পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাড়লেই তোমারটা কেড়ে নেব এসব অসভ্যতা বেগনি টিকবে না। দেশ জাতি এ-সব মানুষের মধ্যের তফাৎ উঠে গিয়ে পৃথিবীর জাতিধৰ্ম্মনিবিশেষে সমস্ত মানুষের যোগাযোগে শিক্ষা, শিল্প-বাণিজ্যের কেন্দ্র সব গড়ে উঠবে। এই রকম সব কথা ; ঠিক বুঝি নে। কিন্তু তাই যদি হয় তবে কোন একটা দেশে আজ সেই দেশের লোক প্রভুত্ব করতে পেল না ব'লে--” কমলা বেচারা নিতান্ত মরিয়া হয়েই নিখিলের শেপানে মুখস্থ কথা আওরাতে গিয়ে মুস্কিলে পড়ে গেল। সীমা আর ধৈর্য্য রাখতে পারলে না, বললে, “হয়েছে, হয়েছে। নিখিলবাবুর চেলাগিরি আর করতে হবে না । ওসব ঢের শুনেছি—তাকে শোনাও গে যাও, তোমার উপর ভক্তি বেড়ে যাবে।" বলে একটু নরম হয়ে হেসে বললে, “আমনিই কিছু কম নেই অবিশুি।” কমলা জিব কেটে বললে, “ছিঃ ও কি ভাই । শ্রদ্ধা যদি সত্যি কাউকে করেন ত সে তোমাকে । তা ভাই তোমার মুখের উপর বলছি ব’লে নয়, তোমার মত মেয়েকেও যদি র্তার শ্রদ্ধা করবার চোখ না থাকৃত ত তাকে নিন্দে করতাম নিশ্চয় ।” সীমা ঠাট্টার মুখে একটু ঝাজ দিয়ে বললে, “আচ্ছা, থাকৃ আর শ্রদ্ধ করাতে হবে না। তোমার নিখিলবাবুকে তার ‘বালাপোষ-বৃত্তিটা একটু পরিত্যাগ করতে বলে। তাহলে আমার শ্রদ্ধাও কিছু পেতে পারেন। তারও মূল্য কিছু অল্প নয়, কি বল ?” বলে হাসতে হাসতে উঠে গেল । সীমার কথার ঝাজে তার মনের রহস্তটুকু কল্পনা করে কমল মনে মনে বেশ একটু কৌতুক অনুভব করলে। Skr সমস্ত কথা শুনে নিখিলের এ-কথা বুঝতে বাকী ছিল না ষে সীমা কমলাপুরী গিয়েছে । এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতি নিখিলের মনে সত্যই একটা শ্রদ্ধা এবং দরদ ছিল। পাছে সীমার দল এদের উপর কোন উৎপাত করে হঠাৎ তার এই ভয় মনে পেয়ে বসল এবং সেও কমলাপুরী যাওয়া মনে মনে স্থির করে হাসপাতালে ফিরে গেল, কিন্তু মুখে কিছু বললে না । কমলার মুখে সীমার অকস্মাৎ অন্তৰ্দ্ধানের কথা নিখিলকে চিন্তাকুল করে তুলেছিল। তা ছাড়া আজ কিছুদিন যাবৎ সীমার এবং রঙ্গলালের গতিবিধি নিখিলকে অমনিই ভাবিয়ে তুলেছিল। একটা গুরুতর কোন প্ল্যান যে তাদের মাথায় খেলছে—নিখিলনাথের তা বুঝতে বাকী ছিল না । সম্প্রতি কয়েকটা অদ্ভূত ডাকাতির সংবাদ পাওয়া যাচ্ছিল সেগুলির কোন কিমারা হয় নি। ডাকাতিতে লুটপাটের কোন চেষ্টা ছিল না। অর্থবান লোককে হঠাৎ গুম’ ক’রে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করাই এগুলির উদ্দেশ্য ছিল। অনুসন্ধানের দাপটে পুলিসের ও গৃহস্থের আর আহার নিদ্রা ছিল না । * নিখিল সীমার সীমানার মধ্যে গতায়াত করলেও সীমা বা রঙ্গলাল অবঙ্গ তাদের নিজেদের গতিবিধি কাৰ্য্যকলাপ সম্বন্ধে কখনও নিখিলের সঙ্গে প্রকাশু আলোচনা করত না । নিখিল সম্বন্ধে রঙ্গলালের মনের দ্বিধা যদিও কোনদিন সম্পূর্ণ নিরাকৃত হয় নি, তবু সীমার খাতিরেই সে নিখিলকে সহ করত । নিখিলকে এই শ্রোতের মধ্যে আকৃষ্ট করবার জন্তেষ্ট হোক বা মনস্তত্ত্বঘটিভ অন্ত কোন কারণেই হোক সীমা যে তাকে মোটামুটি বিশ্বাস করে এটুকু তার ব্যবহারে প্রকাশ করতে ক্রটি করত না । দমদমার বাড়ীতে যেতেও যে নিখিলের বাধা ছিল না এইটুকু গলাধঃকরণ করতেই রঙ্গলালের সবচেয়ে বাধত। সীমার খাতিরে কোনমতে সে সঙ্ক ক'রে যেত এই ঘা ৷ কারণও ছিল তার । রঙ্গলাল মোটের উপর বলতে গেলে এই নূতন উদ্যমের কৰ্ম্মকৰ্ত্তা। সেই হিসাবে সীমার অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা সে মনে মনে দাবী করত। সীম। অবগু তাকে তার উপযুক্ত মৰ্য্যাদা দিতে ক্রটি করত না ; কিন্তু দেশের কাজের জন্য রজলালের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার চিন্তা তার কাছে হাক্তকর ছিল । দেশের কার্ষ্যে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারায় রজলাল যদি নিজেকে ভাগ্যবান মনে না করে তবে দেশের কাজে না নেমে হাততালির লোভে তার যাত্রার দলে আখড়াধারীর কাজে যাওয়া সমীচীন ছিল, এই তার মত ; এবং স্পষ্ট ভাষায় এ মত ব্যক্ত করতে সে কক্ষর করত না ।