কীৰ্ত্তিক উপায় নাই। সে দুঃখ মানিয়া লইতেই হইবে। শিৰু তাহাতে দমিবে না । এই বিক্রম ও চন্দ্রেখর স্বধী ও শিবুর মানস পুত্র। ঐ স্ববিস্তীর্ণ ধানক্ষেতের ধারে আমগাছতলায় কালে পাথরের ঢিবির উপর তাহাদের দুই জনের প্রকাও দুই রাজ্য। চোপে দেখিতে ঐ পাথরের ঢিবিটা মাত্র, কিন্তু সে রাজ্য এত বড় যে মাপিয়া শেষ করা যায় না। ধনে ধান্যে ঐশ্বর্ষ্যে রাজ্য উছলিয়া পড়িতেছে। বিক্রম ও চন্দ্ৰেশ্বরের অঙ্গরার মত স্বন্দরী রাণী, অশোকবনের চেড়ীর মত ভয়ঙ্করী দাসী, ভীমের মত বলশালী সেনাপতি, অর্জনের মত রূপগুণবান পুত্র, কিছুরই অভাব নাই। স্বধা ও শিৰু এই দুই রাজ্যের বিধাতা। তাহাদের আশীৰ্ব্বাদে বিক্রম ও চক্ৰেশ্বরের ধন সম্পদ অর্থ সামর্থ্য সকলই ন-চাহিতে ঝরিয়া পড়ে। কিন্তু তাহাদের জীবনধারা মহাভারতের যুগেই আবদ্ধ নয়। স্থধ ও শিবু অনন্তস্নেহে আধুনিক যুগে বিচরণ করিবার বরও তাঁহাদের দিয়াছে। তাহারা ইচ্ছা করিলে পুষ্পক রথে চড়ে, ইচ্ছা করিলে মোটর ইশকাইতেও পারে। অতীত ও বর্তমান পৃথিবীর কোনও স্বখ হইতে ইহাদের বঞ্চিত হইতে স্থধারী দেয় নাই। ‘অসম্ভব বলিয়া কথা তাহদের জীবনে নাই । কেবল একটি জিনিষ স্থধা ও শিবু তাহীদের দিতে চায় না, নয়ানজোড়ের এই বাস্তব মানুষগুলার কাছে স্বধারা উহাদের বাহির হইতে দেয় না। উহারা দুই ভাইবোন ছাড়া পাছে তৃতীয় কোনও ব্যক্তি বিক্রমনের কথা শুনিয়াও ফেলে, ই বিক্রমশ্চশ্রেশ্বরের রাজ্যের ভাষা বাংলা ভাষা নয়। সে ভাষা স্থধারাই গড়িয়া দিয়াছে। কত সময় আর পাচ দনের কাছে এই ভাষা বলিয়া ফেলিয়া সুধীর অপ্রস্তুত হইয়া ড়িয়াছে। কিন্তু রক্ষা যে, কি কথা হইতেছে বাহিরের চিজন তাঁহা কিছুই বুঝিতে পারে নাই। স্থধারা চুপি চুপি এ-রাজ্যে প্রবেশ করে, চুপি চুপি ফিরিয়া আসে, কেহ জানিতে পারে না। কাব্যে সঙ্গীতে রূপে সে দেশ ঝলমল, করিতেছে। কিন্তু নয়ানজোড়ের এই নিস্তৃত আমতলা ছাড়িয়া কলিকাতার কলকোলাহলের ভিতর এরাজ্য কি আর প্রতিষ্ঠিত হইতে পাইবে ? বিক্রম ও চক্ৰেশ্বর খেয়াল হইলে আধুনিকত করে বটে ; কিন্তু কলিকাতার ভীড়ের ভিতর উগ্র সভ্যতার মাঝখানে তাহারা অলখ-ৰেrারণ १७ নূতন রাজ্য গড়িতে চাহিবে না। এই বিপুল বৈভব সমেত তাঁহাদের রাজ্য দুটি এইখানেই ফেলিয়া স্বধাদের চলিয়া ধাইতে হইবে মা বাবার সঙ্গে সঙ্গে। এই পাড়াগায়ে স্বধা শিবুদের অনাদরে অষত্ত্বে তাহার একদিন নিঃশেষে ইহলোক হইতে ঝরিয়া যাইবে। তাহাদের ভাগ্যবিধাতারাও সেদিন তাহাদের জন্ত আর শোক করিতে আসিবে না । স্বধী মনে করিয়াছিল, মাঠে ঘাটে শিবুর সঙ্গে খেলা করিয়৷ সে তাহার নবজাগ্রত বিরহব্যথাকে ভুলিয়া থাকিবে । কিন্তু তাহা হইল না, খেলার ভিতরেও সকল কথা ঐ ব্যথার স্থানটিকেই ছুইয়া যায়। ইহার চেয়ে বাড়ী যাওয়াই ভাল । মনটা ত কোথায়ও স্থির হইতেছে না। অমুস্থতার মাঝখানেও মা’র কাজকৰ্ম্ম ব্যবহারের ভিতর যে একটা আচঞ্চল শাস্তির শ্ৰী আছে তাঁহার কাছে বসিলেও অষ্ঠের মন শান্ত হয়। ছোট থোকা এতক্ষণ ঘুমাইয় পড়িয়াছে, মা নিশ্চয় বসুমতী প্রকাশিত র্তাহার ছেড়া বঙ্কিম গ্রন্থাবলীটি লইয়া মেঝের উপর পা ছড়াইয় পড়িতে বসিয়াছেন। দেবীচৌধুরাণী ও বিষবৃক্ষের গল্প তের-চৌদবার তাহার পড়া হইয়া গিয়াছে, স্থধারাই ত তিন-চার বার শুনিয়াছে, তবু এখনও প্রত্যহু দুপুরে সেই বইখান লইয়া বসিতে মা’র অতৃপ্তি নাই। কাছে বসিলেই মা “ও পি, পি, প্রফুল্ল পোড়ার মুণী, কিংবা দিবা ও নিশার গল্প পড়িয়া শুনাইতে রাজি। পিসিমা মেঝের উপরেই আঁচল বিছাইয়। শুধু মাখাটুকু তাহার উপর রাখিয়া গল্প শুনিতে শুনিতে কখন ঘুমাইয়৷ পড়িয়াছেন। সারাদিনের পরিশ্রমের পর একবার গুইলে তাহার চোখে যুম নামিতে দেরী হয় না। § যাহার আয়োজন চলিতেছে। চক্সকান্ত কলিকাতায় আর একটু বেশী মাহিনায় একটা ইস্কুলেরই কাজ পাইয়াছেন । ভাষ্ট নয়ানজোড়ের ঘরবাড়ী হৈমবর্তী ও মৃগাঙ্কর ভরসায় রাগিয়া দিয়া তাহার কলিকাতা যাওয়াষ্ট স্থির করিয়াছেন। মহামায় বলিয়াছিলেন, “দেখ, ঠাকুরবিও বলছেন, আমারও মনে হয় এই সামান্ত আয়ে কলকাতায় গিয়ে আমাদের টানাটানিতে পড়তে হবে, এখানেও দেখাগুনোর
পাতা:প্রবাসী (ষট্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।