পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চেকোস্লোভাকিয়ার রাজধানী প্রাগের জমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতের অধ্যাপক ডক্টর মরিস্ উইন্টারনিটজের মৃত্যুতে পাশ্চাত্য মহাদেশের শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতজ্ঞ অধ্যাপকের তিরোধান হইল। তিনি কেবল বিদ্যাবত্তার জন্ত বিখ্যাত ছিলেন না, মানুষ হিসাবেও খুব বড় ছিলেন। আমরা তাহাকে প্রোগে তাহার বাড়ীতে ও প্রাগের অন্যতম পৌরজনরূপে ঘেরূপ দেখিয়াছিলাম, কলিকাতায় যেরূপ দেখিয়াছিলাম, এখন তাহা মনে পড়িতেছে। প্রাগে রবীন্দ্রনাথের ও আমাদের কয়েক জনের চিঠিপত্র তাহার ঠিকানায় আসিত। তিনি ডাকপিয়নদের মত একটি ব্যাগে করিয়া সেগুলি হোটেলে আমাদিগকে দিয়া যাইতেন । প্রাগে আমি অনুস্থ হইয়া পড়ি। তথাকার প্রসিদ্ধতম ডাক্তার আমাকে রাত্রে ফ্রানেলের পাজামা ও জামা ব্যবহার না করিয়া সাধারণ স্বতী পরিচ্ছদ ব্যবহার করিতে বলেন। ইউরোপে সেরূপ কিছু দরকার হইবে না মনে করিয়া স্বতী সব জামা পাজামা আমি পূৰ্ব্বেই আমার একটি আমেরিক-প্রত্যাগত ভারতবর্ধযাত্রী প্রাক্তন বাঙালী ছাত্রের মারফৎ জেনিভা হইতে কলিকাতায় পাঠাইয়া দিয়াছিলাম। আমার স্বতী জামা পাজামা কিছু নাই, অধ্যাপক উইন্টারনিটজ, র্তাহার কনিষ্ঠ পুত্রের প্রমুখাং শুনিয়া স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া সস্ত্রীক আমাদের হোটেলে আসিয়া আমার অন্ত জামা পাজামা দোকানে লইয়া গিয়া সেই মাপের স্বতী জিনিষ আমার জন্য কিনিয়া আনিয়া দিলেন । এই সামান্ত ঘটনাটি বর্ণনা করিলাম, এই জগদ্বিখ্যাত ও আম অপেক্ষ বয়োবৃদ্ধ অধ্যাপক মহাশয়ের সহৃদয়তার ক্ষুদ্র একটি দৃষ্টান্ত স্বরূপ। প্রাগের জম্যান থিয়েটারে ধখন রবীন্দ্রনাথের “ডাকঘর” জমান ভাষায় অভিনীত হয়, তাহার পূৰ্ব্বে অধ্যাপক মহাশয় আমাকে বলেন, “আমি আপনাদের দেশের ও জাতির সহিত পরিচিত বলিয়া, অভিনয় যাহারা করিবে তাহাদিগকে আমি শিখাইয়াছি ; অভিনয় কেমন হয় আমাকে বলিবেন।" অভিনয়ের পর তাহাকে আমি বলিয়াছিলাম, যে, ভালই হইয়াছে । তিনি নিজে অসাংসারিক ব্রাহ্মণ পণ্ডিত গোছের মানুষ ছিলেন। তাহার সাধবী গৃহিণী গুছাইয়া সংসার চালাইতেন ও তাহাকেও চালাহতেন। কয়েক বৎসর হইল তাহার পত্নীবিয়োগ হয়। তাহাতে তিনি বড় আঘাত পান বলিলে যথেষ্ট বলা হইবে না, তাহার জীবনপথের সজিনী হারাইয়া অনেকটা অসহায়ও হন। রবীন্দ্রনাথ অধ্যাপক মহাশয়কে তাহার অন্যতম বন্ধুরূপে এবং বিশ্বভারতীর অধ্যাপক রূপে ঘনিষ্ঠভাবে জানিতেন। তাহার ভগিনীকে কবি সমবেদনা জানাইয়া যে চিঠি লিখিয়াছেন, তাহাতে অধ্যাপক মহাশয় সম্বন্ধে লিখিত প্রত্যেকটি কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্য – The news was indeed painful for us, who were used to looking upon him as one of our truest and '. respected friends outside India. During my long life and extensive travels. I never met a savant more worthy of respect than the learned doctor. His deep and hroad humanity, co-extensive with his unluzingly wide scholarship, his devotion to truth , and the conrage, with which he held fast to his idealism in the midst of a growingly hostile atmosphere in tontral Enrope, are his claims to our homage. In him l have lost a faithful comrade, India has lost one of its truest Pandits and best friends, and humanity one of its most sincere champions. অধ্যাপক মহাশয় মর্ডান রিভিয়ু মাসিক পত্রে কয়েকটি উৎকৃষ্ট প্রবন্ধ লিখিয়াছিলেন। এখন কৃতজ্ঞতার সহিত তাহা মনে পড়িতেছে । অধ্যাপক মহাশয়ের সম্বন্ধে স্থপণ্ডিত ক্ষিতিমোহন সেন মহাশয়ের প্রবন্ধটি চৈত্রের প্রবাসীতে ছাপিব মনে করিয়াছিলাম। কিন্তু বৰ্ত্তমান সংখ্যাতেষ্ট উহা অধিকতর সময়োচিত হইবে মনে করিয়া এখানেষ্ট দিতেছি । উইন্টারনিট্‌জ এমন অনেক মহাপুরুষ আছেন, র্যাহাদের জীবন বাহিরের ঘটনা দিয়া সম্পূর্ণ জানা যায় না। অধ্যাপক উইনটারনিটজ, (Winternitz) ছিলেন এইরূপ মানুষ । ভারতের প্রতি এমন খাটি ও গভীর অগুরাগ ও সঙ্গে সঙ্গে ভারতী শাস্ত্রে ও বিদ্যায় এমন প্রগাঢ় পাণ্ডিত্য দেখা যায় না । ১৮৬৩ খ্ৰীষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে অষ্ট্রিয়ার নিম্ন প্রদেশে র্তাহার জন্ম। ১৮৮০ খ্ৰীষ্টাব্দে অর্থাৎ বোল কি সতর বৎসর বয়সে তিনি ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। দর্শনশাস্ত্র ও ভাষাবিজ্ঞানই ছিল তাহার মূখ্য সাধনার বিষয়। তাহার পর বৎসরে, অর্থাৎ ১৮৮১ খ্ৰীষ্টাব্দে, অধ্যাপক বুলরের সহিত তাহার পরিচয় ঘটিল। তখন হইতে তিনি নৃতত্ত্বের প্রতি আকৃষ্ট হইলেন। ১৮৮৫ খ্ৰীষ্টাবে, অর্থাৎ ২২ বৎসর বয়সে, তিনি ডক্টর উপাধি লাভ করিলেন। জ্ঞানক্ষেত্রে তাহার প্রথম উপহার হইল আপস্তৰীয় গৃহস্থত্র। এই গ্রন্থখানি সম্পাদনে তাহার অসামান্ত প্রতিভার প্রথম পরিচয় পাওয়া গেল। এই সময় অধ্যাপক ম্যাক্ষামূলরের বিখ্যাত ঋগ্বেদ গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত করিবার প্রয়োজন হয়। তাই তিনি এক জন যোগ্য সহকৰ্ম্মী খুঁজিতেছিলেন। আপস্তৰীয় গৃদ্ধস্বত্র গ্রন্থখানির সম্পাদনপ্রণালী দেখিয় তিনি যুবক উটনটারনিটজকেই তাহার সহকৰ্ম্মীরূপে মনোনীত করিলেন।