পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՊՅՏ করিলাম ; আজ পথ অল্পই ছিল,গ্ৰামহইতে দক্ষিণ মুখে চলিয়া প্রথমে পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছিয়া পাহাড়ের নীচে নীচে ক্ষেতের পাশ দিয়া চলিতে লাগিলাম। এদিকে সেচ-নালীর ব্যবস্থা ভাল, সে-সব পার হইয়া আড়াই মাইল আন্দাজ পথ চলিয়া আমরা পশ্চা গ্রামে পৌছাইলাম। খচ্চরগুলি ইতিপূৰ্ব্বে ভাল বিশ্রাম করিবার স্থযোগ পায় নাই, তাই সদারের ইচ্ছা ছিল এখানে দু-চার দিন থাকিয় তাহীদের সন্তা দান-ভূষি খাওয়ায় এবং নিজে নাটক অভিনয় দেখে। প-চা গ্রামে যাহার গোশালায় আমরা ছিলাম সে এ-অঞ্চলের বড় জায়গীরদায়, তাহার গৃহের ভিতরে যাই নাই কিন্তু বাহির হইতে উহা অতি সুন্দর মনে হইতেছিল। চা-পানের পর সকলে নাটক অভিনয় দেখিতে গেলাম । গ্রামের উত্তর-পশ্চিম দিকে, প্রায় এক মাইল দূরে, নদীর পাড়ে অভিনয় চলিতেছিল। এখানে এই যাত্রাকে “আচী লাহমো"র “তেমু অর্থাৎ স্ত্রী দেবীর লীলা, অভিনয় বলে। ইহাকে ভোটীয় ধৰ্ম্মাভিনয় বলা উচিত। অামাদের সঙ্গে ছুটি বড় কুকুর ছিল, সেগুলিকে দরজায় বাধিয়া, দ্বারে তালা দিয়া আমরা চলিয়া আসিলাম। সবুজ ঘাসে ভরা প্রাস্তরে রজভূমি, তাহার পাশে তিব্বতী বাবলাগাছের জঙ্গল। এই যাত্রা প্রতি বৎসর এখানকার জমিদার নিজের খরচে করাইয়া থাকেন। ভিক্ষুগণ নাটকের অভিনেতা। ভিক্ষুপাত্রদের পাণ-ভোজন পারিতোষিকের ব্যবস্থা তাহাকেই করিতে হয় ; অধিকন্তু অভ্যাগত সম্রাস্ত ব্যক্তিদের আহারাদির ব্যয়ণ্ড তাহাকে দিতে হয়। নাটকের অভিনয়ের জন্ত বৃহৎ চতুষ্কোণ শামিয়ান টাঙানো ছিল ; আশেপাশে আরও অনেকগুলি ছোট বড় শামিয়ানায় দূর হইতে আগত অতিথিদের থাকিবার ব্যবস্থা ছিল, সেগুলির পাশে তাহদের ঘোড় বাধা থাকিত। রঙ্গভূমির দক্ষিণে ছোট ছোট স্বন্দর তাম্বুতে বহু সম্রাস্ত স্ত্রী-পুরুষ বসিয়া ছিলেন এবং পূৰ্ব্বদিকে রৌদ্রের মধ্যেই অন্ত অতিথিদের জন্ত ফরাশ বিছানো ছিল। অন্ত সব দিকে অক্ষান্ত দর্শকেরা নিজ নিজ আসন বিছাইয়া বসিয়াছিল তাহাদের মধ্যে স্ত্রীলোকের সংখ্যা অনেক। জমিদার মহাশয় আমার সঙ্গীকে দেখিয়াই লোক পাঠাইয় তাহাকে ডাকাইয়া পূৰ্ব্বদিকের ফরাশের উপর বসাইলেন। নাটক দেখার সঙ্গে চা ও ছঙ-পান সমানে প্রবাসী

  1. _sভত্তিত চলিতেছিল, আমাদের জন্তও চা আসিল। প্রিহরে রৌদ্র প্রখর হওয়া সত্ত্বেও লোকে উঠবার নাম করিল না। ভোটীয় নাটকে যবনিকার ব্যবহার নাই, রঙ্গমঞ্চও সমতলভূমি । অভিনেতাদের জন্য বাদকদিগের স্থানের পাশে মদ্যপূর্ণ চামড়ার মটকা সাজানো । বাস্তের মধ্যে রোশনচোকী, দীর্ঘাকৃতি বীণ, এবং দীর্ঘ দণ্ডের উপর স্থাপিত এক প্রকার ডমরু । বাদক ও নট সকলেই নিকটস্থ এক গুম্বার “ঢাবা"। নাটকের প্রসঙ্গ বুদ্ধদেবের পূৰ্ব্বজন্মের জাতক সম্বন্ধীয় এবং অভিনয়ের মধ্যে নৃত্যগীত, রঙ্গভঙ্গী, কৌতুক সবই ছিল। অভিনেতাদিগের মুখোস কাগজ বা কাপড়ের, বেশভুষা সুন্দর। গানের প্রশংসা চারি দিকেই, যদিও গানের কথার তাৎপৰ্য্য দু-চার জনও বুঝিতেছিল কিনা সন্দেহ । গদ্য-পদ্য দুয়েরই উচ্চারণের কৃত্রিমতায় আমাদের রামলীলার অভিনয়ের অস্বাভাবিক আবৃত্তির কথা মনে হইতেছিল। যাত্রার এক অঙ্কে চারিটি স্ত্রী-ভূমিকা ছিল, তাহাদের পরিচ্ছদ স্বাভাবিক । অমনিতেই সাধারণ ভোটীয় মহিলাদের বেশ যথেষ্ট কৃত্রিম (যথা, পরচুলার ব্যবহার, বৃহৎ শিরোভূষণ ইত্যাদি ), নাটকে অধিক কিছু করার প্রয়োজন ছিল না। এই চারিটি নারীর মধ্যে দুই জন চাং (কুতী হইতে খম্বী-লা পৰ্য্যন্ত ) অঞ্চলের ধন্থকাকার শিরোভূষণ এবং অন্ত দুই জন লাসা অঞ্চলের ত্রিকোণ শিরোভূষণ পরিয়াছিল। লাসার বেশ যাহারা পরিয়াছিল তাহাড়ের মধ্যে এক জন এতই ভাল সাজিয়াছিল যে, স্ত্রী-দর্শকেরাও তাহাকে প্রকৃত স্ত্রীলোক বলিয়া সন্দেহ করিতে লাগিল, যদিও সকলেই জানিত এই শ্রেণীর নাটকে স্ত্রী-অভিনেত্রী লওয়া নিয়মবিরুদ্ধ । নৃত্যে তাল-লয়-সহযোগে মন্দগতিতে অগ্রপশ্চাৎ গমন, হস্তসঞ্চালন, চক্ৰবৎ পরিভ্রমণ সলই অতি স্বন্দর দেখাইতেছিল। প্রহসনের মধ্যে বৈদ্য ও মন্ত্রবিশারদের এক অঙ্কে কিছু অশ্লীল অংশ ছিল কিন্তু লোকে হাসিয়া গড়াইতেছিল। নাটকের পাত্ৰগণের অধিকাংশই দেবতা, নাটকের মধ্যেই পান-লীলা ছিল, সুতরাং স্ত্রী-পুরুষবেশে স্থসজ্জিত বহু রাজপরিচারক রৌপ্যময় পানপাত্রে মদ্য লইয়া দাড়াইয়া ছিল। বেলা দুইটার সময় সম্রাপ্ত অভ্যাগতদিগের মধ্যে মাংস, ডিম্বাদি পরিবেশন আরম্ভ