পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহিত রামমোহন রায়ের প্রথম মিলন ঘটিয়াছিল রংপুরে ১৮৬৯ সালের শেষ ভাগে বা তাহার পরে । ১২০৬ সনের ৭ই পৌষ ( ১৮০৫ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারী) রাজীবলোচন রায় গোবিন্দপুর ও রামেশ্বপুর তালুক সম্বন্ধে গুরুদাস মুখোপাধ্যায়ের বরাবরে যে একরারনাম লিথিয় দিয়াছিলেন তাহাতে একজন সাক্ষী শ্রীনন্দকুমার শৰ্মা সাং রঘুনাথপুর। এই দলাল হয় কলিকাতায় না-হয় বৰ্দ্ধমানে সম্পাদিত হইয়াছিল। এই নন্দকুমার শম্মী যে নন্দকুমার বিদ্যালঙ্কার ( হরিহরানন্দনাথ তীর্থস্বামী ) তাহ! তিনি জবানবন্দীতে স্বীকার করিয়াছেন। স্বতরাং মনে করিতে হইবে, এই সময়ও নন্দকুমারের বিদ্যালঙ্কার রামমোহন রায়ের সঙ্গে ছিলেন । উভয়ের মধ্যে এই সঙ্গলিপার বীজ রামমোহন রায়ের চৌদ্দ বৎসর বয়সের প্রথম মিলনের সময়ই বপন করা হইয়াছিল । আমি কোন কোন সন্ন্যাসীর এবং ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতের মুখে শুনিয়াছি, প্রবাদ আছে, হরিহরানন্দনাথ রামমোহন রায়ের গুরু ছিলেন । উভয়ের মধ্যে গুরু শিয্য সম্বন্ধ থাক আর না থাক, এক সময়ে যে রামমোহন রায়ের উপর বয়োজ্যেষ্ঠ হরিহরানন্দনাথের বিশেষ প্রভাব ছিল এই বিষয়ে সন্দেহ করিবার অবকাশ নাই । রামমোহন রায়ের জীবনের প্রথম ভাগের সাধন রীতির পরিচয় লাভ করিতে হইলে, নন্দকুমার বিদ্যালঙ্কারের সাধনরীতি আলোচনা করা কর্তব্য । র্তাহার হরিহরানন্দনাথ তীৰ্থস্বামী উপাধি হইতে বুঝা যায়, তিনি শঙ্করাচাৰ্য্য প্রতিষ্ঠিত দশনামী সম্প্রদায়ভুক্ত সন্ন্যাসী বা দণ্ডী ছিলেন । এই সম্প্রদায় বেদাস্তপন্থী ; সুতরাং নন্দকুমারও বৈদাস্তিক ছিলেন । তাহার উপরে তিনি কুলাবধূত ছিলেন। সংস্কৃত অভিধানে অবধূত শব্দের অর্থ বিষয়ে এই দুটি শ্লোক উদ্ধৃত হইয়াছে— যে বিলংঘ্যাশ্রমান বর্ণনাত্মন্ধেব স্থিতঃ পুমান । অতিবর্ণাশ্রমী যোগী অবধূত: স উচ্যতে । অক্ষরত্বাং বরেণ্যত্বাৎ খুত সংসার বংধনাং । তত্ত্বমহুর্থ সিন্ধত্বাবধুতোছভিধীয়তে । “যে ব্যক্তি চতুরাশ্ৰমধৰ্ম্ম এবং বর্ণধৰ্ম্ম অতিক্রম করিয়া পরমাত্মায়ু স্থিতি লাভ করিয়াছেন. সেক্ট অতিবর্ণাশ্রমী যোগীকে অবধূত বলে । t প্রবাসী, ১৩৪৩ কাভিক, ૭૪ નૃઃ । “তিনি অক্ষর পুরুষ স্বরূপ, বরণীয়, সংসারবন্ধন মুক্ত এবং তত্ত্বমলি মঙ্গালাক্যের অর্থ অনুভব করিয়াছেন বলিয়! ( fাঙ্গাকে ) অবধূত বলে יין নন্দকুমার কেবল অবধূত বা অত্যাশ্রমী সন্ন্যাসী বলিয়া গণ্য হইতেন না, তিনি “কুলাবধূত” অর্থাৎ কুলাচারী অবধূত ছিলেন। ইহার তাৎপৰ্য্য, তিনি তান্ত্রিক কুলাচার অন্তসারে অদ্বৈত ব্রহ্মের উপাসনা করিতেন। কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকুত “তন্ত্রসার” নামক প্রমাণ্য তান্ত্রিক নিবন্ধে কুলাচার বা বামাচার বা বীরাচারের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হইয়াছে । এদেশের মানুষ পরলোকে স্বখলাভের বা জন্মজরামৃত্যুর হাত হইতে মুক্তিলাভের জন্য ঋজু-কুটিল নানা প্রকার পথের, নানা প্রকার শর্ট কাটের ( short cut ), অনুসন্ধান করিয়াছে । ইন্দ্রিয় জয় এবং চিত্ত স্থির করিতে না পারিলে জ্ঞান-ভক্তিমুক্তি লাভ করা যায় না। কুলাচার ইন্দ্রিয় জয় এবং চিত্তস্থির করিবার একটি শট কাট বলিয়া গণ্য । ববে যে নন্দকুমার সন্ন্যাস গ্রহণ এবং কুলাচার আরম্ভ করিয়াছিলেন তাহা বলা যায় না। তবে যে দিন চৌদ্দ বৎসর বয়স্ক রামমোহনের সহিত র্তাহার প্রথম মিলন ঘটিয়াছিল, সেই দিন তাহার আশ্রম যাহাই হউক, সাধন রীতি কুলাচারমুখী ছিল এমন অনুমান করা যাইতে পারে। বালক রামমোহনও একাস্ত ধৰ্ম্মনিষ্ঠ ছিলেন । ১৬৬৮ শকের বৈশাখ ( ১৮৪৬ সালের এপ্রিল ) মাসের তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় "রাজা রামমোহন রায়ের সংক্ষেপ জীবনবৃত্তান্তে” লিখিত হইয়াছে— “প্রথমে তিনি ( রামমোহন ) বৈষ্ণবধৰ্ম্ম অনুষ্ঠানে তৎপর ছিলেন, তাহাতে র্তাহার এমত ভক্তি ছিল যে প্রত্যহ শ্ৰীমদ্ভাগবতের এক অধ্যায় পাঠ না করিয়৷ জল গ্রহণ করিতেন না । কিন্তু রামমোহন রায়ের বুদ্ধি ইহাতে কতকাল অভিভূত থাকিতে পারে ? তিনি আরবি ভাষায় ইউক্লিড ও এরিষ্টটল নামক দুষ্ট পণ্ডিতের গ্রন্থ অধ্যয়ন করাতে বুদ্ধির বিশেষ প্রাথর্য্য হইল এবং তদবধি তিনি ধম্মের সত্যাসত্য বিবেচনাতে প্রবৃত্ত হইলেন । সংস্কৃত শাস্ত্র আলোচনা করিয়া দেখিলেন যে প্রকৃত হিন্দু ধৰ্ম্ম তৎকালের সম্পূর্ণ অজ্ঞাত রহিয়াছে" ( ১ পৃ: ) । সংক্ষেপ জীবনবৃত্তাস্তলেখক কোথা হইতে এই সকল সংবাদ সংগ্ৰহ করিয়াছেন তাহা বলেন নাই । ডাক্তার কাপেন্টার ও এরিষ্টাটলের এবং ইউক্লিডের আরবী