পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ত্রিবেণী ঐজীবনময় রায় নিরবচ্ছিন্ন কর্মপ্রবাহের মধ্যে আপনাকে সম্পূর্ণ ভোলবার চেষ্টায় পাৰ্ব্বতী নিজেকে কিছুতেই অণুমাত্র বিশ্রাম দিল না । নব নব উন্নতির পন্থা উদ্ভাবন ক’রে আশ্রমকে সে যেন আবার নূতন রূপ দিয়ে গড়ে তোলবার উদ্যমে প্রাণপাত করতে লাগল। এই উৎসাহের স্রোতে পাৰ্ব্বতীর কৰ্ম্মপ্রবণ হৃদয়কে, তার ক্ষুব্ধ অস্তরের মৃত্যুগুহার অন্ধ সমাধি থেকে আবার কখন যে ধীরে ধীরে আশা-আনন্দআলোকময় সঞ্জীবনরসধারাপ্রবাহে আপন দয়িতের স্বথশাস্তি-সাত্মনাপূর্ণ ভবিষ্যতের প্রতি মেহাতুর করে তুললে তা সে জানতেও পারে নি। সমস্ত মাসের অস্তে শচীন্দ্র যখন এসে উপস্থিত হবে তখন এই নূতন স্বষ্টির বিস্ময়ের অর্ঘ্য দিয়ে সে শচীন্দ্রের ক্ষুন্ধচিত্তে যে অপরিমিত আনন্দের সঞ্চার করবে সেইটুকু কল্পনা করে তার মহাশ্রম মনে মনে যেন প্রসাদ লাভ করতে লাগল। তার চিত্তের সকল সংশয় অপসারিত হয়ে গেল । দিনের পর দিন যায় তার বুভূক্ষু চিত্ত আশা-আকাঙ্ক্ষীবেদনার উত্তেজনায় তোলপাড় করতে থাকে । যে প্রসাধন সম্বন্ধে কোনদিন তার রুচিতে আগ্রহের ছোয়াচ লাগবার অবসর পায় নি, সেই প্রসাধন সম্বন্ধেও নিজের অজ্ঞাতসারে সে যেন একটু সজাগ হচ্ছে । বাঙালী রান্নার নানা বিচিত্র জটিল রহস্ত আয়ত্ত করবার উদ্দেশুে ওখানকার ছাত্রীদের কাছে প্রশ্ন ক'রে করে বিস্ময়াবিষ্ট করে তুলেছে। বাঙালী পরিবারের গৃহস্থালী সম্পর্কে গল্পের ছলে মেয়েদের কাছে নানা তথ্য সংগ্রহ করে—এমনি ক’রে দিন যায় তার ভবিষ্যজীবন রচনার ভূমিক-বিষ্কাসে । মাস অতীত হ’তে চলল ; শচীন্দ্রের কাছ থেকে কোনও আগমনীবাৰ্ত্ত এখনও এসে পৌছল না। পাৰ্ব্বতী ভাবে— নিশ্চয় জমিদারীর কাজে ফুরসৎ পান নি। আজ মাসের শেষদিন। শচীক্সের আগমন-প্রতীক্ষায় পাৰ্ব্বতী গিয়ে নদীর ধারে দাড়িয়েছে। তার বেশভূষায় কোথাও আতিশয্য না থাকলেও পারিপাট্যের অভাব নেই । মুখ তার আশা ও আনন্দের দীপ্তিতে সমুজ্জল। দূরে বাকের মুখে লঞ্চের আভাস দেখা দিয়েছে। আর দশ মিনিটের মধ্যেই লঞ্চ এসে ঘাটের কাছে পৌছবে । কিন্তু এই সময়টুকু যেন কাটতে আর চায় না, এটুকু সময় যেন এই ২৯ দিনের চেয়েও অনেক বিস্তৃত । সারেঙ্গটা যেন কি ! লঞ্চের গতি যে নৌকারও অধম হ’ল । তবু সময় যায়। লঞ্চ ঘাটের কাছে এসে পৌছয়। কিন্তু কই শচীন্দ্র ত বারান্দায় দাড়িয়ে নেই । কেবিনে গেছে নিশ্চয়—কোনও কাজে । লঞ্চ ঘাটে লাগতেই পাৰ্ব্বতী এগিয়ে গেল। কিন্তু শচীন্দ্র কই ! ভোলানাথ এগিয়ে এসে ‘গড় ক'রে একটা কাগজের মোড়ক পাৰ্ব্বতীর হাতে দিলে। শচীন্দ্র আসে নি। কোনও কঠিন অমুখ করে নি ত! জিজ্ঞেস করতে যেন সাহস হয় না। সেই যে বিলেতে একবার—উঃ কত কষ্ট ক’রেই না তাকে বাচিয়েছিল ! এক মুহূর্ভের মধ্যে পাৰ্ব্বতীর মনে সম্ভব-অসম্ভব লক্ষ কথার চুম্কি তুবড়ীর ফুলঝুরির মত মনের মধ্যে ঝরে ঝরে পড়ল। শক্ত মেয়ে সে ; মনের এই উত্তাল উচ্ছ্বাস সে কঠিন বলে চেপে জিজ্ঞেস করলে, “ভোলাদা—ভাল জাছত ? তোমার বাবু এলেন না যে ”—বলে সে প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে না দিয়ে ক্রমাগত কথা ব’লে যেতে লাগল— যেন, পাছে কোন দুঃসংবাদ ভোলাদার মুখ থেকে হঠাৎ বেরিয়ে পড়ে, এই ভয় । “উ কত দিন পরে তুমি এলে বল ত ভোলাদা ? দেখ সব বদলে গেছে। বলতে হবে—দিদিমণির ক্ষমতা আছে। তোমার বাৰু এলে অবাক হতেন। কিন্তু এলেন না ত! কিছু খেয়েছ সকালে ? চল আমার বাড়ী চল । বিশ্রাম ক'রে নাও। তার পর সব গুনব’খন।” ইত্যাদি অনেক—