পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হইল ; মাংস কিসের স্থির করিতে না পারায় আমি তাহা গ্রহণ করিতে পারিলাম না। খাইবার সরঞ্জামের মধ্যে ' কাঠের বারকোস, চীনা-মাটির বাসন এবং কাঠনিৰ্ম্মিত চীনা “চপ-ষ্টিক” (চীনারা এই শলাকা কাট-চামচের মত ব্যবহার করে ) দেওয়া হইতেছিল। চীন দেশের সঙ্গে বহুদিন ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ থাকায় এদেশে বহু চীনা রীতি-নীতির চলন হইয়াছে। বেলা চারিটার সময় আমরা ফিরিলাম, পথে এক জন ভোটিয়কে বলিতে শুনিলাম, “এ নিশীয় ভারতীয়।" ইহাতে আমি একটু শঙ্কিত হইলাম, তবে লদাখ ও বুশহরের লোকের সঙ্গে আমাদের সাদুপ্ত থাকায় এরূপ সন্দেহ ঘুচানো সহজ স্বতরাং ভয়ের কারণ বিশেষ ছিল না। গ্যার্থী কাছে হওয়ায়, এখানের অনেকে ভারতীয় সিপাহী দেখিয়াছে, তাহাদের এরূপ সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক। আমাদের কুকুর দুইটি এতদিনে আমাকে চিনিয়া গিয়াছিল। কুকুরগুলির বৃহৎ দেহ দেখিয়া আমি প্রথমে ভাবিতাম, ভোটিয়েরা নিশ্চয়ই উহাদের খুব খাওয়ায় ; কিন্তু দেখিলাম প্রাতে সের-দুষ্ট গরম জলে দেড় ছটাক আন্দাজ সন্তু, এবং সন্ধ্যায়ও তাহাই মাত্র ইহানের আহার। তিব্বতী কুকুর মাত্রেরই দৈনিক খাদ্যের এই পরিমাণ। বস্তুতঃ ঐ দেশে সকল কুকুরই সৰ্ব্বদা ক্ষুধাৰ্ত্ত থাকে, কেন না একদিন যাত্রা শুনিতে না যাওয়ায় আমি ঐ কুকুর দুইটিকে খাওয়াইয়া দেখিলাম এক-একটি প্রায় এক সেরের উপর সন্তু পার করিল। যেখানে আমরা ছিলাম সেই গৃহের ছাদে একটি বিরাট কুকুরের ছালে ভূযি ভরিয়া লটুকাইয় দেওয়া ছিল । কোথাও কোথাও ঐরূপে য়াক ও ভল্লুকের ছালও টাঙান দেখিয়াছি, বোধ হয় ইহা তিব্বতী তুকতাকের অঙ্গীভূত। ভোটিয়ের রাত্রে ছাদে কুকুর ছাড়িয়া দেয় । এক রাত্রে আমি ও আমার এক সঙ্গী ভুলক্রমে ছাদেই শুইয়াছিলাম। অতি ভোরে সঙ্গী উঠিয়া চলিয়া সাম্ব, আমি গুইয়া থাকায় (না বুঝিতে পারায় ) কুকুরগুলি আমাকে আক্রমণ করে নাই, কিন্তু জাগিবামাত্র আমি বুঝিলাম উঠিলেই আমাকে কুকুরের সঙ্গে লড়িতে হইবে। স্বতরাং অনেক দেরি হওয়া সত্ত্বেও, যতক্ষণ একজন বাড়ির লোক উপরে না আসিল, ততক্ষণ আমি চুপ করিয়া শুষ্টয় থাকিতে বাধ্য হইলাম। স্বমতি-প্রজ্ঞ একদিন বলিয়াছিলেন এদেশের লোকে ট্রকুন খায়। সেই সময় এই খচ্চরওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করায় সে এ-কথা অস্বীকার করে। একদিন ঐ সর্দারেরই এক ধনী জ্ঞাতির তরুণী স্ত্রী আমাদের বাসায় আসিল । ভোটিয়ের স্বান না করায় উকুনের উৎপাত স্বাভাবিক। স্ত্রীলোকদের সাধারণ পরিচ্ছদের মধ্যে বাহিরে লম্বা পশমী ছুপা ( চোগা ), ভিতরে কোমরের উপরে রঙীন স্বতা বা রেশমী জ্যাকেট, এবং কোমরের নীচে স্থত বা রেশমী লম্ব স্বাগরা । এই জ্যাকেট ও ঘাগরা শরীরে লগ্ন হওয়ায় ঐগুলিতেই উকুনের বাসা। ঐ তরুণী সেদিন তাহার জ্যাকেট খুলিয় তাহ হইতে উকুন বাছিয়া থাইতে লাগিল। আগে এক জন ভোটিয় আমায় বলিয়াছিল এরূপ ব্যাপার এদেশে অতি সাধারণ এবং উকুন খাইতে টক লাগে ! ৮ই জুলাই প্রাতরাশের পর আবার যাত্রারম্ভ হষ্টল । স্বরুতেই একটা থচ্চর তাহাব বোঝার বন্ধনী খুলিয়া ফেলায় কিছু দেরি হইল। গ্রাম হইতে প্রথমে দক্ষিণে পরে পূর্বদিকে যাওয়৷ ইহল, এখানে একটি দেবালয় আছে, তাহার পাশের সে৮ণালীর ধার দিয়া রাস্তু গিয়াছে। এই পথে, ক্ষেতগুলির পাশে পাহাড়ের ধারে ধারে অতি ধীরে চড়াই পথে চলিয়া বেলা বারটার সময় স-চা গ্রামে উপনীত হইলাম । গ্রামের নিকট এক পাহাড়ের মূলে নেশা নামক একটি ছোট মঠ আছে। এভ দিন পরে থচ্চরওয়ালারা মানাপ্রকার উৎপাত আরম্ভ করিল। উত্তর দিবার প্রবৃত্তি দমন করিলেও এরূপ রূঢ় ব্যবহারের ফলে মনের মধ্যে বিরক্তি থাকিয়া গেল । কি ভাবে চলিলে তাহারা আমার উপর প্রসন্ন থাকে বা আম হটতে অসম্ভব কিছু আশ। না করে তাহা বুঝিতে পারিতেছিলাম না। এরূপ ব্যবহার ইহাদের শুধু নহে, ভোটীয় জাতিরষ্ট স্বভাবগত। সন্ধ্যার সময় উহারা বলিল, কাল প্রাতে রওয়ানা হইয় গ্যার্থীতে চা পান করিয়াই সেখান হষ্টতে যাত্রা করিব ; সেখানে ভুধি-চারার দাম বেশী সুতরাং আরও আগে চলিয়া কোথাও থাকিব। সেই কথা মত ৯ই জুলাই সূৰ্য্যোদয়ের পরেই চলিতে মুরু করিলাম। এদিকের সেচনালীতে জল বেশী, ক্ষেতগুলির হরিংশোভা নয়নমনোহর, নদীর ধারের বাবল-বনের শোভাও স্বন্দ্ৰক