পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চৈত্র স্বাধীনতাস্থত্রে না গাখতে পারি, আমাদের সমগ্র চিত্তত্ত্বে একমাত্র সেই চিন্তায় পূর্ণ করে না তুলতে পারি i আমাদের স্বল্পাবশিষ্ট প্রাণশক্তি ক্ষুদ্রতর মঙ্গল কাজের মধ্যে নিশ্চিস্তে হারিয়ে যাবে—স্বাধীনতা এবং দেশের বিরাট বৃহত্তর ভবিষ্যৎ স্থদুরপরাহত হয়ে উঠবে। অমনিতেই আমাদের অলস দুঃখভৗত চিত্ত স্বাধীনতালাভ চেষ্টার দুঃখকে বরণ করবার আশঙ্কায় আড়ষ্ট । তাই সে দেশের আপাত দুঃখ মোচনের ক্ষুদ্রতর তথাকথিত স্বদেশহিতৈষণার আশ্রয়ে নিজেকে এবং অপরকে ভুলিয়ে রেখে নিরাপদ হ’তে চায় । সেই নিরাপদ নীড় সে বেঁধেছে আজ বিদেশীর খাচায়— সেখানে আকাশের মুক্তি নেই । সেখানে তার ভোজ্য পরের উদ্ধ,ক্ত ভোজ্যের উচ্ছিষ্ট । কিন্তু এসব কথার মূল্য আপনার কাছে কিহব ? আপনাকে মিছে বিরক্ত করছি ।” কথার খোচায় পাৰ্ব্বতী কিছুমাত্র উন্ম। প্রকাশ না করে শাস্ত কণ্ঠে বললে, “দেশকে আপনি ভালবাসেন ; তাকে স্বাধীন করতে চান । আপনার এই কথাগুলি সত্যিই আমার ভাল লেগেছে ; স্বাধীন দেশে মানুষ হবার গুণেই বোধ হয়। অামি জানি কেন ইংরেজই আপনার এই সেণ্টিমেন্টকে তুচ্ছ করবে না। তবে দেশের কথা বলছেন যে, সেটা কোন দেশ, বাংলা না ভারতবর্ষ ? তা আমি ঠিক জানি না—ও কথা ভাবিও নি কখনও । দেশকে আমিও একরকম ক’রে ভালবাসি, সে আমার মাকে ভালবাসি বলে। আমার কাছে দেশের মূল্য মায়ের বাংলা দেশ বলে—যেখানকার শু্যামলতা ও সরসতা নিয়ে আমার মা সমস্ত প্রাণ দিয়ে আমাকে ভালবেসেও আমার জীবনে তার ইচ্ছাকে সার্থক করে তুলতে পারেন নি। যেখানকার পুরুষ তার নারীকে মানুষের অধিকার থেকে তিলে তিলে বঞ্চিত করে, সবলে দেবী বানিয়ে তোলবার মূঢ় গৰ্ব্বে নিষ্ঠুর ; যেখানে লক্ষ মায়ের চোখের জল দিনের পর দিন মাটিতে মিশেছে সেই বাংলা দেশকে আমি ভালবাসি। নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠার বলে সেই বাংলা দেশকে যদি নারীনির্বাতনের পাপ থেকে একটুও মুক্ত করতে পারি, নিজেকে ধন্ত মনে করব । সেই সামান্ত উদ্দেশ্যে এই প্রতিষ্ঠানের সেবায় আমি যোগ দিয়েছি। আপাততঃ এর চেয়ে বড় মুক্তির কথা আমি ভাবি না। . আপনি বলছেন বটে, কিন্তু সমস্ত ভার ভেবে সেই দেশের স্বাধীনতার রূপ এYাকার ১. সর্বস্থায়, কিন্তই স্পষ্ট করে ভেবে উঠতে পারছি নে । তা ছাড়া পোষ্ট্র ইমানসিপেশন ইত্যাদির কথ। তামার কখনও মনে হয় নি। আপনি বরং শচীনবাবুর সঙ্গে দেখা . ক’রে এ-সব কথা বলুন, দেখুন তিনি কি বলেন ।” সীমা পাৰ্ব্বতীর সম্বন্ধে মনে মনে হতাশ হয়ে বললে, “আপনার পূর্ব জীবন যেমন ভাবে কেটেছে বলছেন, তাতে আপনার নিজের দেশের স্বাধীনতার সম্বন্ধে দরদ হওয়ার কথা নয়। সে যাই হোক গে। শচীনবাবু করেন কি ? তার ঠিকানাটা যদি—” “শচীনবাবু জমিদার । তার বর্তমান ঠিকানা অবশ্য ঠিক জানি না । আচ্ছ, আপনি একটু অপেক্ষা করুন।” ব’লে সে বেরিয়ে ভোলানাথের কাছে গেল । পাৰ্ব্বতীর মনেও শচীনের সঙ্গে দেখা করবার বাসনা অনেক দিন থেকেই ছিল । ভাবলে, এই মেয়েটির সঙ্গে গেলে মন্দ হয় না । মেয়েটির প্রস্তাবের আলোচনায় আমাকেও ত দরকার হবে । মেয়েটির কথাবাৰ্ত্তায় তাকে অত্যন্ত আনপ্রাকৃটিক্যাল অব্যাপারী ব’লে পাৰ্ব্বতীর মনে হয়েছিল—এবং তার স্নেহের প্রতিষ্ঠানটিকে ওর সঙ্গে যুক্ত করে দেবার প্রস্তাব পাৰ্ব্বতীর ভাল লাগে নি । মনে মনে ভাবলে, *দু-মাস এলেন না । কোথায় একলা একলা ঘুরে অস্বস্থ হয়ে পড়বেন হয়ত ।” তারই কথায় যে এমনটি ঘটেছে এই কথা মনে ক’রে অমৃতপ্ত হয়ে সে মনে মনে বললে, “না ; এর একটা বিহিত করে ফেলতেই হবে ।” শচীন্দ্রের নায়েবের কাছ থেকে যদি কোন ঠিকানা পাওয়া যায় এই আশায় ভোলানাথকে গিয়ে বললে, *ভোলাদ, একট। নৌকা ঠিক ক’রে দিতে পার ?” "কেন দিদিমণি, বেড়াতে যাবে ?” “না, তোমাদের দেশে যাব। নৌকায় কতক্ষণ লাগবে বল ত ?” “তা বাতাস পেলে এক দিনেই যেতে পারে ওভরবাড়ী । সেখান থেকে সিংযোড় রেলে এক ঘণ্টার পথ। আর সিংষোড় ইষ্টিশন থেকে বল্লভপুর এক পো পথ ।” “তোমায় কিন্তু এখানে কয়দিন থাকতে হবে । দেখবে শুনবে। পারবে ত " সৰ