পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভ্রষ্ট-লগ্ন বনফুল শুদ্ধ হইয়া বসিয়া আছি। আমার পায়ের উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া রহিয়াছে আমার স্ত্রী। তাহার আলুলায়িত কেশরাশি পায়ের কাছে খানিকটা জমাট অন্ধকারের মভ পুঞ্জীভূত হইয়া রহিয়াছে— অবরুদ্ধ ক্রননাবেগে তাহার সৰ্ব্বাঙ্গ কাপিয়া কঁাপিয়া উঠিতেছে। কি বলিব—কথা সরিতেছে না । 彎 彎 豪 অতীতের চিত্রগুলি মনে জাগিতেছে । মনে পড়িতেছে সেই দিনের কথা যখন আমি স্কুলে পড়িতাম—যখন আমার কৈশোর পার হয় নাই—ধখন স্বপ্নের সঙ্গে সত্যের খাদ এত বেশী করিয়া মেশে নাই । স্কুলে পরম বন্ধু ছিল তকু—অর্থাৎ ত্ৰৈলোক্য । বন্ধুত্বের ইতিহাসও আছে একটু। আমি থাকিভাম বোর্ডিঙে আর তকু থাকিত বাড়ীতে । এক পল্লীগ্রামের মাইনর স্কুল হইতে বৃত্তি পাইয়া আমি শহরের হাইস্কুলের চতুৰ্থ শ্রেণীতে ভক্তি হইলাম। ঠিক সেই বৎসরই সেই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণী হইতে প্রথম স্থান অধিকার করিয়| চতুর্থ শ্রেণীতে উঠিল তকু। মুখচোর ফরসা ছেলেটি । স্কুলের শিক্ষকগণ মেড়ার-লড়াইদেখা মনোভাব লইয়া আমাদের উভয়ের পিঠ চাপড়াইতে লাগিলেন । দ্বিতীয় শিক্ষক মহাশয়—যাহার আগ্রহে আমি এই স্কুলে আসিয়ু ভৰ্ত্তি হইয়াছিলাম—একদিন আমাকে ডাকিয় বলিলেন, “ওই তকুকে যেমন ক'রে হোক হটাতে হবে । পারবে ত ?” সম্মতিস্থচক ঘাড়নাড়িয়াfছলাম মনে পড়িতেছে । তখনও জানা ছিল মা তঝু কি বস্তু । তকুকেও নাকি তৃতীয় শিক্ষক মহাশয় গোপনে বলিয়াছিলেন, “ওই ছেলেটিকে কিন্তু হারানে চাই। গুনছি বটে ভাল ছেলে—কিন্তু হাজার ভাল হলেও পাড়াগ থেকে আসছে, ইংরেজীতে কাচা হবেই। তুমি চেষ্টা করলে ও কিছুতে তোমার সঙ্গে পারবে না--” চেষ্টা করিলে ভকু যে আমাকে অনায়াসে হারাইয়া দিতে পারিত এ-বিষয়ে এখনও আমি নিঃসন্দেহ । তবু কিন্তু চেষ্ট করে নাই সেই জন্য দ্বিতীয় শিক্ষক মহাশয়ের নিকট আমার মানরক্ষা হইয়া গিয়াছিল । ভকু ছিল কবি—সে কবিতা লিখিতে মুরু করিয়া দিল—অ্যালজেব্র ও উপক্রমণিকামুখস্থ-করা ভাল ছেলে সে হইল না। তাহার কবিতাও এমন কবিতা যে তাহা আমার ফাষ্ট হওয়ার গৌরবকে নিম্প্রভ করিয়া দিল। নবোদিত দিবাকরের জ্যোডিতে ইলেকটিকের বাতি মান হষ্টয় পড়িল । দিবারান্ত্রি পরিশ্রম করিয়া আমি রহিলাম মানপুর স্কুলের ফষ্ট বয় আর তত্ত্ব হইতে চলিল বঙ্গসাহিত্যের এক জন উদীয়মান কবি। তফাৎটা যে কি এবং কত বুঝাইয়া বলিবার আবগুক নাই । ফলে,—তকুর ভক্ত ও বন্ধু হইয়া পড়িলাম। २ ক্রমশঃ বন্ধুত্বটা এমন এক পধ্যায়ে উপনীত হইল যে স্কুলের সীমানার মধ্যে আর তাহাকে ধরিয়া রাখা গেল না । তত্ত্ব একদিন আমাকে বাড়ীতে নিমন্ত্ৰণ করিয়া লইয়া গেল ৷ তকুর মায়ের স্নেহ-কোমল ব্যবহার আমার হৃদয় স্পর্শ করিল—কিন্তু আমাকে চমৎকৃত করিল আর এক জন ৷ তকুর বোন । অসাধারণ তাহার রূপ । ‘অসাধারণ রূপ বলিতেছি কারণ চকুচকে ধারালে স্বন্দর একটা কথা খুজিয়া পাইতেছি না বলিয়া। অমন স্বন্দরী সত্যই আমি দেখি নাই । ছিপছিপে পাতলা গড়ন। চোখ মুখ নাক অদ্ভুত। একমাথা কালো কোকড়ান চুল। গায়ের রং—সেও অতিশয় অপূৰ্ব্ব । চাপাফুলে গোলাপ আভা থাকিলে যাহা হইতে পারিত ভাহাই। মনে হইতে লাগিল যেন স্বপ্নাবিষ্ট শিল্পীর কল্পনা সহসা মূৰ্ত্তি ধরিয়াছে।