পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রশন, বিজ্ঞান, ইতিহাস, জীবনী, তথ্য, বৃত্তাজ, বিচার, মালোচনা—যখন সাহিত্যিক রূপ পায় তখনই মনন-সাহিত্যের কৃষ্টি হয় । Q সভ্যতার ইতিহাসে এ সাহিত্যের আবির্ভাব রসসাহিত্যের অনেক পরে । কারণ জৈবিক দাসৰ থেকে মানুষের মন মুক্তি পেয়েছে হৃদয়ের অনেক পরে। আর রসসাহিত্যের তুলনায় এই সকল মনন-সাহিত্যের স্বষ্টি অচিরস্থায়ী। ঐতিহাসিক কালের মধ্যে মানুষের হৃদয়বৃত্তি কি মনন-বৃত্তি কারও মূল গড়নের কোনও পরিবর্তন হয় নি। সেই জন্য হাজার বছর পূৰ্ব্বেকার রসশিল্পীর স্বটি আমাদের রসাম্বভূতিকে আজও নিবিড় আনন্দ দেয়, অনেকটা যেমন শিল্পীর সমসাময়িক লোকদের দিত। কিন্তু মনন-বৃত্তি তার অশ্রান্ত কর্মের ফলে নিজের পূর্ব কৰ্ম্মফল বিনাশ ও পরিবর্তন করে চলে। ষে তথ্য ও জ্ঞান ও জগতের কল্পিত রূপ লোকের মনে কাল ছিল, আজ তা বজায় থাকে না, এবং যে-সাহিত্যের এরই উপর প্রতিষ্ঠা পরবর্তী যুগে তার বেশীর ভাগের মূল্য হয় কেবল ঐতিহাসিক, অর্থাৎ সাহিত্য নয় সাহিত্যের উপাদান। প্রাচীন যুগের অতি শ্রেষ্ঠ মনন-সাহিত্যিকদের রচনারও পরবর্তী কালে প্রধান আকর্ষণ হয় তাদের মূল বক্তব্য নয়, তাদের লেখার সাহিত্যিক গড়ন, এবং বিষয়বস্তু যাই হোক স্বল্প বুদ্ধির অতি নিপুণ প্রয়োগ কৌশলের আনন্দ। প্লেটো কি শঙ্করের লেখার সঙ্গে সফোক্লিস কি কালিদাসের কাব্যের আধুনিক মনের যোগাযোগ তুলনা করলেই এ-কথা বোঝা যায়। কিন্তু হোক অচিরস্থায়ী, এই সাহিত্য মানুষের মুক্ত সচল মনের প্রকাশ, ষে মন অক্সলোকের উদ্ধে উঠে সভ্যতার স্বষ্টি করেছে। প্রতি কালের মানুষ তার নিজের বিশ্বকে প্রশ্ন করবে, পরীক্ষা করবে—তার চিন্তা ও অনুভূতি সাহিত্যে প্রকাশ করবে। সে বিশ্বের রূপ যখন মনের চোখে বদল হবে তখন নূতন প্রশ্ন, নূতন পরীক্ষা আরম্ভ হবে, নূতন সাহিত্য জন্ম নেবে। তাতে পুরাতন সাহিত্যের সাহিত্য হিসাবে যদি মৃত্যুও হয় তৰু সে নিফল নয়। মনন-প্রবাহকে সচল রাখার ৰে কাজ তা সে ক’রেই মরেছে। জীবের স্বত্যু হয়, জীবনের ধারা চলতে থাকে মরণশীল জীব-পরম্পরাকেই चiध्वंघ ब्र*ब्र । هوجصحسج ه وج এই মনন-সাহিত্যের দুৰ্ব্বলতা বর্তমান বাংলা সাহিত্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের কারণ। ইংরেজী ও ইউরোপীয় সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয়ের প্রেরণায় আধুনিক বাংলায় ৰে রস-সাহিত্যের স্বটি হয়েছে তার তুলনায় আমাদের মননসাহিত্য গুণে ও পরিমাণে হীন ও তুচ্ছ। সাহিত্যের এক্ষেত্রেও অবশু অভিযোগের ফলে প্রতিভার উদয় হয় না, কিন্তু প্রতিভার চেয়ে নীচু শক্তিও অনেক মূল্যবান দান এসাহিত্যে দিতে পারে যেমন পশ্চিমের সভ্য দেশগুলিতে দিচ্ছে ; এবং চেষ্টা ও একাগ্রতায় এ-শক্তিকে অধিকতর ফলপ্রস্থ করা সম্ভব। এ-কথা বিশ্বাস করা কঠিন ষে ইংরেজ যুগের বাঙালী জাতির মধ্যে রসস্থটির শ্রেষ্ঠ ক্ষমতার চেয়ে মনন-সাহিত্য রচনার মধ্যবিত্ত শক্তিরও পরিমাণ কম। আমাদের রসসাহিত্যের তুলনায় মননসাহিত্যের অভাব একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার, এবং এর মূলে রয়েছে চিন্তা ও মননের জগতে আমাদের অস্বাভাবিক অবস্থা ৷ উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমে যখন ইংরেজী ভাষার মারফৎ ইংরেজী ও ইউরোপীয় সাহিত্যের সঙ্গে বাঙালীর পরিচয় হ’ল তখন বাংলা ভাষায় রসসাহিত্যের অভাব ছিল না, কিন্তু চিন্তা ও বিচারের সাহিত্য আলোচনা হ’ত সংস্কৃত ভাষায় ভট্টাচার্ধ্যের টোলে, নয় আরবী ও পাশিতে মৌলবীর মাত্রাসায়। মাতৃভাষাকে অগ্রাঙ্ক করে বিদেশী ভাষাকেই রস-সম্ভোগের ও রসস্তুটির বাহন করার চেষ্টার ব্যর্থতা অল্প দিনেই ধরা পড়ল। কারণ ও ব্যাপারটা ছিল অসম্ভব রকম অস্বাভাবিক। ফলে বাংলা কাব্যসাহিত্যের পুরান খাদেই নূতন জোয়ার এসেছে। বাঙালী কথাশিল্পীদের প্রতিভা ইউরোপীয় সাহিত্যের আদর্শে বাংলার উপন্যাস ও গল্প-সাহিত্য গড়ে তুলেছে। ইউরোপের মনন-সাহিত্য প্রথম ইংরেজ যুগের বাঙালী মনীষীদের কম আকৃষ্ট করে নি, এবং সংস্কৃত-আরবীর বন্ধন কাটিয়ে বাংলা ভাষায় এই সাহিত্য গড়ে তোলার প্রেরণা ষে তারা পেয়েছিলেন রামমোহন রায়ের বাংলা গ্রন্থাবলী তার সাক্ষী। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সময় পৰ্য্যন্তও এ-জাশা অনেকটা ছিল যে, ইউরোপের জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন-ইতিহাস