૧છે অভাবে আয় কমে যাবে। তার চেয়ে এখানেই একরকম ক'রে চলে যেত। নাইবা গেলাম * চন্দ্রকান্ত বলিলেন, “এমনিতেই তোমার চিকিৎসার দু-আড়াই বছর দেরী হয়ে গেল, আর যদি দেরী করি তাহলে আমার নিজের উপর সমস্ত শ্রদ্ধ চলে যাবে। খানিকটা আলস্ত আর খানিকটা অভাবে যেটা হয়েছে তার প্রতিকার যেটুকু হাতে আছে না করে ছাড়তে আমি পারব না । অনিশ্চিত মন্দ আশঙ্কায় নিশ্চিত ভাল চেষ্টাটা ছাড়া উচিত নয়।” মহামায়া কিছু বলিলেন না, রোগ সারিতেছে না বলিয়া সৰ্ব্বপ্রথমে তিনিই অসন্তোষ প্রকাশ করিয়াছিলেন, এই জন্য মনে মনে নিজেকে স্বামীর ও সংসারের নিকট অপরাধী ভাবিয়া নীরবেই রহিলেন । পুরাতন ঝি চাকরদের মধ্যেও সাড়া পড়িয়া গিয়াছে। করুণা ঝি মহামায়ার দুই ছেলেমেয়েকেই মানুষ করিয়াছিল, খোকারও অনেক কাজ সে করে । তবে মহামায়ার শরীর অস্বস্থ হওয়াতে সংসারের কাজে ৪ তাহার সেবায় অনেক সময় তাহার চলিয়া যায়। এখন তাহাকে ঠিক ছেলের-ঝি আর বলা চলে না । স্থধাকে সে সকলের চেয়ে বেশী ভালবাসিত। সুধাকে ছাড়িয়া সে থাকিবে কেমন করিয়া ? কলিকাতা যাত্রার কথা শুনিয়াই সে বলিল, “স্বধ রাণী, রাঙাবর এসে তোমায় পান্ধী ক’রে নিয়ে চলে যাবে আর ইছরমাটিতে তোমারপ-দুখানির ছাপ নিয়ে আমরা চোখের জল ফেলব, এই কথা ভেবে আমার বুকটা দুরু দুরু করত, কে জানত তার আগেই তুমি এমন ক'রে চ'লে ধাবে ! এত রতনজোড় নয় ষে গরুরগাড়ীতে যাব, তেঁতুলডাঙা নয় যে সাত কোশ হাটব। কলকাতার রাস্ত আমি জন্মে চিনি না, রেলগাড়ীকে বড় ডরাই ।” শিবু পিছন হইতে গান করিয়া উঠিল, “কলগাড়ী বাতাসে নড়ে না,” মহামায়া বলিলেন,"কলগাড়ী যাতেই নড্রক, তুই অকারণে মানুষকে জালাতন করিস নে।” শিবু বলিল, “করুণা দিদি এইবার রোজ প্রাণভরে মুগাঙ্ক দাদার চরণামৃত খেতে পারবে, আর ত বাবা তাকে বকতে আসবেন না।” প্রবাসী SNరీతీరి করুণ বলিল, “পৈতে হ’লে তোমারই চন্নাস্মিত খেতাম দাদা, তা ত তুমি হতে দিলে না। এত বড় বাৰ্ত্তন-সন্তান কোথায় পেতাম ?” শিবু বলিল, “তুমি না আমার ভিক্ষে-মা হবে বলেছিলে, তবে আবার চন্নাস্মিত খেতে কি ক’রে ছেলের পায়ের ?” করুণা বলিল, “আমি গরীব তাতির মেয়ে, আমার কি ধনদৌলত আছে দাদা, যে অমন সাধ পূর্ণ করব ?” মহামায়া বলিলেন, “সাধ ত একদিকে পূরেক্টছে, ছেলেকে মা বলতে পারলে না, কিন্তু মেয়ে ত আমার তোমায় মা’র বাড়া করে তুলেছে।” শিবু বলিল, “দিদি যা বোকা, এখনও থেকে থেকে করুণাদিদিকে মা ব’লে বসে।” বাস্তবিকই স্বধার করুণা সম্বন্ধে একটা দুৰ্ব্বলতা ছিল । এই খৰ্ব্বাকৃতি শীর্ণকায়৷ তাম্রবর্ণ করুণার স্বল্পবাস মূৰ্ত্তি স্থধার আজন্ম-পরিচিত বলিয়৷ কিনা জানি না মাতৃমূর্তিরই একটি ছায়া বলিয়া মনে হইত। শিশুকালে করুণার হাতে ছাড়া আর কাহারও হাতে সে খাইতে চাহিত না । একদিনের জন্য করুণ বাড়ী যাইতে চাহিলে মহামায়ার ভাবন হইত, ‘মেয়েটা বুঝি না খেয়েই মারা যাবে।" হৈমবতীর হাতের ভাতের গ্রাস ঠেলিয়া দিলে তিনি রাগিয়৷ বলিতেন, “মেয়ের তোমার পছন্দকে বলিহারি বলি বউ, মা রইল পিসি রইল পড়ে, ঐ রূপসী তাতিবুড়ীর হাতে ছাড়া তার মুখে অন্ন রোচে না ।” শুনিয়া মহামায়া বলিতেন, “কি করব, একেই ওটার খাওয়া কম, তার উপর বামনাই ফলিয়ে ওকে ত গুকিয়ে রাখতে পারি না। ওর ষ রোচে তাই থাকৃ গে।" হৈমবতী বলিলেন, “রুচি না আরও কিছু! সব ওই র্তাতিমাগীর বজাতি। চাকরি বজায় রাখবার জন্তে মেয়েটাকে বশ করেছে। অামি হ’লে দু-দিন উপোষ দিয়েও ও বদরোগ ছাড়াতাম।” এই তর্কাতর্কি শুনিয়া মৃধা নিজের নিৰ্ব্ব দ্বিতায় লজ্জা পাইত, কিন্তু তবু করুণার মায়া কাটাইতে পারিত না। বেচার করুণা তাহার মুখে মা ডাক শুনিতে ভালবাসিত বুঝিয়াই স্কুধা বড় হইয়াও কত সময় লুকাইয়া তাহাকে "মা"
পাতা:প্রবাসী (ষট্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।