পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○5エ মিশ্রণ ঘটে নি বলে ভারতীয় আদর্শ অনুসারে সে বরাবর নিজের বিশুদ্ধতা বাচিয়ে এসেছে। সেই জঙ্গ মণিপুরী নাচে মুখের হাবভাব বা কটিদেশের কোনও প্রকার আন্দোলন নেই, অধিকন্তু তালের নাচের মধ্যে এই প্রথা অত্যন্ত দূষণীয় বলে গণ্য হয়। নৃত্য শিক্ষা দেবার সময় মণিপুরী শিক্ষক দেখেছি বিশেষভাবে এ বিষয়ে সাবধানতা গ্রহণ করেন । মণিপুরী নৃত্য যথার্থ সৌন্দর্ষ্যকেই সাধনা করে, তার মধ্যে কোনও দৈহিক স্থূল আকর্ষণের আয়োজন নেই । ভারতীয় নাচে বিদেশী প্রভাবের ধারণ আমার কাছে আরও সমর্থন পেয়েছিল যখন ইরাকের কোনও প্রসিদ্ধ নৰ্ত্তকীর নৃত্যের মধ্যে ঐ ঘাড় ও চোখের খেল দেখলুম। কিন্তু তার নৃত্যে দেহের সকল ভঙ্গীই ঐ চোখ ও ঘাড় নাড়ার কায়দার অল্পবর্তী ছিল তাই সমস্ত দেহের সঙ্গে মিলে নৃত্যের ঐ কলাকৌশলটি অসঙ্গত বলে মনে হয় নি, যদিও স্পষ্টই দেখা গেল সেখানকার নৃত্য স্কুল ইন্দ্রিয়াসক্তির আদিমত্তাকেই প্রকাশ করে । মান্তবের কল্পনারাজ্যের রহস্য ভার মধ্যে নেই । তার স্বান নৃত্যকল-জগতে খুব উচ্চে নয়। তবে আজিকের নৈপুণ্য তার মধ্যে বিশেষভাবে বৰ্ত্তমান আছে। ভারতীয় নৃত্যের মধ্যে যে ইন্দ্রিয়াতীত রসের সঙ্কেত পাওয়া যায়, সে স্থান, কাল, পাত্র সমস্তকে ছাড়িয়ে তার আসন বিছিয়েছে সৰ্ব্বজনীন রসামুভূতির মধ্যে। তাই শিবের তাওব নৃত্য দেখিয়ে একদিন সে সমস্ত দেশকে মুগ্ধ করেছিল আজও যার শক্তি কত ছবি কত মূৰ্ত্তির মধ্যে তার বিশেষত্ত্বের নিদর্শন রেখে গেছে। সেই শক্তিশালী নৃত্যের মধ্যে এই ঘাড় ও চোখের খেলা অসঙ্গত মনে হয় । তবে উত্তর-ভারতে যেখানে পারসি সঙ্গীতের মিশ্রণ ঘটেছে সেখানে কৃষ্ণলীলা বা গজলের সঙ্গে এই ভাবভজিগুলি অসঙ্গত হ’তে নাও পারে কারণ আদিরসাত্মক বিষয়ের সঙ্গে ওটা মানিয়ে যেতে পারে। বিশুদ্ধ সৌন্দৰ্ঘ্যরসের তাৎপৰ্য্য এমন স্বল্প পরিমাপনীর উপর দাড়িয়ে আছে যে তার কোনদিকে একটু স্থূলতার ভার চাপলে গতি নিম্নগামী হবে এই আশঙ্কায় অনেকগুলি প্রচলিত নৃত্যরীতিকে আমরা স্বীকার করি নি। - শাস্তিনিকেতনের নাচে বাজনার বৈচিত্র্য তেমন হয় নি তার কারণ গুরুদেবের সঙ্গীত ও স্বর বাজনার অভাব পুরিয়ে দেয় । এখানে তার স্বরের ও গানের সঙ্গে প্রাচীন নৃত্যের এক অভাবনীয় মিলন হয়েছে। এই ত্রিবেণীসজমের ধারা এক নৃতম রসস্বষ্টির পদ্ধতিকে অমুসরণ করে। এই যে সঙ্গীত ও নৃত্যের অপূৰ্ব্ব ঐক্য যেখানে কেউ কাউকে পূর্ণ প্রকাশের পথে বাধা না দিয়ে নিজের শক্তির মধ্যে সম্পূর্ণ মুক্তিলাভ করেছে, এইখানেষ্ট চিত্রাজদার আর একটি বিশেষত্ব। বাংলার নূতন চিত্রকলা যেমন ভারতের চিত্রাঙ্কনপদ্ধতির স্বর ফিরিয়ে দিয়ে চারুশিল্পজগতে নূতন প্রাণ সঞ্চার করল, বাংলার বা শাস্তিনিকেতনের নাচ সেই একই কাজ করেছে নৃত্যকল-জগতে । নৃত্যকলার প্রতি আজ ভারতের জনসাধারণের ষে আগ্ৰহ জেগেছে সে তাকিয়ে রয়েছে বাংলার দিকেই। আমাদেরই মণিপুরী শিক্ষক নানা জায়গায় নৃত্যশিক্ষা দিচ্ছেন। তার মধ্যে নবকুমার ঠাকুরের নাম উল্লেখযোগ্য মনে করি। কিন্তু এরা শুধু যে শাস্তিনিকেতনে শিক্ষক ছিলেন তা নয়, গুরুদেবের সঙ্গীতের ধারণার মধ্য দিয়ে কি ক’রে প্রাচীন নৃত্যকলা নূতন হয়ে বর্তমান যুগে স্থান পাবে সে শিক্ষা তারা এখান থেকে পেয়ে গেছেন । এই সূত্রে তাদের প্রাচীন প্রথাগত নাচ অনেক পরিবর্তন দিয়ে শাস্তিনিকেতনের ছাপ নিয়ে গুরুদেবের সঙ্গীতসহযোগে বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন আমাদের নৃত্যের রূপানীরা ধারা এই কলাকে নিজের সাধনার জিনিব মনে করেন তাদের হাতে এই নৃত্যকলার নব নব অধ্যায়ের ক্রমবিকাশের দায়িত্ব রয়েছে ভবিষ্যতের মুখ চেয়ে । OC=২