পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিষিদ্ধ দেশে সওয়া বৎসর রাহুল সাংকৃত্যায়ন 3 * এই তিব্বতী ভস্ত্ৰ-মহোদয়ের গৃহে বঙ্ক চাকর-চাকরাণী কাজে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু তৎসত্ত্বেও “চাম-কুশোক” ( ভদ্রমহিলা অর্থাং কী ঠাকুরাণী) মাথায় ধনুকাকার মুক্তাপ্রবালমণ্ডিত শিরোভূষণ পরিয়া ক্রমাগত রন্ধনশাল, মদ্যাগার, দেবগৃহ প্রভৃতি বাড়ীর সকল অংশে ঘুরিতেছিলেন। বলা বাফল্য ই হারও হাতে-মুখে বেশ এক পোছ ময়লা জমিয়াছিল এবং পরিচ্ছদের সামনে-ঝুলানো পশমী ঝাড়ন একেবারে কালে রঙে দাড়াইয়াছিল। রাত্রে মাংসযুক্ত খুকৃপা ভোজনের পর আঢ্য মহাশয় অনেকক্ষণ “আমার জন্মস্থান' লদার্থ সম্বন্ধে নানারূপ জিজ্ঞাসাবাদ করিলেন, তাহার পরে অনেক রাত্রে নিদ্রার জন্য সভা ভঙ্গ হইল। ততক্ষণে কৰ্ত্ত-মহাশয়ের দৃষ্ট পুত্র লোমযুক্ত মোটা মোলায়েম কঙ্গল চুকচু-নিৰ্ম্মিত খলির মধ্যে ‘নাকে তেল দিয়া ঘুমাইতেছিল। ভোটদেশে স্ত্রী-পুরুষ সকলেই উলঙ্গ অবস্থায় শয়ন করে, ঈগতে তাহাঁদের সঙ্কোচ বোধ নাই, এমন কি একই ঘরে পিতামাত, পুত্র-পুত্রবধু ভিন্ন ভিন্ন শয়নস্থালিতে ঐ ভাবে নিদ্রা যায়, বহুভর্তৃকা পত্নীও ঐ ভাবে পতিমণ্ডলীর সঙ্গে লেপ-কম্বলের মধ্যে নিদ্ৰা যায় । ৪ঠা জুলাই সকাল দশটায় ডুরিং হইতে যাত্রা করিয়া ক্ষেতের মাঝের পথ ধরিয়৷ আমরা দুইট নাগাদ জু-গ্য গ্রামে উপস্থিত হইলাম। গ্রামে পৌছিবার একটু আগেই পথ এক গভীর ও স্বল্পপরিসরের সেচ-নালীর পাড় দিয়া চলিয়াছিল। খচ্চর জীবটাই দুষ্ট, কখনও সোজা পথে চলে না, একটা বুড়া খচ্চর বোঝ-মৃদ্ধ ক্ষেতের উচু আলে উঠিয়া প্ৰহারের ভয়ে সেচ-নালীর গভীর অংশে লাফাইয়া পড়িল । চাউলের বোঝার ভারে প্রথমে ত সেটা মুখ থুবড়াইয়া জলের ভিতর বসিয়া পড়িল । আমি ভাবিলাম আপদটা বুঝি মরিল, কিন্তু খচ্চরওয়ালারা তাহার মুখ জলের উপর তুলিয়া ধরিয়া চাউলের বস্তাগুলি ক্ষিপ্রতার সহিত খুলির লওয়ায় দুষ্ট বাহনটি উঠিয়া আসিতে পারিল। চাউল ভিজিয়া গিয়াছে, এদিকে চাউলের বস্তার মুখ বন্ধ এবং গালা দিয়া সীলমোহর কর, কিন্তু চাউল মা শুখাইলে লাস পৌছাইবার পূর্বেই তাহা অর্থাপ্ত অবস্থায় পরিণত হইবে ; সুতরাং খচ্চরওয়ালারা জু-গ্যা গ্রামে পৌঁছিয়া ঐ মোহর ভাঙিয়া চাউল খুলিয়া বাহির করিয়া কম্বলের উপর ছড়াইয়া শুখাইতে দিল। পারিশ্রমিক হিসাবে দিন দুই-তিনের মত খুকুপার জন্ত চাউলের ব্যবস্থাও করিয়া লইল । শীগচী হইতেই আমরা ব্ৰহ্মপুত্রের উপত্যক ছাড়িয়া গ্যাঙ্কীর নদীর উপত্যক দিয়া চলিতেছিলাম। সমুত্র পৃষ্ঠ হইতে লীগচী ১২,৮৫৯ ফুট এবং গ্যাঞ্চী বা গিয়াংসি’ ১৩,১২০ ফুট উচ্চে অবস্থিত স্বতরাং গ্যাধীতে অপেক্ষাকৃত অধিক শৈত্য অনুভূত হয়। এখনও আমরা লীগচী হইতে বিশেব দূরে আসি মাষ্ট, স্বতরাং এই অঞ্চল গরম বলিয়াই অনুভব করিতেছিলাম। এখানের ক্ষেতে প্রচুর বথুয়া শাক দেপিলাম। জুগাতে আমাদের সর্দারের পূৰ্ব্বজদিগের ভদ্রাসন, মাত্র দুই-এক পুরুষ আগে ইহার এখান হষ্টতে লাসার কাছে গন্দনে ভিটা বাধিয়াছে। খবর পৌছিবমাত্র সর্দারের জ্ঞাতিভাইদের পত্নীর পান-ভোজনের সম্ভাৱ লষ্টয় তাহাকে অভ্যর্থনা করিতে আসিল । মুড়ি, থই, তেলে-ভাজা, সেও, কমলালেবুর মিঠাই এমনি অনেক থাবার আসিল । এ দেশের নিয়ম এক্ট ষে ঐরুপ খাস্তসামগ্ৰী সামনে স্থাখিলে দুই-চার দানা মাত্র মুখে দিতে হয় নহিলে ভদ্রতার সীমা লঙ্ঘন করা হয় । আমিও ভদ্রত। রক্ষণ করার চেষ্টায় ছিলাম কিন্তু সর্দার বলিল, “খুব থাও।” পরে প্রচুর মাখনযুক্ত গরম চা-ও অনেক আসিল । রাত্রে সর্দায় তাহার জ্ঞাতি-বন্ধুদের ঘরে দেপা করিতে গেল । ৫ই জুলাই যবের আট সিদ্ধ ও গরম সরিষার তৈল প্রাডরাশের জন্ত আসিল, তবে আমি তাহ খাইলাম না। দশটার সময় খচ্চরগুলিকে খাওয়াইয় আবার চলিতে আরম্ভ ।