পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

مسولج6 প্রবাসী N9gvరి উপস্থিত কিছু সত্ত্ব, মাখন লাভ হইবেই এবং যদি তীর লাগিয়া যায় তবে ভবিষ্যতের জন্য একটি উত্তম যজমানও হইয়া থাকিবে।" আমি বলিলাম, “তীর লাগিবার কথা ভুলিয়া যান, তবে, ই, উপস্থিত দেখা ভাল।” সেখানে গিয়া দরজা পার হইতেই এক মহাকায় কুকুর শিকল নাড়িয়া গর্জন আরম্ভ করিল। বাড়ীর এক ছোট ছেলে তাহার কাপড়ে কুকুরের মুখ ঢাকিয়া বসিয়া পড়িলে তবে আমরা তাহাকে পার হইয়া উপর-তলার সিড়িতে উঠিতে পারিলাম। স্বমতি-প্রজ্ঞ গৃহ-পত্নীকে ঔষধ-যন্ত্র ও পূজা-মন্ত্র দিলেন, আমাদের সের-দুই সত্ত্ব, কিছু চৰ্ব্বি ও চা দক্ষিণ জুটিল। ঘরে ফিরিয়া আসিলাম । পরদিন প্রাতে সঙ্গে লোক লইয়া পথে অগ্রসর হওয়া গেল। গ্রামের কাছেও বৃক্ষের চিহ্ন নাই, ক্ষেতগুলিতে সবে মাত্র চাষ আরম্ভ হইয়াছে। লাল পশমের গুচ্ছে সজ্জিত বিশালকায় চমরীতে হল টানিতেছে ; কোথাও কোথাও চাষী হলকর্ষণের সঙ্গে গান জুড়িয়া দিয়াছে। দ্বিপ্রহরে য়া-লেপ, পৌছান গেল, গ্রামের অল্প নীচেই প্রাচীন লবণের ঝিল শুকাইয়া আছে। যু-লেপে পুরনো আমলের চীন দুর্গ আছে, কিছু দূরে নদীর ওপারেও র্কাচ দেওয়ালযুক্ত কেল্লার ভগ্নাবশেষ আছে। চীন-সাম্রাজ্যের প্রভুত্বের সময় য়া-লেপের দুর্গে কিছু সৈন্য থাকিত, এখনও সরকারী লোকজন সেখানে আছে কিন্তু দুর্গ শ্ৰীহীন দেখা যায় ; ঘর, দেওয়াল সবই মেরামতের অভাবে জীর্ণ। এক পরিচিত গৃহস্থের ঘরে চা-পান ও সত্ত্ব,-ভোজন করা গেল। স্বমতি-প্রজ্ঞ গৃহকত্রীকে বুদ্ধগয়ার প্রসাদী কাপড়ের টুকর দিলেন । এই স্থানে লম-য়িক ( ছাড়পত্র ) লওয়া হয়, ইহার পর আর পাসপোটের হাজামা নাই, সেই জন্য এক জন পরিচিত লোকের হাতে সেগুলি যথাস্থানে পৌছাইয়া দিবার ভার দেওয়া গেল । গ্রাম ছাড়িয়া বাহিরের পথে আসিবা মাত্র একটা প্রকাগু কুকুর হাড়-চিবাম ছাড়িয়া আমাদের দিকে দৌড়াইয়া আসিল । এই সব শৈত্যাধিক্যের দেশের কুকুরের গায়ে শীতকালে লম্বা লোমের নীচে নরম পশম জন্মায় যাহাতে উহাদের শীতের প্রকোপ লাগে না। গ্রীষ্মকালে সেই লোম ও পশম সাপের খোলসের মত ঝরিয়া পড়ে, এই কুকুরটারও সেই রকম “খোলসছাড়া” অবস্থা ছিল। যাই হোক, আমরা তিন জন লোক ছিলাম, কাজেই কুকুরে কি ভয় ? য়-লেপ, হইতে প্রায় তিন মাইল পথ চলিবার পর দক্ষিণ হাতে লে-শিঙ, ডোন্মা গুম্বা নামক ভিক্ষুণীদের