পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

కొన్ని প্রবাসী SN93లి ঝুড়িতে বাসনকেশন বসাইয়া কাপড়ে বাধ হইল । মহামায়ার টিনের ট্রাঙ্কে সুধা ও শিবুর সামান্ত কাপড়চোপড় কাচিয়৷ কুচিয়া তোলা হইল। শহুরে দেশে কাপড়চোপড় যে বেশী লাগে এবিষয়ে মা ও পিসিমার গল্প শুনিয়াই স্থধ কিছু জ্ঞান সংগ্ৰহ করিয়াছিল। তাহার আটপৌরে চারখানা শাড়ীর উপর আর মাত্ৰ দুখানা ভুরে ও দুখান৷ নীলাম্বরী শাড়ী। একবার পিসিমা সঙ্গ করিয়া একথানা গুলবাহার শাড়ী কিনিয়া দিয়াছিলেন, সেইখানাই একমাত্র জমকালো শাড়ী। দাদামহাশয় তিন বৎসর আগে যে চন্দ্রকোণার চৌখুপী শাড়ী দিয়াছিলেন সেখান স্বধার ছোট হইয়া গিয়াছে। এই পাঁচখান তোলা কাপড়ে শহরে স্বধার মান থাকিবে কিনা সে ঠিক বুঝিতে পারিতেছিল না। তবে মা’র চেয়ে ত স্থধার মান বেশী নয়। মাও ত পাচছয়খানা মাত্র ভাল কাপড় লইয় বেশ নিশ্চিন্ত মনেই চলিয়াছেন। তাতিনীর শহরে কি আর কাপড় বেচিতে আসে না ? পূজার সময় ব্যাপারীর কলিকাতাতেও নিশ্চয় যায়। তাহাদের কাছে দুই-একখান ভূরে কি চেলি মা দরকার বুঝিলে ঠিক কিনিয়া দিবেন। এ সামান্ত জিনিষ লইয়া মাথা ঘামাইবার বিশেষ প্রয়োজন নাই । হৈমবতী সধবাকালে এবং পরেও কিছুদিন কলিকাতা শহরে ছিলেন। সুধার কাপড়চোপড় গুচাইবার সময় তিনি বলিলেন, “দেখ বেী, শহরে সব ঘাগরার উপর শাড়ী বেজিয়ে পরে, তাতে আবার সেপটিপিন। তোমাদের ত ঘাগ রাও নেই, সেপ টিপিনও নেই, লোকের কাছে খেলো হবে না ত!” মহামায়া হাসিয়া বলিলেন, “দু-গজ কাপড় কিনে স্বধার জন্তে ঘাগরা করে দিলেই হবে। আমার বুড়ে বয়সে ওসবে কাজ নেই।” হৈমবতী বলিলেন, “তবে এইখানেই ক'রে দাও না। একেবারে পরে যাবে, নইলে সেখানে পরের দেখে শেখার নাম হবে। আর ঐ লোহার সেপটিপিনগুলো যেন মেয়েকে পরিও না । একটা সোনার করে দিও।” মহামায়া বলিলেন, “আমাদের ছোট বউ বলছিল যে সেখানে পার্শি মাকড়ি পরার রেওয়াজ এখন আর নেই, এখন সব বল ইয়ারিং পরে। স্থধার মাকড়ি জোড়া ভারি আছে, ভেঙে ছুল আর সেফটিপিন দুই হবে এখন।” ফু-গজ মার্কিন কাপড় কেনা হইল। কিন্তু মা ও পিসিমা দুইজনেই আধুনিক পরিচ্ছদ সম্বন্ধে প্রায় অজ্ঞ । পেটিকোটটা ঘাগরার সঙ্গে কোনখানে স্বতন্ত্র তাহা তাহাদের জানা নাই। কিন্তু ঐ সামান্ত ব্যাপারে হৈমবতী ভৗত হন না, তিনি কাপড়ের টুকরাটার দুই মুখ জুড়িয়া পাশ বালিশের খোলের মত সেলাই করিয়া একটা কাপড়ের পাড় পরাইয় কার্ধ্য সমাধা করিলেন । এই হইল স্বধার অাধুনিক সজ্জায় হাতে খড়ি। তবে আপাততঃ লোহার সেফটিপিনই পরিতে হইল, কারণ নয়ানজোড়ে তখন জাপানী গিন্টির ব্ৰোচ পাওয়া ঘাইত না । সকল আয়োজন সম্পূর্ণ হইলে মহামায়া ভয়ে ভয়ে বলিলেন, “আমাদের ত সব ব্যবস্থাই হ’ল ; কিন্তু ঠাকুরঝি এই পাড়াগায়ের দেশে ঐ ছেলেটাকে সম্বল ক'রে পড়ে থাকবেন, এইতেই যা ভাবনা ।” হৈমবতীর দপে ঘা লাগিল। তিনি যেন জলিয়৷ উঠিয়া বলিলেন, “আনন্দি বাম্নীর মেয়ে হেমি বাম্নী ভয় ডর কাউকে করে না। আমার ম! ডাকাতের মুখে জুড়ে ঠেসে দিয়েছিলেন, আমার ঠাকুম বৰ্গীর হ্যাঙ্গামের সময় সারা গায়ে একলা ছিলেন জাতুড়ের ছেলে নিয়ে। গান্থদ্ধ পালিয়ে গিয়েছিল, এক ঘটি জল দেবার লোক ছিল মা, তবু তিনি ভয় পান নি।” মা-ঠাকুরমার শৌর্য্যে হৈমবতী আপনার বর্ম গড়িতে চাহিলেও র্তাহার চোখের কোণটা হঠাৎ সজল হইয়া উঠিল । তিনি তাড়াতাড়ি মুখ ফিরাইয় আপনাকে সামলাইয়া লক্টলেন । কথা খুরাইয়া মহামায়া বলিলেন, “তোমার সাহসের কথা কি আর জানি না ভাই ? তার কথা হচ্ছে না। অর্থবিমুখের উপর ত মানুষের হাত নেই, সেই ভাবনাটাই আসল ।” হৈমবতী বলিলেন, “তোমরা নিজেদের সামলিও তাহলেই আমার অনেক উপকার হবে। আর ভাবনার কোনও কারণ নেই।” মহামায় হৈমবতীর দুর্জয় অভিমানের পূর্বাভাস বুঝিতে পারিয়াছিলেন, কিন্তু ননদের কাছে ভাবপ্রবণতা প্রকাশ