পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“বিশেষ কারণে আমার যাওয়া ঘটে উঠল না। ক্ষমা করবেন।” আমাকে f সকালে সীমাকে ভূতাটি দেখেছিল, স্বতরাং পাৰ্ব্বতীর নির্দেশমত ষ্টেশনে সীমাকে খুঁজে বার করতে তার কষ্ট হয় নি । С о সীমা যে কলকাতায় ফিরেছে একথা নারীভবনে প্রকাশ করতে তার বাধা ছিল । তাই সে সোজা রঙ্গলালের সঙ্গে গিয়ে দেখা করলে । রঙ্গলাল সীমার কথা শুনে উৎফুল্ল হ’য়ে উঠল, বললে, “দরকার কি আর ঘোর-প্যাচ খেলে । ওসব ভুড়ো-পেট জমিদার তোমার ওসব কথায় রাজী হবে না। ব্রিটিশ গবর্ণমেণ্টের তাবেদারীতে জমিদাবী বঁচিয়ে তাদের থেতে হবে ত। রেভলুশনারী হ’লে তাদের চলবে কেন, তার চেয়ে একেবারে এলাহাবাদ থেকে তাকে কিড়ন্তাপ ক’রে আনা যাক—কি বল ?” সীমা বললে, “রজদ, তোমার দুঃসাহস যতখানি, বুদ্ধি যদি ততটা খেলত তবে এই বিংশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষে তোমার জোড়া মিলত না । লোকটাকে আমি কলকাতায় এনে ফেলি। তখন তোমার ট্যাক্সির সাহায্যে তোমার খাচায় পোরা শক্ত হবে না। একেবারে হাওড়া ষ্টেশন থেকে দমদমার বাগানে—বুঝলে কি না। আজ বুধবার, শনিবার সন্ধ্যার সময় প্রস্তুত থেকে ৷” অহিতপুচ্ছ রঙ্গলাল মনে মনে ক্রোধ পরিপাক ক’রে চলে গেল। সীমার নিয়ত শ্লেষ তার আর সহ হচ্ছিল না। সীমার কর্তৃত্বে অকারণ নরহত্যার উত্তেজনা নেই, বিপদের সন্ধান নেই, মাত্র নিজীব নিয়মের অধীনে স্থদুর ভবিষ্যতের সম্ভাব্য স্বযোগের অপেক্ষায় নীরবে কাজ করে চলায় তার ধৈৰ্য্যের বাধ প্রায় ভেঙে এসেছিল । দুর্দান্ত দুৰ্দ্ধৰ্ষ একটা কিছু ক'রে ফেলবার তাড়নায় তার চিত্ত নিজের বাহিরের পরিবেষ্টনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল। ধৰ্ম্মজ্ঞান ব’লে কোন বস্তু তার বড় একটা ছিল না । সীমার অনুপস্থিতিতে সে কি করবে তার একটা মতলব মনে মনে ঠিক করে সীমাকে বললে,“বেশ কথা, আমি এদিকে সব ঠিকঠাক ক’রে রাখব ; কেবল আসবার আগে >e 8->> একটা খবর দিও।” এত সহজে বিন জর্কে রজলালকে রাষ্ট্র-ই-ওঁ"খে সীমা একটু খুনী হ’ল । ł / }. & X নন্দলাল 'যদিও বাহ্যতঃ তার সংসারযাত্রীয় નાસ્તિ আগ্রহ ও একাগ্রতার অভিনয় ক’রে চলেছিল, তবু মন তার স্বস্থ ছিল না। জ্যোৎস্নার সম্বন্ধে তার মতিচ্ছন্ন চিত্ত কিছুদিনের মধ্যেই আবার তাকে বিভ্রাস্ত করে তুলেছিল। হতভাগা ডাক্তার যে জ্যোৎস্নাকে তার কাছ থেকে এমন ক’রে ছিনিয়ে নিয়ে নিজের আয়ত্তের মধ্যে সম্পূর্ণ নিরুদ্দেশ করে ফেলবে এ সে সহ করতে পারে না । কিছুদিন সে অকারণে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে নিজের মনকে বশে আনবার চেষ্টা করতে লাগল। একবার মনে করলে, মরুক গে ডাক্তার, আর এমন ক’রে অশাস্তি ভোগ করা যায় না । কিন্তু ‘মরুক গে” বললেই উদ্দাম বাসনাকে কিছু আর সংযত করা যায় না । তবু সে অনঙ্ক্যোপায় হ’য়ে অর্থোপার্জনের দিকে প্রাণপণে নিজেকে নিযুক্ত করতে চেষ্টা করতে লাগল। নাওয়া-খাওয়ার সময়ের আর কোন স্থিরতা রইল না। প্রতিদিন রাত্রে ফিরে নিতান্ত শ্রাস্ত নিজীব হয়ে সে রাত্রে শয্যায় আশ্রয় নিত । শ্রাস্ত চোখে নিদ্রা আসতে বিলম্ব হত না এবং প্রাতঃকালে উঠেই আবার ব্যবসা-সংক্রাস্ত নানা জটিল ব্যাপারে নিজেকে ব্যাপৃত করে তোলবার অসাধ্য সাধনে সময় ও শরীরকে সে ক্ষয় করতে লাগল। এমন সময় একদিন সন্ধ্যাবেলী হাসপাতালের পরিচিত দরোয়ানের সঙ্গে বাড়ীর দরজায় তার সাক্ষাৎ হ’ল । জ্যোৎস্নার নামে মালতীর একথানা চিঠি নিয়ে সে বেরিয়ে যাচ্ছিল । তাকে দেখেই নদলালের মনে একটা কুটিল সন্দেহপূৰ্ণ আশার সঞ্চার হ’ল। নিতাস্ত অকারণে ষে হাসপাতালের জরোয়ানের তার গরীবখানায় আগমন সম্ভব নয় এটুকু বুঝতে তার দেরী হয় নি। জ্যোৎস্নার কাছ থেকেই ষে দরোয়ান এসেছে এই কথা মনে ক’রে সে পরিচিত দরোয়ানকে নিতান্ত পুরাতন বন্ধুর মত প্রায় সমাদর ক'রে বললে, “এই যে এস এস দরোয়ানজী । সব ভাল ত ? তোমাদের ওদিকে অনেক দিন যেতে পারি নি। তার পর কেমন আছ ?” দরোয়ান অত্যন্ত আপ্যায়িত হ’য়ে কুশল প্রত্যভিবাদন