পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৃক্ষশাখা অবলম্বনে ঝুলিতে ঝুলিতে ছিচকেবাছুড় অগ্রসর হইতেছে পতঙ্গভুকু বাছুড়ের সন্ধান পাওয়া গিয়াছে। এতদ্ব্যতীত “নকটিলিওনিডি" গোষ্ঠীভুক্ত মংস্তভোজী এবং “ভ্যাম্পায়ার" নামক রক্তশোষক বাহুড়ও পৃথিবীর কোন কোন অংশে আধিপত্য বিস্তার করিয়াছে। জাভার “কেলং” বাছড়ই বোধ হয় আকারে সর্বাপেক্ষা বুঙ্গৎ হষ্টয়া থাকে। ইহাদের শরীর প্রায় এক ফুট লম্বা । ডানার এক প্রাস্ত হইতে অপর প্রাস্ত পৰ্য্যস্ত পাচ ফুটেরও বেশী লম্বা হইয়া থাকে। বাহুড়েরা একধারে একটি বা দুইটি বাচ্চা প্রসব করে । বাচ্চার মায়ের বুক আঁকড়াইয়া থাকে। স্ত্রী-বাছড় বাচ্চ। করিয়াই উড়িয় বেড়ায় । ইহার বাস ৰাধে না মাথা নীচু করিয়া, পায়ের নখের সাহায্যে গাছের ডালে বলিয়া সারাদিন কাটাষ্টয় দেয় এবং সুর্য্যাস্তের পর আঙ্গারাখেযণে বহির্গত হয় । দিনেয় বেলায় বিশ্রামকালে প্রায়ষ্ট চেচামেচি করিয়া বাসস্থান মুখরিত করিয়া তোলে। বীজুড়ের মাংস নাকি খরগোসের মাংসেয় মত খাইতে মুম্বাদু। অধুনালুপ্ত প্রাগৈতিহাসিক যুগের "টেরোডেকৃটিল” নামক অদ্ভূত প্রাণীর সঙ্গে বাছড়ের যথেষ্ট সাদৃশ্য দেখিতে পাওয়৷ যায়। কিন্তু তথাপি বাহুড় ও ‘টেরোডেকৃটিল" এক শ্রেণীর প্রাণী নছে। বাহুড়ের দৈহিক গঠন হইতে ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, ইহারা “মারসুপিয়েল” বা প্রাগৈতিহাসিক কাঠবিড়ালীর অনুরূপ কোন জন্তু হইতে উদ্ভূত হইয়া ক্রমবিকাশের সুস্থা খর্তমান অবস্থায় পৌছিয়াছে। টেরোডেকৃটিল প্রকৃতিদত্ত বাদুড় অপেক্ষা অধিকতর বলীয়ান ছিল এবং আকুতিতেও তাহার বাদুড় অপেক্ষ অনেক বড়। তথাপি জীবনসংগ্রামে তাঁতার হারিয়া গেল, অথচ শত শত বিভিন্ন জাতীয় বাহুড় আজও পৃথিবীর বুকে অবাধে বিচরণ করিতেছে। তবে আত্মরক্ষার্থ ইহাদের অনেকেরই নানাবিধ কৌশল ও লুকোচুরির আশ্রয় লইতে হইয়াছে এই প্রসঙ্গে আমাদের দেশীয় ছিচকে-বাদুড় বা কল-বাদুড় নামে এক প্রকার মধ্যমাকৃতি বাড়ড়ের জীবনযাত্র ও আত্মরক্ষার কৌশলের কথা বিবৃত করিতেছি। আমাদের দেশে ছোট ও বড় কয়েক প্রকারের বাদুড় দেখিতে পাওয়া যায়। বড় বাছুড়ের বংশপরম্পরায় একই স্থানে প্রকাশুভাৰে বুকে । ছি চকে-বাহুড় উড়িয়া আসিয়৷ এইমাত্র একটা ঝোপের উপর পড়িয়াছে। এখন পা দিয়া ডাল ধরিয়া মাথা নীচু করিয়া বিশ্রাম করিতেছে দলবদ্ধাবস্থায় উচু গাছের ডালে বাস করিয়া থাকে। কিন্তু ছিচকেবাদুড়ের এক স্থানে দলবদ্ধ ভাবে বাস করে না । এক স্থানে একটি বা সময়ে সময়ে দুইটির অধিক ছিচকে-বাদুড় দেখিতে পাওয়া বায় না । ইঙ্গার প্রায়ই কলা গাছে অথবা ছোট ছোট নারিকেল সুপারি গাছের পাতার গায়ে বুলিয়া দিনের বেলায় বিশ্রাম উপভোগ করে। সময় সময় পরিত্যক্ত নিজন প্রকোঠেও আশ্রয় গ্রহণ করিয়া থাকে । ইতাদের দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি অত্যন্ত প্রখর, সৰ্ব্বদাই যেন সজাগ একটু শব্দ পাঙ্গলেক্ট কাম খাড় করিয়া, চোখ ঘুরাইয়া চতুৰ্দ্ধিকের অবস্থা পৰ্য্যবেক্ষণ করে, ইঙ্গর রাত্রিচর বলিয়। অনেকের ধারণ আছে যে দিনের বলায় ষ্টকারী চোখে দেখিতে পায় না । কিন্তু সে ধারণ ভুল । বাদুড় পুষিয়া পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছি—দিনের বেলায় ইহাদের দুষ্টিশক্তির বিশেষ কোন তারতম্য লক্ষিত হয় না। কানের মধ্যে পাশাপাশি ভারে সমস্তিরাল কতকগুলি ভাজ দেখিতে পাওয়া যায়, বোধ হয় ইহা শব্দান্নুভূতির তীক্ষত বদ্ধনের সহায়তা করিয়া থাকে। এক প্রাস্তু হইতে অপর প্রান্ত পৰ্য্যস্ত ছিচকে-বাছুড়ের ডান প্রায়ই এক ফুট হষ্টতে দেড় ফুটের বেশী লম্ব হয় না । গায়ের লোম গাঢ় ধূসর বর্ণের ; কিন্তু ডানার পাতল পর্দার রং কালে । বিশ্রাম করিবার সময় গাছের শুষ্ক অথবা পচা পাতার মধ্যে ডানায় সৰ্ব্বশরীর আবৃত করিয়া মুখ গুজিয়া বুলিয়া থাকে ; কিন্তু চোখ কান অনাবৃত রাখে । হঠাৎ দেখিলে এই অবস্থায় ইঙ্গাদিগকে শুষ্ক পত্র বা ঐক্লপ কোন আবর্জন বলিয়াই প্রতীয়মান হয় । এই ভাবে আত্মগোপন করিয় সহজেই ইহার শক্রর দৃষ্টি এড়াইতে সমর্থ হয়। কিন্তু অতিরিক্ত সাবধানতার ফলে সময় সময় ইহার শত্রুর কাছে ধরা পড়িয়া যায় দলবদ্ধ ভাবে উচু গাছে অবস্থান করে বলিয়াই হউক অথবা সৰ্ব্বদ চেঁচামেচি করিয়া বিশ্বম্ভালাপে মসৃণ্ডল থাকে বলিয়াই হউক, বা বাহুড়ের আত্মগোপনের জন্য কোন ছলচাতুরী অবলম্বন করে নী কিন্তু ছিচকে-বাছুড়ের সাধারণতঃ নীচু গাছে শক্রর নাগাঙ্গে সীমানার মধ্যে বাস করে বলিয়াই বোধ হয় প্রকৃতিদত্ত আত্মগোপ