পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হিন্দু ভাবের মধ্যে যে কোথাও মর্শগত বিরোধ নাই, ইং তাহার কাছে অত্যন্ত সহজ হইয়া দেখা দিয়াছিল। এখানে আসিয়া তিনি তন্ত্রশান্ত্র, যোগশাস্ত্র ও যোগবাসিঠাদি গ্রন্থের নিগুঢ় পরিচয় পাইলেন এবং গভীর ভাবে তাহার মধ্যে প্রবেশ করিবার সাধনায় প্রবৃত্ত হইলেন। সাধারণতঃ বিদেশীর পক্ষে এই সাধনা সহজ নয়, কিন্তু তাহার মহুত্বের কাছে সব বাধাই পরাভূত হইল । ভারতের সবটা পরিচয় যে গ্রন্থের ও শাস্ত্রের মধ্যেই নিবদ্ধ নয়, গ্রন্থের বাহিরেও ভারতের জীবনে ও সাধনায় তাহার যে আরও কিছু পরিচয় থাকিতে পারে, এই কথা বড় বড় পণ্ডিতদের ধারণাতেও সহজে আসে না। উইন্‌টারনিটুজ, সারাটা জীবন কাটাইলেন শাস্ত্র আলোচনা করিয়া ও পুথিপত্র ঘাটিয়া। তাহার কাছে এই সত্যটি ধরা পড়িল কেমন করিয়fতাহা বুঝা কঠিন। দেখিয়াছি, তিনি ভারতীয় কলাশাস্ত্রের সম্পাদিত কোন গ্রন্থ দেখিতে প্রবৃত্ত হইয় গ্রন্থকৰ্ত্তাকে প্রশ্ন করিতেন, “দেশবাসীর জীবনের মধ্যে এই সব কলার ধে রূপটি আছে তাহার সহিত তুলনা করিয়া গ্রন্থগত সব বস্তু কেন সত্যভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয় নাই। বিদেশী কোন পণ্ডিত এরূপ করিলে তাহা মার্জনীয় হইলেও ভারতীয় কোন পণ্ডিভের পক্ষে এইরূপ অসম্পূর্ণভাবে সম্পাদিত কোন গ্রন্থ স্বধীজনসমাজে উপস্থিত করা বড়ই লজ্জার কথা ।” যোগ, তন্ত্র, ভারতীয় সাধন, সস্তমত, বাউলমত, প্রভৃতি নানা বিষয়ে তাহার সঙ্গে আমার গভীর আলোচনা চলিত। সব সময়েই র্তাহার অনুরাগ ও অস্তদৃষ্টি দেখিয়া অবাক হইয় যাইতাম । এইখানে তাহার কাছে আমার একটি ঋণ স্বীকার করা সঙ্গত। তিনি গুরুর মত আমাকে একটি মহা বিপদ হইতে রক্ষা করিয়াছেন । র্তাহার সেই ঋণ আমার কখনও পরিশোধ করা অসম্ভব । কাশীতে আমার জন্ম । ভারতীয় শাস্ত্রে আমার শিক্ষাদীক্ষাও হইয়াছিল সেখানেই । কিন্তু পরে আমি তন্ত্রমত, সম্ভমত ও বাউলমত প্রভূতির সঙ্গে পরিচিত হই। কিন্তু সেই সব জিনিষ কখনও কাহারও কাছে প্রকাশ করি নাই এবং প্রকাশ করা সঙ্গতও মনে করি নাই। বরং এরূপ প্রস্তাব হইলে অভ্যস্ত সঙ্কোচ বোধ করিতাম । বিশ্বভারতীতে আচাৰ্য্যপ্রবর রবীন্দ্রনাথ বিশেষ ভাবে এই সব জিনিষ আলোচনারই ভার অামাকে দিলেন। তখন চারি দিকে অবস্থা কিছু এই সব বস্তুর অমুকুল ছিল না। এমন কি কাশীতে মাগরীর মহাপণ্ডিতগণ তখনও কবীরকে হিন্দী সাহিত্যের নবরত্বের মধ্যে স্থান দেন নাই। কাশীতে আজও এমন সব মহাপণ্ডিত আছেন যাহার কবীরকে কোন মতেই স্বীকার করেন