ফণৰ্ত্তিক বিবাহ-উৎসবের সকল অনুষ্ঠান এখনও শেষ হয় নি। উন্মুক্ত নিশীথাকাশের তলে উৎসব-অঙ্গনে সূৰ্য্যবংশীয়ের সমবেত হয়েছেন, অশ্বারোহণে বরগণ ও পান্ধীতে বধুরা এলেন। বধূর নিজ হাতে র্তাদের স্বামীদের পা ধুইয়ে দিলেন, তার পর দেব-মন্দিরের পুরোহিত সেই জল দিয়ে বরবধূর ললাটে কি মঙ্গল-চিহ্ন অঙ্কিত ক’রে দিলেন। এই অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়ে গেলে বরবধূর পুনরায় উৎসবস্থল থেকে প্রস্থান করলেন । এর পর চলল অভ্যাগতদের প্রীতিভোজনের পালা, বিচিত্র আহার্ষ্য ও নানা মধুর পানীয়ের সমাবেশে । উৎসব-অঙ্গনের এক কোণে পুনরায় গামেলান বেজে উঠল, রাত্রির কোন রহস্তকক্ষ হতে ধীরপদবিক্ষেপে রাজকুমারীরা সভাস্থলে প্রবেশ করলেন, অতীতের মুখস্বপ্নের মত—তম দেহ ঈষৎ চঞ্চল, চরণতল মাটি ছোয় কি মা-ছোয়—এমন পারিপাট্যের সঙ্গে সাজ করে এসেছেন যেন অঙ্গের গতি কোনক্রমে বাধা না পায়। মুহূর্তের জন্য সিংহাসনের সম্মুখে স্তব্ধ হয়ে থেকে আত্মনিবেদনের ভঙ্গীতে রাজাকে প্ৰণতি জ্ঞাপন করলেন, লীলায়িত তাদের প্রতি অঙ্গ, বহুকালের কলাবিদ্যা তাদের রক্তধারায় সঞ্চারিত, কত শিল্পীর সৌন্দধ্য-স্বপ্ন তাদের দেহলীলায় পুঞ্জিত, মৃদুর অতীতের শিল্পধারা তাদের ভঙ্গীতে যেন পুনজৰ্ম্ম লাভ করেছে। ক্রমশ গামেলানের বাদ্য আরও মধুর আরও মনোহর হয়ে উঠল ; পুষ্পের দল যেমন করে বিকশিত হয়ে ওঠে যেন তারই রূপ অনুকরণ করে রাজকুমারীদের মৃত্যলীলা আরম্ভ হ’ল, উন্নত তাদের দৃপ্ত শির, মধুর মুখতীতে কোন ভাব-বৈগুণ্যের চিহ্নমাত্র ধরা পড়ে ন, দীর্ঘ পদ্মভার চোখের উপর আনমিত্ত—কেবল দেহলীলায় বিরহ-মিলন-প্রেম, হৃদয়ের কত বেদন-বাসনা উদ্বেলিত। অস্থিরচিত্ত অর্জনের প্রতি রাজকুমারীর প্রণয়-নিবেদনের বালিদ্বীপে অষ্ঠ্যেষ্টিক্রিয় ; দাহাবশেষ ভস্ম দারুময় মন্দিরে বহন করিয় শোভাযাত্রাস্থে সমুদ্রে বিসৰ্জ্জুন দিতেছে অজিতকুমার মুখোপাধ্যায়-সংগৃহীত চিত্র ] আখ্যায়িকাকে অবলম্বন ক’রে এই নৃত্য রচিত—ভারতবর্ষের এমন কত পৌরাণিক কাহিনী অল্পবিস্তর রূপান্তরিত হয়ে আজও জাভায় প্রচলিত আছে। এই নৃত্যের একটিমাত্র অঙ্গভঙ্গী পৰ্য্যন্ত অনাবশুক বা অতকিত নয়, অঙ্গের একটি ভঙ্গী সহজেই অপর একটি ভঙ্গীতে মিলিয়ে যায়, দৃষ্টিকে পীড়িত করে - । ক্রমশ এই নৃত্যের শেষ হ’ল, রাজকুমারীর অন্তৰ্হিত হলেন । এবার আর একটি তরুণীর নাচের পালা—তাঁর সমস্ত অঙ্গ স্নবর্ণময় বসনে আবুত, অনাবৃত কণ্ঠদেশ ও বাহুতে মণি-মাণিক্যের ছট। এই বালিকা রাজবংশোদ্ভব নয়, নৰ্ত্তকী মাত্র, প্রেমলীলার ক্রীড়নক। তার কপোলে ঈষৎ রক্তিম ; ফুল্প রক্তাধরে নীরব প্রেমের বেদনা প্রস্ফুট। নম্রভাবে সভাস্থলে প্রবেশ করে সে রাজসিংহাসনের সামনে আঙুমি নত হয়ে পড়ল, বাদ্যধ্বনিও ক্রমশ আরও মুখর হয়ে উঠল। রাজার মস্তক-হেলনে নৃত্যের অতুমতি লাভ ক’রে নৰ্ত্তকী গাত্ৰোখান করে বিচিত্র নৃত্য আরম্ভ ক’রে দিল ; তার দেহগ্রস্থি ষে স্বভাবের কোনও বাধা মানে এমন মনে হ’ল না, এমনই বিচিত্র তার
পাতা:প্রবাসী (ষট্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।