জাভা-শুরকর্ডার রাজ স্বত্বহনন ও তার পাটরাণী বেষ্টিত হয়ে আছেন, উজ্জল স্ববর্ণময় বসনভূষিতা,—জাভার নানা কাহিনী দেয়ালে রেশমে চিত্রিত ও খচিত । রাণীর বসন-ভূষণে অলঙ্করণে প্রাচীন পদ্ধতির প্রভাব এত বেশী যে প্রাম্বানানের মন্দিরে খোদিত মূৰ্ত্তির কথাই তাকে দেখে আমাদের বার-বার মনে হচ্ছিল । বাল্যে ভ্রাতার কাছে, যৌবনে স্বামীর আশ্রয়ে চিরদিনই তিনি প্রাসাদপালিত, তার বাইরের জগতের সঙ্গে তার পরিচয় সঙ্কীর্ণ ; আমার কস্তা চীন ভারতবর্ষ প্রভৃতি বহু দেশ ভ্রমণ করে এসেছে শুনে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে রাণী বললেন, ভগবান, ANHHNO আমারও যেন পরজন্মে সে-ভাগ্য হয়—পরজন্মে আমি যেন বিদেশীর ঘরেই জন্ম নিয়ে আসি । প্রাসাদের পর্ব শেষ ক’রে আমরা ওলন্দাজ রাজপুরুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে র্তার আবাসস্থলে গেলাম। স্থানীয় প্রথানুসারে, নবোঢ় রাজকুমারীরাও তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসবেন ; আমরা তারই প্রতীক্ষায় আছি, এমন সময় উদ্যানবাটিকার সম্মুখে জনতার পদধ্বনি শোনা গেল, দীর্ঘমশালবাহী শত শত লোকের জনতা। দ্বার খুলে দেওয়া হ’ল, জাভার ছায়ানাট্যের পুতুলের মতন সজ্জিত বহু মশাল-বাহী প্রথমে প্রবেশ করল, তাদের অমুসরণ করে প্রবেশ করল বিচিত্র বেশে সজ্জিত বহু জাভানীয়, তাম্রপাত্রে শিশু বোধিতরু বহন করে। তার পর বহু শত জাভানীয় বীরকে পুরোভাগে নিয়ে এল প্রথম-রাজকতার পান্ধী, গালায় ও সোনায় বিচিত্র কাজ করা ; সেই পান্ধীতে সখিপরিবৃত রাজকন্তবসে, যেন কোন মন্দিরবেদী থেকে দেবীপ্রতিমাকে কে তুলে নিয়ে এসেছে। পান্ধী থেকে নেমে এসে কন্যা রাজ-কুলোচিত গাম্ভীৰ্য্যের সঙ্গে রাজপুরুষকে নমস্কার নিবেদন করলেন। এর পর অশ্বপৃষ্ঠে এলেন বর ও তার পিতা । বর আর এখন দীনবেশে সজ্জিত নন, বীরবেশে রাজোচিত ঐশ্বর্ঘ্যে ও সজ্জায় বধূকে নিয়ে যেতে এসেছেন। ক্রমে ক্রমে ছয় জন রাজকন্যা ও বরই এসে পৌছলেন, আর এল অশ্বারোহীর ঘল। উপস্থিত সকলকে পানীয় পরিবেষিত হবার পর বরবধূরা বিদায় নিলেন, তাদের অনুসরণ করে বিচিত্র শোভাযাত্রাও অন্তৰ্হিত হয়ে গেল ।
পাতা:প্রবাসী (ষট্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।