বিহার দেখা গেল। এখানে নদীর ধারা অতি ক্ষী, কিছু দূর বাইয় আমরা নদী পার হইয়া অন্ত পারে চলিয়া আসিলাম। এ দিকে দূরবিষ্কৃত ক্ষেত্রের সারি ; ছোট ছোট নালী-দ্বারা আনীত নদীর জলে সেচকাৰ্য চলিতেছিল। আরও কিছু দূর গিয়া আমরা থেী-লিঙ, গ্রামে পৌছিলাম। এই গ্রামটিতে বিশ-পচিশ ঘর লোকের বাস এবং ইহা সমুদ্রপৃষ্ঠ হইতে তেরচৌদ্দ হাজার ফুট উচ্চ। তর্গ্যে-লিঙ হইতে যে-লোক আন হইয়াছিল তাহার এই গ্রামে পৌছাইয়া দিবারই কথা ছিল । সে প্রথমে তাহার পরিচিত এক গৃহে আমাদের লইয়া গেল, সেখানে রাজকৰ্ম্মচারী বা উচ্চপদস্থ লোকেরা আসিয়া থাকেন শুনিয়া আমার থাকা যুক্তিযুক্ত মনে হইল না। পরে স্বমতি-প্রজ্ঞের পরিচিত এক ঘরে যাওয়া গেল, সেটি গ্রামের মধ্যভাগে স্থিত। সেখানে কতকগুলি স্ত্রীপুরুষ রৌদ্রে বসিয়া স্থতাকাটা ও তাত চালাইবার ব্যবস্থা করিতেছিল, মুমতি-প্ৰজ্ঞকে দেখিয়া “জু-দন্‌জ” ( আগন্তুকের অভ্যর্থনা ) করিয়া দাড়াইল । ঘরের ভিতর হইতে পরিচিত কয়েক জন লোক বাহিরে অসিলে পরে আমাদের থাকিবার স্থান ইত্যাদির ব্যবস্থা হইল। বাড়ীটি দু-তল, চতুদ্ধিকে কুঠরি, মধ্যে ধোয়া বাহির হইবার জন্য মাটির ছাদে বড় ছিদ্র আছে। স্বমতি-প্রজ্ঞ গৃহকত্রীকে কিছু চা তৈয়ারী করিবার জন্য দিলেন। গৃহকত্রীর মুখ হাত কাপড়চোপড়—সকলেরই উপর মোটা কাজলের মত তেলকালির এক স্তর জমিয়া ছিল। সে বহুমুখ-চুল্লীর উপর জল ও চা চড়াইয়া ভেড়ার নাদির ইন্ধনে বাতাস দিয়া আঁচ তুলিল। চা ফুটিতে আরম্ভ করিলে তাহাতে অল্প ঠাণ্ড জল দিয়া নামাইয়া লম্বা কাঠের চোঙ্গায় ঢালা হইল। সুমতি-প্রজ্ঞ এক ডেলা মাখন দিতে, মাখম ও লবণ চায়ে দিয়া বার আট-দশ মন্থন-দণ্ড চালাইতেই চা মাখন ও লবণ মিশ্রিত হইয়া সফেন পানীয়ে পরিণত হইল। চা-মন্থনের পাত্রটি এক মুখ বন্ধ (অন্ত মুখের ঢাকনির মধ্য দিয়া মন্থন-দণ্ড চলে) দুই আড়াই হাত লম্ব পিচকারীর মত। মন্থনীটি পিচকারির মত উপর নীচে চালাইলে ভিতরে সজোরে হাওয়া যাওয়ায় পিচকারির দণ্ডের মুখের গোল চাকতিতে তরল চা ও মাখন আলোড়িত হইয়া সবই দ্রুত মিশিয়া যায়। এখান হইতে যাইবার পথে আমাদের থোঙলা ( থোঙ নামক গিরিসঙ্কট ) পার হইতে হইবে। ভারবাহী লোক লওয়া অপেক্ষা ঘোড়ায় যাওয়াই শ্রেয় মনে হইল, এবং সেই জন্য এখান হইতে লঙ-কোর পর্য্যন্ত যাইবার জন্ত আঠার টঙ্কায় ( দুই টাকায়) ছুটি ঘোড়া ভাড়া করা হইল । ক্রমশঃ