পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b=Se জায়িছিল । তার জানানতে যে কিছু হয় নি একথা তার মনুমানতে গঙ্গল না। ; : *. .পরদিন নিখিল ভুলু দত্তর কাছে গেল ; এবং তাকে সঙ্গে নিয়ে পুলিস কমিশনরের কাছে ঘোরাঘুরি করে সে পুলিস হাজামের ব্যাপারটা অনেকখানি সংক্ষেপ করে আনলে । ননলালের সঙ্গে কোন রাজনৈতিক ব্যাপারের কিছুমাত্র যোগ না থাকায় পুলিস এই খুনটাকে নিছক তার কোন পাওনাদার বা শক্রর কাজ বলেই সাব্যস্ত করলে। অনুসন্ধান অবশ্য চলতেই লাগল, কিন্তু রাজনৈতিক ব্যাপার অনুসন্ধানের উৎসব-আয়োজনের উৎসাহ আর ততটা রইল না। অত্যন্ত দুশ্চিন্তার মধ্যে নিখিলনাথের সময় অতিবাহিত হতে লাগল। নন্দলালের বাড়ীর চারিদিকে পুলিস প্রহরী বসেছিল, স্বতরাং বাইরে থেকে সে-বাড়ীতে বিপদের সম্ভাবনা বড় একটা ছিল না। তার ভয় ছিল শুধু অল্পপস্থিত সীমা সম্বন্ধে। এদের ধলের অস্তিত্বের কতখানি সন্ধান ভুলু দত্তের কাছে আছে তা সে জানত না । শুধু একটা অজানা ভয়ে সীমা সম্বন্ধে তার মনকে অত্যন্ত চিন্তাতুর ক'রে তুললে । কমলাকে অবশ্য সে কোন রকম কথাবার্তা পুলিসের কাছে মা-বলতে সাবধান করে দিয়েছিল। তবু তার মনে স্বস্তি রক্টল না। সীমার সাক্ষাৎ পাওয়া তার নিতান্ত আবশুক। এই ঘটনার মধ্যে সীমার কোন হাত ছিল কি না তা সে না জানলেও, সময়মত সীমাকে সাবধান ক’রে দেওয়ার জন্যে মন তার ব্যাকুল হয়ে উঠল এবং অনতিবিলম্বে কমলাপুরীতে যাওয়া ঠিক ক’রে সে শ্রাস্তচিত্তে নিজের কামরায় ফিরে গেল । এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে মন তার অত্যন্ত বিচলিত হয়েছিল সত্য, কিন্তু সবচেয়ে যা নিয়ে তার মনের দ্বন্দ্ব সে কাটিয়ে উঠতে পারছিল না, যে-চিন্তা সবচেয়ে তীব্র হয়ে তার অন্তরাত্মাকে পীড়িত করছিল, ষে-সমস্যা তার জীবনপথে সবচেয়ে জটিল হয়ে উঠেছিল, তার কোন সমাধান সে খুঁজে পেল না। তার প্রেমের দিক দিয়ে সীমাকে রক্ষা করবার প্রবল ইচ্ছা তাকে যে তার সত্য থেকে বিচলিত করেছে, তার গ্লানি অস্তরে অস্তরে তাকে পীড়িত করে তুলেছিল। প্রবাসী ১৩৪৩ T আজ এই হত্যার এবং হত্যাকারী দলের প্রায় সকল সন্ধান "নেও সীমার প্রতি তার একান্ত আকলিৰে সে বাইরের দিক থেকে বাধাস্বরূপ হয় নি একথা সে ভুলতে পারছে না। মানুষের চিত্তের স্বাভাবিক নিয়মানুসারে নিজের কাজের সমর্থনে চিন্তা এক সময় অন্য যুক্তি তার মনের মধ্যে অবতারণা করলে । সীমা এই হত্যাকাণ্ডে হয়ত লিপ্ত নেই ; অথচ তার নিজের সাধুতার মূল্যে এদের সন্ধান দিয়ে সীমাকে সে নিশ্চিত মৃত্যুর পথে এগিয়ে দেবে কেমন করে। তা ছাড়া এরাই যে তাকে হত্যা করেছে তারই বা নিশ্চয়তা কি ! স্বতরাং— কিন্তু এমন ক’রে নিজেকে বুঝিয়েও মনের কাটা তার দূর হতে চাইল না। নিখিলনাথের মনে সীমার সর্বনাশময় ভবিষ্যতের আতঙ্কে তার নিজের বিবেকের চেতনা আচ্ছন্ন হয়ে এল। কিছুমাত্র বিলম্ব করলেই যে সীমাকে তার নিশ্চিত মৃত্যু থেকে সে কোনমতেই রক্ষা করতে পারবে না একথা মনে করে সে পরদিন প্রত্যুযেই কমলাপুরী যাবার বন্দোবস্ত ঠিক ক’রে ফেললে । লঞ্চের সারেঙকে প্রশ্ন করে সে বুঝতে পারলে যে সীমা সত্যিই কমলাপুরী গিয়েছে এবং সেখান থেকে এখনও ফেরে নি। এইটুকু সংবাদে তার মন অনেকটা শাস্ত হ’ল । আর কিছু না হোক, সীমাকে সে কলকাতায় ফিরবার পূর্বেই ধরতে পারবে। সীমাকে যে সে এই ব্যাপার থেকে নিরস্ত করতে পারবে সে আশা তার মনে ছিল না। তবু আপাতবিপদসম্ভাবনার হাত থেকে বাচাতে পারলে ভবিষ্যতের সম্ভাবনার পথ মুক্ত থাকে এই চিস্ত করে সে নিজের চিত্তকে স্থির করতে চেষ্টা করতে লাগল। কতকটা এই চিন্তার হাত থেকে নিস্তার পাবার আশাঃ এবং কতকটা কমলাপুরী সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করবার আগ্রহে নিখিল সারেঙের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলে। অপ্রশস্ত রক্ষিণী নদীর তীরে তীরে নিরাময় নিশ্চিন্ত আনন্দকলোচ্ছ্বাসপূর্ণ সহজ জীবনযাত্রার বিচিত্র লীলা তার চিত্তে কোলাহলমুখরিত নগরীর উদ্বেগ উত্তেজনাপূর্ণ জটিল ব্যর্থ অজস্রতার প্রতি একটা বিতৃষ্ণ জাগিয়ে তুলছিল। তার মনে হ’ল মানবের মঙ্গলসাধনের উন্মাদ মোহের উন্মত্ত গতিবেগ থেকে যদি কোনমতে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে এনে এই শাস্ত কোমল