পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাছাড়া মণিপুরী নাচ যেন তখন তাদের নিজের विीि হয়ে উঠেছে। বলা বাহুল্য নাচের শিক্ষা কোন দিনই আমার ছিল না, রূপকারের চোখেই সমস্ত জিনিষটা মনের মধ্যে অঁাকতে হ’ল । স্থির হ’ল, আখ্যানের জন্তে নেওয়া হবে চিত্রাঙ্গদার কবিতা । কেননা, এই কবিতার সাঙ্গীতিক আবেগ নাচের সম্পূর্ণ উপযোগী। নাচের ক্লাসগুলি দেখতে গিয়ে বুঝতে পারলুম মণিপুরী ও দক্ষিণী মাচের অনেক ভঙ্গী ও তাল একটার সঙ্গে একটা জুড়ে দিলে একটি ভূমিকা অনায়াসেই তৈরি করা যায়। এখানে চিত্রাঙ্গদাকে নাচের ভযায় অভিব্যক্ত করতে হবে কাজেই সেই ভাব প্রকাশের অগুরুপ নৃত্যের ভঙ্গী ও ভালের বিশেষ বিশেষ জায়গাগুলি বাছাই ক’রে নিতে হ’ল । ধূজটিবাবু চিত্রাঙ্গধাকে বিশুদ্ধ নৃত্যনাট্য বলে স্বীকার করেছেন কিন্তু চিত্রাঙ্গদার বৈশিষ্ট্য কি ভাবে গড়ে উঠল সেটা আমাদের দিক থেকে বলতে চেষ্টা করব। প্রথমেই হ’ল গুরুদেবের সঙ্গীত যার উপর সমস্ত নৃত্যনাট্যটি প্রতিষ্ঠিত। চিত্রাঙ্গদার এই নূতন রূপ উrরই সঙ্গীতকে অবলম্বন করে বিকশিত। কবিতার চিত্রাঙ্গঙ্গা সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে বেশ পরিবর্তন করেছে মাত্র, তারই শৌর্ধ্যের নিছক রূপ জেগে উঠেছে তাল ও স্বরের বিচিত্র ছন্দে । এই নৃত্যনাট্যের মধ্যে বিবিধ তালের সমন্বয় ঘটেছে যেমন মণিপুরী কাওয়ালী, হিন্দীতে যাকে বলে কাহারবা, মণিপুরী চরিতাল যার হিন্দী নাম আড়া চৌতাল । মান্দ্রাজী নাচের থেকে এল তেওরা এবং দাদর। আর বীপতাল এসে পড়ল গুরুদেবের গানের মধ্য দিয়ে। অৰ্জ্জুনের ধ্যানভঙ্গের নাচে ভেহাই তোরাপরণ তালের কৌশল যুক্ত হয়েছে। এই তালটি শুনে হয়তো ধূর্জটিবাবুর মনে হয়ে থাকতে পারে যে, আমাদের ছাত্রীরা উত্তর-ভারতের নৃত্যকলা চর্চা করেছেন কিন্তু আমরা এই তাছটি পেয়েছি মণিপুরী নাচের মধ্য দিয়ে । মাজাজী তেণ্ডর ও দাদরা মণিপুরী খোলের বোলের সঙ্গে অল্পবিস্তর রূপান্তরিত হয়ে আমাদের কানে খাটি তেওরা ও দাদরার আমেজ লাগায়। পঞ্চম নামে আছে মণিপুরের আর একটি তাল বা রাসলীলা-নৃত্যে ব্যবহার হয়ে থাকে, যার ছন্দ আমাদের কানে কাওয়ালীর আভাস নিয়ে আসে। এই দক্ষিণী ও মণিপুরী নৃত্য যখন চিরকালীন 缅 - - --- -প্রথা অমুসরণ করে তখন দর্শকের চিত্তে কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ভালের ক্লাস্তিকর পুনরাবৃত্তি ধরা পড়ে। লোকনৃত্য মাত্রেই আছে এই পৌনঃপুনিকত। রোপে নৃত্যের বেগ খুব উচুতে চড়ে গিয়ে আবার ধীরে ধীরে নীচে নেমে এসে একটি স্থিতিতে পরিণত হয়। এই বৈচিত্রীকরণ আমাদের" সনাতন নাচের মধ্যে দেখেছি ব'লে মনে হয় না । নৃতে্যু কেবল প্রাচীনকে মেমে চললে মাটকের যোগ্য বৈচিত্র্য প্রকাশ অসাধ্য হয়ে পড়ে। কিন্তু দেখেছি এবপদী বিভিন্ন নাচকে যথোচিত কৌশলে জুড়ে দিয়ে সাজাতে পারলে মৃত্যে ভাবপ্রকাশে কোনও জড়ত থাকে মা । চিত্রাঙ্গস্থার মধ্যে অনেক দৃশ্বেই এই দুই মাচকে মিলিয়ে নেওয়া হয়েছে । উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি জায়গার উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন “শুনি ক্ষণে ক্ষণে” এই স্নানের মাচের মধ্যে মণিপুরী কাওয়ালী, চারতাল ও মান্দ্রাজ তেওরা ও দাদরা তালের মিলন ঘটেছে । এই দুষ্ট নাচের সংযোগে দেখা গেল ভাব সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে আর অবিচিত্র তালের অবসাদ কেটে গিয়ে নূতন উদ্দীপনা এনেছে। মণিপুরী নর্তকর। মুখে বী চোথে কোন ভাবের প্রকাশ করতে অভ্যস্ত নয় । তাদের মনের গতি প্রকাশ পায় তালের মধ্য দিয়ে । সব জায়গায় মণিপুরী নাচের এই বিশেষত্ব জাযরা রাখি নি। তবে কোথাও কোথাও দরকার-মতো তার অনুসরণ করা হয়েছে— যেমন চিত্রাঙ্গদ যখন মদন-দেবতার পূজার আয়োজনের জঙ্ক ফুল তোলবার আদেশ করছেন কিংবা শিকারের নাচে অৰ্জ্জুনকে দেখে তার মানসিক পরিবর্তন হওয়াতে সর্থীদের বনভূমি হ’তে বিদায় দিচ্ছেন, এই সব জায়গাগুলিতে তালের মধ্য দিয়েই ভাবের প্রকাশ হয়েছে । অথবা অর্জনের “যদি মিলে দেখা" গানে তার মুখের ভাবকে ছাড়িয়ে তাল ও স্বর বহুদূর চলে গেছে । সেখানে দর্শকের চোখে নৰ্ত্তকের মুখ দৃষ্টিপথে পড়ে না, স্বর ও তালের ছন্দ জানিয়ে দেয় যে অর্জুনের মনের মধ্যে কৰ্শ্বজগতের আহবান পৌছেছে, তিনি বেরিয়ে পড়তে চান । ভোগাবেশে অভিভূত পৌরুষ হয়েছে ক্লান্ত ও অমৃতপ্ত । এই জায়গার তাল ও স্বর দেহের রেখাবিদ্যাসের সঙ্গে মিলে এমন ভাবে ঐক্য পেয়েছিল যে মুখের ভাবের কোনও প্রয়োজন হয় নি, এই ৰে মণিকাঞ্চনযোগ এই হ’ল বৰাৰ্থ বৃত্যের জাদর্শ।