পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

אסף প্রবাসী SN98N9 নিম গাছের অন্তরালে থালার মত চাদটিকে ধীরে ডুবিয়া যাইতেও কি সেখানে দেখা যাইবে না ? দিনরাত্রির সন্ধিক্ষণে এই যে রূপদুতি মনকে ভুলাইয়া দেয় ইহাকে ছাড়িয়া জীবনের আনন্দ যে অৰ্দ্ধেক হইয়া যাইবে । সুধা ত আপনাতে আপনি সম্পূর্ণ নয়। তাহার কতখানি যে পড়িয়া থাকিবে এই স্থূলকাগু মছয়া গাছের ডালে ডালে শাদা বকের শোভায় আর এই পাহাড়ে পথের ধারে ভীমকায় কালে কালো পাথরে তাহা কে জানে ? এই পুকুরের পাড়ে পাড়ে চকুমকি কুড়াইয়া আগুন জালিয়াছে, জোড়ের ক্ষীণ জলধারায় পা ডুবাইয়া ছুটাছুটি করিয়া বেড়াইয়াছে যে স্বধা ও শিবু, কত দিনের পর দিন, তাহারা ত ঐ সকল বিগত দিনের ভিতর দিয়া এইখানেই রহিয়া গেল ; তাহদের কতটুকু যাইতে পরিবে ইহাদের ফেলিয়া ? সমস্ত নয়ানজোড় যেন আজ মান মুখে সুধার দরজায় আসিয় দাড়াইয়াছে। সজীব নিজীব সচল আচল সকলের মূপে স্বধার মনের বেদনার ছায়াই স্নানিমা আনিয়া দিয়াছে। ইহার যে স্বধার পরম আত্মীয়। কলিকাওণর সৌধমাল ও তাহার স্বসভ্য অধিবাসীরা কি নয়ানজোড়ের মত এই পল্লীবাসিনী ছোট্ট স্বধাকে আপনার বলিয়া বুকের ভিতর টানিয়া লইবে ? সুধা বলিল, “মজা ত ভারি ? ওখানকার আমরা কিছু জানি না, সবাই আমাদের পাড়াগেয়ে বলবে। তুই ভাই সাবধান, লোকের সামনে যা-ত ব'লে বসিস না। লোকে যদি শোনে যে আমিও তোর সঙ্গে ডাণ্ডাগুলি খেলি আর কোমর বেঁধে গাছে উঠি তাহলে কিন্তু শহরের মেয়ের ভয়ানক হাসবে ।” শিৰু বৃদ্ধ অঙ্গুষ্ঠ দেখাইয়া বলিল, “হাসল ত বয়েই গেল। যার ডাণ্ডাগুলি খেলতে আর গাছে উঠতে পারে না তারা ত ভারি মেয়ে, তা আবার পরকে দেখে হাসবে ।” কিন্তু মৃধা বুঝিয়াছিল যে শিবু যাহাই বলুক, তাহার এ বীরত্বটা শহরের নারীত্বের কাছে গৌরবের জিনিষ নয়। তাহাদের অতিপ্রিয় খেলাগুলি তাঁহাদের নিজেদের যতই মনোহরণ করুক, বাহিরের লোকের চোখের কাছে দাড় করাইয়া সেগুলিকে পরের হাসির ও অবজ্ঞার বাণে বিদ্ধ করিতে সে পারিবে না। স্বধা ও শিবুর ছেলেখেলার পর্ব এই নয়ানজোড়েই শেষ করিয়া যাইতে হইবে। শিবু ছেলেমানুষ, হয়ত আবার নূতন খেলায় মাতিবে, কিন্তু স্বধার শৈশব তাহার অনন্ত ঐশ্বৰ্য্য লইয়া এইখানেই পড়িয়া থাকিবে। অস্থৰ্যম্পশু কুলবধূর মত সে শৈশব নিজের পরিচিত গণ্ডীর বাহিরে অমৰ্য্যাদার ভয়ে যেন কঁাপিয়া উঠিতেছে। এই সমস্ত নয়ানজোড় জুড়িয়া দীর্ঘ দশ বৎসর ধরিয়া তাহার শৈশব ধূলি-মাটি-জলে যে স্বৰ্গ তিলে তিলে রচনা করিয়াছে তাহা যে এখানে অতলস্পর্শ শিকড় গাড়িয়া বসিয়া গিয়াছে, তাহাকে টানিয়া তোলা ত যায় না ! এই যে ঘরের জানালার ধারে সবুজ ঘাসের মাঠ এ কি শুধু মাঠ ? এ ত রত্নাকর অনন্ত জলধি, ওই জানালায় বসিয়া একটা ভাঙা ঘড়ির স্প্রিং লইয়া এই মহাসমুদ্র হইতে সুধা ও শিবু কত রাশি রাশি নীলকান্ত মণি ও পদ্মরাগ মণি তুলিয়া ঘর বোঝাই করিয়াছে। কলিকাতার কেহ কি এ-কথা বিশ্বাস করিবে ? তাহারা শুনিলে স্থধাদের পাগল গারদের পথ দেখাইয়া দিবে। কিন্তু সত্য কথা বলিতে কি, যাহাদের মনের চোখ নাই তাহারাই অপরকে পাগল ভাবে । এই চোখের দৃষ্টি স্বধাই ত হারাইয়া ফেলিবে এগান হইতে চলিয়া গেলে। সে কি আর কলিকাতায় গিয়া জানালার ধারে এই ঐশ্বৰ্য্যশালী মহাসমুদ্রকে কোনও দিন খুজিয়া পাইবে ? সুধা বলিল, “সেখানে ত আমরা আলাদা আলাদা ইস্কুলে ভৰ্ত্তি হব। তুই আর আমি একলা আর কখন গেলব ভাই ? আমাদের সব গেল নষ্ট হয়ে যাবে। অন্তদের সঙ্গে ত আর এসব খেলা হবে না । গল্পগুলো যে আমরা চাল+ চ্ছিলাম তার কি হবে ? বিক্রম চন্দ্রেশ্বর সবাইকার কথা ত একেবারে শেষ ক'রে দিতে হবে ? এখনও ওদের কত গল্প বাকি, ওরা ত মোটে বুড়ো হতে পেল না, আগেই সব ফুরিয়ে যাবে ?” বেপরোয় ভাবে শিবু বলিল, “তাতে কি ? তেমন ক’রে শেষ করব না। যত ভাল ভাল জিনিষ আছে, সোনার বাড়ী, রূপৌর ঝরণা, শ্বেত হস্তী, গজমোতি, সব ওরা রোজ পেতে লাগল, এই রকম ক’রে শেষ করব ।” ক্ষুঞ্জ স্বরে মৃধা বলিল, “তাহলেও আমরা ত ওদের ভুলে যাব ! আমরা ত ওদের আর বড় করব না, সাজাব না, কিছু না ।”