পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“পথ্য প্রদানে" গ্রন্থকার লিখিয়াছেন,— ১৪৪ পৃষ্ঠের শেষে [ “পাষণ্ড পীড়ন"কার ] লিখেন "কখন তত্ত্বজ্ঞানী কখন বা ভাক্ত বামাচারী" এবং ১৩• পৃষ্ঠেও এইরূপ পুন:পুন: কখন আছে, কিন্তু ধৰ্ম্ম সংঙ্গারকের এইরূপ লিখিবতে আশ্চৰ্য্য কি যে হেতু কঁাগর এ বোধও নাই যে কুলাচার সব্বথা ব্ৰহ্মজ্ঞানমূলক হয়েন। সৰ্ব্বত্র সংস্কার বিষয়ে বামাচারের মন্ত্র এই হয় ( একমেব পরং ব্ৰহ্ম স্থল সুহ্মময়ং এবং ) এবং দ্রব্য শোধনের বিধি এই ( সৰ্ব্বং ব্রহ্মময়ং ভাবয়েৎ ) এবং কুলধাতুর অর্থ সংস্তান, অর্থ:ং সমূহ অর্থে বত্তে, অতএব সমূহ যে বিশ্ব যাহা মহাবাক্যের তংপথ হইয়াছে । ফুলার্টন দীপিকাধুত তন্ত্ৰ বচন— 鬱 粵 鬱 養 ug: কোলজ্ঞানং তত্ত্বজ্ঞানং ব্ৰহ্মজ্ঞানং তদুচ্যতে ।” এই অংশ এবং “পথ্য প্রদানের” অন্যান্য অংশ পাঠ করিলে অম্লমান হয়, রামমোহন রায় ব্রহ্মজ্ঞান লাভের জন্য বামাচার অনুষ্ঠান করিয়াছিলেন । পূৰ্ব্বেই উক্ত হইয়াছে, এদেশের ব্রাহ্মণ পণ্ডিত সমাজের জনশ্রুতি ষে রামমোহন রায় হরিহরানন্দনাথ তীর্থস্বামীর শিষ্য ছিলেন। হরিহরানন্দনাথ বামাচারী ছিলেন এবং রামমোহন রায়ের নিত্য সঙ্গী ছিলেন । এই সম্পর্কে “ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার বিবরণ" লেখকের উক্তি আমরা উপরে উদ্ধৃত করিয়াছি। স্বপ্রিম কোটে নন্দকুমার বিদ্যালঙ্কারের জবানবন্দীর সহিত এই সকল প্রমাণ একত্র বিবেচনা করিলে সিদ্ধাস্ত হয়, রামমোহন রায় কিশোর বয়সে নন্দকুমার বিদ্যালঙ্কারের নিকট তান্ত্রিক ব্রহ্মোপাসনায় দীক্ষিত হইছিলেন ; তিব্বত হইতে ফিরিয়া আসিয়া গুরুর নিকট তন্ত্রশস্ত্র এবং অন্যান্ত আনুষঙ্গিক শাস্ত্র অধ্যয়ন করিয়াছিলেন ; এবং বাটোয়ারার পর বৈষয়িক স্বাধীনতা লাভ করিয়া গুরুকে সাধনের সঙ্গীরূপে সঙ্গে সঙ্গে রাপিয়াছিলেন । পূৰ্ব্বে উক্ত হইয়াছে, বামাচারের মামান্তর বীরাচার, এবং যাহার অন্য প্রকার আচরণ করে তাহাদিগকে বলে পশু । পশুর আচার সম্বন্ধে রামমোহন রায় “পথ্য প্রদানে” কুলার্চন চন্দ্রিকাধুত কুঞ্জিকাতন্ত্রের এই বচন উদ্ধত হইয়াছে— পত্রং পুষ্পং ফলংতোয়ং স্বয়মেবাহরেং পশু । ন পিবেম্মাদকং দ্রব্যং নামিঘঞ্চাপি ভক্ষয়েৎ ॥ পশু স্বয়ং পত্র, পুষ্প, ফল, জল আহরণ করিবে, কিন্তু মাদক ঐব্য পাম করিবে না, এবং আমিষ ( মৎস্য, মাংস ) আহার করিবে নী । বৈষ্ণবকুলে জন্মগ্রহণ করিয়া কিশোর রামমোহন ঘটনাচক্রে বামাচার আশ্রয় করিয়া সাধন ক্ষেত্রে প্রবেশ করিয়াছিলেন। র্যাহারা রামমোহন রায়ের মদ্যপানের কথা স্মরণ করেন তাহাদের সঙ্গে সঙ্গে স্মরণ কর। কৰ্ত্তব্য যে তিনি সাধকরূপে সাধনের সামগ্রীরূপে মদ্যপান করিতেন। বামাচার স্বেচ্ছাচার ( self-indulgence ) নহে, এক প্রকার সাধন ( discipline ) । বামাচার রামমোহন রায়ের পক্ষে স্বফল উৎপাদন করিয়াছিল । তিনি এই সঙ্কীর্ণ পথে ব্রহ্মোপাসনা আরম্ভ করিয়া উপনিষদের দক্ষিণাচারে পৌছিয়াছিলেন, এবং তাঙ্গকে নুতন আকার দান করিয়াছিলেন । রামমোহন রায়ের বামাচারের গুরু এবং সঙ্গী যেমন ছিলেন হরিহরানন্দনাথ তীর্থস্বামী, তাহার প্রবৰ্ত্তিত নব দক্ষিণাচারের প্রধান শিষ্য এবং সঙ্গী ছিলেন হরিহরানন্দনাথের কনিষ্ঠ ভ্রাত রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ । বামাচার হইতে আরম্ভ করিয়া পরিণামে রামমোহন কিরূপ বিশুদ্ধ আচারে পৌঁছিয়াছিলেন, তাহার সম্যক পরিচয় পাওয়া যায় রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের জীবনে এবং আচরণে । সৌভাগ্যক্রমে রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের মৃত্যুর মাসাধিক কাল পরে, ১৭৬৭ শকের বৈশাখ মাসের তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায়, “মহাত্মা শ্ৰীযুক্ত রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের জীবন বৃত্তাস্ত” নামক একটি ক্ষুদ্র প্রবন্ধ প্রকাশিত হইয়াছিল । বিদ্যাবাগীশের কোনও সহকৰ্ম্মীর লিখিত এই প্রবন্ধের সারাংশ নিয়ে প্রদান করিব । মন্দকুমার বিদ্যালঙ্কারের সর্ব কনিষ্ঠ ভ্রাতা রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ ১৭০৭ শকের ২৯শে মাঘ ( ১৭৮৬ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারী) পালপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। পালপাড়ায় ব্যাকরণাদি শাস্ত্র অধ্যয়ন করিয়া রামচন্দ্ৰ কাশী প্রভৃতি পশ্চিমাঞ্চলের নানাস্থানে ভ্ৰমণ করিয়াছিলেন, এবং যপন তাহার বয়স প্রায় পচিশ বৎসর তখন শাস্থিপুরের রামমোহন বিদ্যাবাচস্পতির নিকট স্মৃতি প্রতুতি শাস্ত্র অধ্যয়ন করিয়াছিলেন । রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ পাঠ শেষ করিয়া যখন বাড়ী ফিরিলেন, তখন তাঙ্গর আর দুই ভাই তাহাকে পৃথক করিয়া দিয়া অত্যন্ত বিপদগ্ৰস্ত করিলেন। বিদ্যাবাগীশের এই বিপদের সময় তাহার অগ্রজ হরিহরানন্দনাথ তাহাকে আনিয়া রামমোহন রায়ের সহিত সাক্ষাৎ করাইয়া দিলেন। কলিকাতা আসিয়া রামমোহন রায়ের