না । বাংলা দেশের কথা এখানে না-ই উল্লেখ করিলাম। কাজেই বিশ্বভারতীতে আমার এই কাজ ছিল তখন পণ্ডিতসমাজের দৃষ্টির বাহিরে। পরলোকগত মহাপণ্ডিত আচার্ধ্য সিলভ্য লেভী যখন বিশ্বভারতীতে চীনীয় ও তিব্বতীয় শিক্ষা প্রবর্ধিত করিলেন, তখন আমিও তাঁহাতে যোগ দিলাম এবং তাহার সঙ্গে কিছু কাজও করিলাম। তিনি আমার কাজে সন্তুষ্ট হইয় এমন ভাবে উৎসাহ দিলেন যে, আমার চিত্তে একটা প্রলোভন উপস্থিত হইল। ভাবিলাম, "কেন আর পণ্ডিতবর্গের উপেক্ষিত ক্ষেত্রে নিজের জীবনটা ক্ষয় করি । পণ্ডিতবর্গের সমাদৃত পথেই তো আমি সবার দৃষ্টি ও সম্মান লাভ করিতে পারি।” মন যখন আমার এইরূপ দুৰ্ব্বলতায় টলটলায়মান, তপন আচাৰ্য্য উইন্টারনিটজ, বলিলেন, “বলেন কি ! এমন কাজও করিবেন না । ভারতের অতি গভীর পরিচয় আজও এই ক্ষেত্রে চাপ পড়িয়া আছে। যুরোপ এখনও তাহার নানা জালজঞ্জাল লইয়া ইহার উপর আসিয়া পড়িল ছড়মুড় করিয়৷ এখন হয়তো আপন পরিচয়টুকু নিশ্চিহ্ন করিয়া এই সব স্থলভ বস্তু চিরকালের জন্য অন্তহিত হইবে । এমন দুঃসময়ে শুধু আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য আপনি নিজ সাধনায় অটল আসন হইতে ভ্ৰষ্ট হইবেন না। কিছুতেই যেন আপনাকে ব্রতভ্রষ্ট না করে।” তাহার মত শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতের কাছে এরূপ শাস্ত্রবর্হিভূত ক্ষেত্রের সাধনাতে এমন উৎসাহ পাইব তাহা আশাই করি নাই। এইখানেই তাহার মহত্ত্ব। এখান হইতে দেশে গিয়াও তিনি আমাদিগকে বা বিশ্বভারতীকে কখনও বিস্তুত হন নাই। সৰ্ব্বদাই নানা ভাবে আমাদিগকে সাহায্য করিবার জন্য তিনি উৎস্বক থাকিতেন । তাহার স্বাস্থ্য যখন ভাঙিয়া আসিয়াছে, তখন তিনি রবীন্দ্রনাথের একটি জীবনী লিখিয়া তাহার অস্তরের শ্রদ্ধাটুকুর পরিচয় দিয়াছেন । শাস্ত্রজ্ঞান ও পাণ্ডিত্য ছিল তাহার অসাধারণ, কিন্তু তাহা অপেক্ষাও গভীরতর ছিল তাহার মানবপ্ৰেম । স্ত্রীর বিয়োগেই র্তাহার শরীর ভাঙিয়া পড়িতেছিল, তাহার উপর চলিল তাহার দুর্জয় সাধনা । বৃদ্ধ বয়সে এমন সাধনাক্লিষ্ট শরীরে তিনি স্ত্রীর সেবা হইতে বঞ্চিত হইয়া আরও পড়িলেন ভাঙিয়া । তাহার মধ্যে একবার একটু আশার রেখা দেখা দিল, কিন্তু অকস্মাৎ একদিন তিনি ইহলোক হইতে বিদায় গ্রহণ করিলেন। মৃন্ময় ख१५ झेड विघ्नांश् लङेषः डिनेि खद्मिजैौ ख्रन्टग्रदक्षितिब्र চিণ্ডায় সিংহাসনে শাশ্বত প্রতিষ্ঠা লাভ করিলেন । এখান হইতে কেহ কোন দিন তাহাকে বিচলিত করিতে পারিবে না। কাল ও মৃত্যুর আক্রমণের অতীত এই অমরধাম । ঐক্ষিতিমোহন সেন ।