পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খ্ৰীষ্ট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের এই ভূলোককে বেষ্টন করে আছে ভুবলোক, আকাশমণ্ডল, যার মধ্য দিয়ে আমাদের প্রাণের নিঃশ্বাসবায়ু সমীরিত হয়। ভূলোকের সঙ্গে সঙ্গে এই ভুবলোক আছে ব’লেষ্ট আমাদের পুথিবী নানা বর্ণসম্পদে গন্ধসম্পদে সঙ্গীতসম্পদে সমৃদ্ধ,—পৃথিবীর ফল শশু সবই এই ভুবলোকের দান । এক সময় পৃথিবী যখন জবপ্রায় অবস্থায় ছিল তখন তার চারদিকে বিষবাষ্প ছিল ঘন হয়ে, স্বৰ্য্যকিরণ এই আচ্ছাদন ভাল ক’রে ভেদ করতে পারত না । ভূগর্তের উত্তাপ অসংযত হয়ে জলস্থলকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল । ক্রমশ: এই তাপ শাস্ত হয়ে গেলে আকাশ নিৰ্ম্মল হয়ে এল, মেঘপুঞ্জ হ’ল ক্ষীণ, স্বৰ্যকিরণ পৃথিবীর ললাটে আশীৰ্ব্বাদটীকা পরিয়ে দেবার অবকাশ পেল । ভুবলোককে আচ্ছন্ন করেছিল যে কালিম। তা অপসারিত হ’লে পৃথিবী হ’ল স্বন্দর, জীবজন্তু হ’ল আনন্দিত। মানবলোকষ্টিও এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। মানবচিত্তের আকাশমণ্ডলকে মোহকালিম থেকে নিমুক্ত করবার জন্ত, সমাজকে শোভন বাসযোগ্য করবার জন্য, মানুষকে চলতে হয়েছে দু:খস্বীকারের কাটাপথ দিয়ে । অনেক সময় সে চেষ্টায় মানুষ ভুল করেছে, কালিমা শোধন করতে গিয়ে অনেক সময় তাকে ঘনীভূত করেছে। পৃথিবী যখন তার সৃষ্টি-উপাদানের সামঞ্জস্য পায় নি তখন কত বদ্যা, ভূকম্প, অগ্নি-উচ্ছ্বাস, বায়ুমণ্ডলে কত আবিলতা। কত স্বার্থপরতা, হিংস্রতা, লুন্ধত, দুৰ্ব্বলকে পীড়ন আজও চলছে ; আদিম কালে রিপুর অন্ধবেগের পথে শুভবুদ্ধির বাধা আরও অল্প ছিল। এই যে বিষনিঃশ্বাসে মানুষের ভুবলোক আবিল মেঘাচ্ছন্ন, এই ষে কালিমা আলোককে অবরুদ্ধ করে, তাকে নিৰ্ম্মল করবার চেষ্টায় কত সমাজতন্ত্র, ধৰ্ম্মতন্ত্র মাহুষ রচনা করেছে। যতক্ষণ এই চেষ্টা শুধু নিয়মশাসনে আবদ্ধ থাকে ততক্ষণ তা সফল হ’তে পারে না । নিয়মের বল্পায় প্রমত্ত রিপুর উচ্ছম্বলতাকে কিছু পরিমাণে দমন করতে পারে, কিন্তু তার ফল বাঙ্কিক । মাহুৰ নিয়ম মানে ভয়ে ; এই ভয়টাতে প্রেমাণ করে তার আত্মিক দুৰ্ব্বলতা। ভয়ভারা চালিত সমাজে বা সাম্রাঞ্জো মাছুষকে পশুর তুল্য অপমানিত করে। বাহিরের এই শাসনে তার মন্তব্যুত্বের অমৰ্য্যাদা । মালবলোকে এই ভয়ের শাসন আগঞ্জ ও মাছে প্রবল । মাহুষের অস্তরের বায়ুমণ্ডল মলিনতামুক্ত হয় নি বলেই তার এই অসম্মান সম্ভবপর হয়েছে। মানুষের অন্তর লোকের মোহাবরণ মুক্ত করবার জঙ্গে যুগে যুগে মহৎ প্রাণের অভু্যদয় হয়েছে । পৃথিবীর একটা অংশ আছে, যেখানে তার সোনারূপার গনি, যেখানে মাহুষের আশনবপনের আয়োঞ্চনের ক্ষেত্র ; সেই স্থল ভূমিকে আমাদের স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু সেই স্কুল মৃত্তিকাভাওরেই তো পুথিবীর মাহাত্মা-ভাণ্ডার নয় । যেখানে তার আলোক বিচ্ছুরিত, যেখানে নি:শ্বসিত তার প্রাণ, ষেপানে প্রসারিত তার মুক্তি, সেই উৰ্দ্ধলোক থেকেই প্রবাহিত হয় তার কল্যাণ, সেইখান থেকেই বিকশিত হয় তার সৌন্দৰ্য্য। মানবপ্রকৃতিতেও আছে স্থূলতা, যেখানে তার বিষয়বুদ্ধি, যেখানে তার অঙ্গন এবং সঞ্চয়, তারই প্রতি আসক্তিই যদি কোনো মূঢ়তায় সৰ্ব্বপ্রধান হয়ে ওঠে, তাহলে শাস্তি থাকে না, সমাজ বিষবাম্পে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে । সমস্ত পৃথিবী জুড়ে আজ তারই পরিচয় পাচ্ছি, আজ বিশ্বব্যাপী লুন্ধত প্রবল হয়ে উঠে মাহুযে মাহুযে হিংস্রবৃদ্ধির আগুন জালিয়ে তুলেছে । এমন দিনে স্মরণ কfর সেই মহাপুরুষদের ধারা মাছুষকে সোনীরূপার ভাণ্ডারের সদ্ধান দিতে আসেন নি, দুৰ্ব্বলের বুকের উপর দিয়ে প্রবলের ইস্পাত-বাধানো বড় রাস্ত পাকা করবার মন্ত্রণাদাতা ধারা নন,-মাচবের সবচেয়ে বড় সম্পদ যে মুক্তি, সেই মুক্তি দান করা ধাদের প্রাণপণ ব্ৰত। এমন মহাপুরুষ নিশ্চয়ই পৃথিবীতে অনেক এসেছেন, , আমরা তাদের সকলের নামও জানি না—কিন্তু নিশ্চয়ই