পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেহে না দেগে সে একটু হতাশ হ’ল । তবু অনেক নিরীক্ষণ করে দেখলে জ্যোৎস্নার কাছে শোনা তাদের ভূত্যের বর্ণনার অল্প কিছু মেলে বইকি ? এত দুশ্চিন্তার মধ্যেও কতকটা আশার সঞ্চার তাঁর মনের মধ্যে হ'তে লাগল। আশাতেই আশার বুদ্ধি । তার মনে হ’তে লাগল যে দু:সময়ের দুগ্ৰহ যেন কেটে গেছে, যেন সৌভাগ্যের স্বচনায় মন তাঁর প্রসন্ন হয়ে উঠতে চাইছে । সীমা সম্বন্ধেও অকারণেই তার মনটা হাল্কা হ’য়ে উঠল । ভোলানাথ কাছে আসতে ন}-আসতেই সেই মেয়েটি চীংকার করে বলতে লাগল, “ভোলাদ, শীগগির শীগগির এর যাওয়ার ব্যবস্থা কর।” ভোলানাথ আশ্চৰ্য্য হয়ে বললে, “বাবু ত এখুনি এলেন, তা যাওয়া ত সেই কাল ভোরের ইষ্টিমারে । তার আগে ত হবার জো নেই । তা মা, বাবুরে খাওয়াও দাওয়াও, এখন যাবেন কেন ?” “আঃ ভোলাদ, বুড়ো হয়ে তুমি বড় বেশী কথা পল । ষ্টীমারে যাবেন কেন ? ওঁর বাড়ীতে খুন হয়েছে যে, নেীকে, নেীকে ঠিক কর । উনি দিদিমণিদের কাছে ষাবেন ।” ভোলানাথ এ-সব কথার মাথামুণ্ডু কিছু ঠিক করতে না পেরে একবার নিখিলনাথের দিকে, একবার সেই ভদ্রমহিলার দিকে চেয়ে কোথাকার খুন এবং সেই খুনের সঙ্গে দিদিমণিদের পিছনে নৌকা নিয়ে ধাওয়া করার কি যোগ থাকতে পারে তা ভেবে উঠতে পারলে না । নিখিল এই মহিলাটির এই স্বায়বিক উত্তেজনায় অত্যন্ত সঙ্কোচ বোধ করতে লাগল । সে লজ্জিত ভাবে বললে, “আপনি ব্যস্ত হবেন না । ভোলাদার সঙ্গে আমি সব ঠিক ক’রে নেব । নমস্কার ” ব’লে আর পিছন না ফিরে ভোলানাথকে প্রায় টেনে নিয়ে চলল, “ভোলাদ চল কথা বলি” বলে নদীর দিকে চলে গেল । কিছুমাত্র পরিচয় না থাকলেও এ-ক্ষেত্রে ভোলানাথকে সঙ্কোচ করবার অবসরমাত্র দিল না । ভোলানাথ বললে, “বাবু আপনারে ত আমি চিনি নে। আপনি নিশ্চয় ছোড়দিদিমণির ( অর্থাৎ ঐ মহিলাটির ) কেউ হবেন । তা বাৰু আপনার বাড়ী কোথায় ? খুন হলেন কেমন করে ?” নিখিল হেসে বললে, “আমার বাড়ীতে খুন হয় নি। যে দিদিমণি পাৰ্ব্বতী দেবীর সঙ্গে গেছেন তার একজন আত্মীয় খুন হয়েছেন। তাই এগুনি তার নাগাল পাণ্ডৰ চাই ।” “ও তাই কও বাবু। তা দিদিমণির নৌকোয় গেছে বাবুর বাড়ী .ত .েীকে ঠিক করে দিচ্ছি।” ” “নেীকায় ?—সে ত ভয়ামক দেরী হবে। অন্য কোন উপায় নেই ?” “ত। বাবু পায়ে হেঁটে যেতে পার ত তাড়াতাড়ি হ'তে পারে ৷ পথ বেশী নয় । কোশ-দশ হবে । সন্ধ্যে নাগাদ ইঃিশান পৌছবে । আটটার গাড়ী ধরতে পারবে ।” “পায়ে হেঁটে খুব পারব। তুমি পথটা আমাকে একটু দেখিয়ে দিও, তাহলে আর ভাবনা থাকবে না।” নিখিলনাথের কথাবার্তায় ব্যবহারে ভোলানাথের তাকে বেশ ভালই লেগেছিল। লঞ্চে ফিরে সামান্ত কিছু জলযোগ ক’রে নিয়ে নিখিল প্রস্তুত হয়ে ভোলানাথের সঙ্গে বেড়িয়ে পড়ল। পথ বলতে সেখানে কিছু নেই। মাইল চারেক পথ চষা মাঠের মধ্যে দিয়ে গিয়ে ডিষ্ট্রক্ট বোর্ডের রাস্ত পাওয়া যায় ; সেই পৰ্য্যস্ত ভোলানাথ তাকে পৌঁছে দিয়ে এল | পথে ভোলানাথের সঙ্গে গল্প করতে করতে নিখিল সব জেনে নিতে লাগল । গল্পে গল্পে ভোলানাথ বললে, “তা বাবু এত বড় জমিদারী, তা এর পর ভোগ করবে কে ? বাবু ত ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। কলকাতায় থাকে, মাসে এক দিন ঐ কমলাপুরীতে যায়।” “কেন বাবু বাড়ী যান না ?” “না বাবু, আগে যাও বা যেত এখন আর দু'বচ্চর ওমুখে হয় না। আর পুরী খ খ করছে, কার তরেই বা যাবে বল ।” নিখিল জিজ্ঞেস করলে, “কেল বাবুর ছেলেপিলে নেই ?” “আর বাবু, ছেলে ? সোনার চাদ ছেলে ছিল, বুকে নিলে বুক জুড়িয়ে যায়। তা আদেষ্ট বাবু, কিছুই ত রইল না ।” বলতে বলতে ভোলানাথের চোখ ছলছল ক’রে উঠল । লজ্জিত হয়ে নিখিল বললে, “আহা ! ভী ভোলাদা দুঃখ ক'রো না, মরী-বাচা ত কারুর হাত নয় ।” ভোলানাথ বললে, “যাট, যাট, মরার কথা নয় বাৰু