারী ? তাদের দেখে অবিশ্বাস করবার উপায় নেই ; সাদা রোমশ গায়ে সুয্যের আলো পিছলে পড়ছে। নিশ্চিন্ত অসঙ্কোচে তারা নদীতে মুখ ডুবিয়ে জল খাচ্ছে, নিজেদের মধ্যে ঠেলাঠেলি ক’রে খেলা করছে,— কেউ বা নদীর ধারের কচি ঘাস ছিড়ে তৃপ্তি ভরে চিবচ্ছে । ‘জঙ-বাহাদুর কখন রাইফেল তুলে নিয়েছিল তা স্থানতে পারি নি, এত তন্ময় হয়ে দেখছিলুম। হঠাৎ কানের পাশে গুলির আওয়াজ শুনে লাফিয়ে উঠলুম ; দেখি জঙবাহাদুরের হাতে রাইফেলের নল কম্পাসের কাটার মত দুলছে । সে রাইফেল ফেলে দিয়ে বললে,—পারলাম না, ওরা মায়াবী । "হরিণের দল তখন আবার অদৃগু হয়ে গেছে । ‘এতক্ষণে এই অদ্ভুত হরিণের রহস্য যেন কতক বুঝতে পারলুম। ওরা অশরীরী নয়, সাধারণ জীবের মত ওদেরও দেহ আছে, কিন্তু কোনও কারণে ভয় পেলেষ্ট ওরা অদৃপ্ত হয়ে যায় । খানিকক্ষণ আগে ওদের নেকড়ে তাড়া করেছিল, তখন ওদেরই অদৃপ্ত পদধ্বনি আমরা শুনেছিলুম। প্রকৃতির বিধান বিচিত্র। এই পাহাড়ে-ঘেরা ছোট উপত্যকাটিতে ওরা অনাদি কাল থেকে আছে ; সঙ্গে সঙ্গে হিংস্র জন্তুরাও আছে । তাদের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার আর কোনও অস্ত্র ওদের নেই, তাই শত্রু দেখলেই ওরা অদৃগু হয়ে যায়।’ বক্তা আবার থামিলেন। সেই গৃঢ়াৰ্থ হাসি আবার তাহার মুখে খেলিয়া গেল । আমি মোহাচ্ছল্পের মত শুনিতেছিলাম। অলৌকিক রূপকথাকে বাস্তব আবহাওয়ার মাঝখানে স্থাপন করিলে যেমন শুনিতে হয়, গল্পটা সেইরূপ মনে হইতেছিল ; বলিলাম, “কিন্তু একি সম্ভব ? অর্থাৎ বিজ্ঞানের দিক্ দিয়ে অপ্রাকৃত নয় কি ? তিনি বলিলেন, ‘দেখুন, বিজ্ঞান এখনও স্বষ্টি-সমুত্রের কিনারায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, তীরের উপলখও কুড়িয়ে ঝুলি ভরছে—সমূত্রে ডুব দিতে পারে নি। তাছাড়া, অপ্রাকৃতই বা কি ক’রে বলি ? ক্যামিলিয়ন নামে একটা জন্তু আছে, ۹-اس-اس-جمb সে ইচ্ছামত নিজের দেহের রং বদলাতে পারে। প্রকৃতি আত্মরক্ষার জন্য তাকে এই ক্ষমতা দিয়েছেন। বেশী দূর যাবার দরকার নেই, আজ যে আপনি হারিয়াল মেরেছেন - তাদের কথাই ধরুন না। হারিয়াল একবার গাছে বসলে আর তাদের দেখতে পান কি ? বলিলাম, তা পাই ন বটে। গাছের পাতার সঙ্গে তাদের গায়ের রং মিশে যায়।’ তিনি বলিলেন, তবেই দেখুন, সেও ত এক রকম অদুগু হয়ে যাওয়া । এই হরিণের অদৃশ্ব হওয়া বড়জোর তার চেয়ে এক ধাপ উচুতে।” ‘তার পর বলুন।" ‘ব্যাপারটা মোটামুটি রকম বুঝে নিয়ে জঙ-বাহাদুরকে বললুম,—ভয় নেই জঙ-বাহাদুর, ওর মায়াবী নয় । বরং আমাদের বেঁচে থাকবার একমাত্র উপায় । ‘একটি মাত্র কীৰ্ত্ত জ তখন অবশিষ্ট আছে—এই নিরুদেশ যাত্রাপথের শেষ পাথেয় । এটি যদি ফস্কায় তাহলে অনশনে মৃত্যু কিছুতেই ঠেকিয়ে রাখা যাবে না । ‘টোটা রাইফেলে পুরে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে বসে রহলুম—হয়ত তারা আবার এখানে আসবে জল খেতে । কিন্তু যদি না আসে ? দু-বার এইখানেই ভয় পেয়েছে— না আসতেও পারে । ‘দিন ক্রমে ফুরিমে এল ; স্বৰ্য্য পাহাড়ের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেল। জঙ-বাহাদুর কেমন যেন নিঝুম তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে বসে আছে ; আমি প্রাণপণ শক্তিতে নিরাশ আর অবসাদকে দূরে ঠেলে রেগে প্রতীক্ষা করছি। ‘নদীর জলের ঝকৃঝকে রূপালী রং মলিন হয়ে এল, কিন্তু হরিণের দেখা নেই। নিরাশাকে আর ঠেকিয়ে রাখতে পারছি না । তার। সত্যিই পালিয়েছে, আর আসবে না । “কিন্তু প্রকৃতির বিধানে একটা সামঞ্জস্ত আছে,—এমাসন *Too law of compensation on 1 of f* from প্রকৃতি যদি কিছু কম দিয়ে ফেলেন, অন্য দিক দিয়ে আমনি তা পূরণ ক'রে দেন। এই হরিণগুলোকে তিনি বুদ্ধি কম দিয়েছেন বলেই বোধ হয় এমন অপরূপ আত্মরক্ষার উপায় ক্ষতিপুরণ-স্বরূপ দান করেছেন। অন্ধকার হতে আর দেরি