পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যাহা প্রত্যক্ষ করিলাম তাহা সম্ভবত চিরদিন আমার মনে থাকিবে । মনে থাকিবে কেমন করিয়া মানুষের অতৃপ্তি তার চেতনার সহিত সংগোপনে নিবিড়ভাবে জড়াইয়া থাকে। দশজনাকে ঠানদি এড়াইয়া চলেন, বলেন, কাজ কি বাপু আগাছা জড়ো করে। কিন্তু আগাছা আপনি হয়—রোপণ করিবার প্রয়োজন হয় না। পাশের বাড়ীর হরিহর খুড়োর ছোট মেয়ে শু্যামলীকে প্রায়ই ঠানদির গা ঘেষিয়া বসিয়া থাকিতে দেখি । ম-মরা ছোট মেয়ে সকলেই একটু বিশেষ চোখে দেখেন। ঐ অতটুকু মেয়েটাকে তার মাতৃবিয়োগের কথাটা পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে বুঝাইয়া দিয়া আপশোষ করেন। বউরা বলে, আহা এই বয়সেই মা-মাগীকে খেয়ে বসে আছিস্ ! মাতার মৃত্যুকে আজকাল সে ভাবিয়া দেখে । ঠানদিকে সেদিন তার মার বিষয় বহু প্রশ্ন করিতে শুনিয়াছি। ঠানদি উত্তরের পরিবর্তে তাড়না করায় মেয়েটা পলাইয়া তার হাত হইতে অব্যাহতি পাইয়াছে। দাওয়ায় বসিয়া জাল বুনিতেছিলাম, কিন্তু হাতের কাজ আমার অনেক ক্ষণ পর্যন্ত বন্ধ ছিল । পুনরায় গোটা-দুই ফাস বুনিতেই শুমলীর কণ্ঠস্বর আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করিল। “দাও না তোমার পাতের দুটি পেসাদ খেতে দিদিম৷ ” ঠানদি মারমুখী হইয়া উঠিলেন, দুটি খেতে পৰ্য্যন্ত দেবে না হতভাগী—দূর হু বলছি। মুখপুড়ী বাপের কাছে থেভে পারিস নে। শুামলী হি হি করিয়া হাসিতে লাগিল । এই দৃশুটি রোজই অভিনীত হয়। আশ্চর্ঘ্য হইলাম না। কিন্তু রোজই ভাবি, ঐ একরত্তি মেয়ে কেমন করিয়া ঠানদির অন্তরের খোজ পাইল । খামলী বলিতে লাগিল, আচ্ছা যাচ্ছি দূর হয়ে, তখন আবার পাকা চুল তুলতে বললে আর আসছি নে কিন্তু । শুামলী ঠানদির আরও সন্নিকটে অগ্রসর হইয়া আসিল, আব্দার করিয়া কহিল, আজকে তোমার বরের গল্প বলতে হবে দিদিমা, নইলে অামি গুনব না । ঠানদির পিঠের উপর হমড়ি খাইয়া পড়িয়া, এক হাতে র্তার কণ্ঠ বেষ্টন করিয়া পুনশ্চ বলে, সেই ষে রাঙা চেলী পরে শ্বশুরবাড়ী যাওয়া... তোমার বাবার কান্না...ই্যা ঠানদি, তোমার বর খুব স্থণার ছিল, না ? ঐ যাত্রার দলের কেষ্টর চেয়েও ? ঠানদি তাকে এক হাতে কোলের কাছে টানিয়া লইয়া বলিতে থাকেন, অত কি আর মনে আছে মুখপুড়ী— তুই একরতি মেয়ে, অত খবরে কাজ কি ! ঠানদি এক গ্রাস ভাত খামলীর মুখে পুরিয়া দিলেন। হাতের কাজে আমার মন বসে না। একাগ্রচিত্তে এই দুই কঁচি-পাকার কথোপকথন শুনিতে থাকি। এ এক অদ্ভুত কৌতুহল আমার । খামলী পুনরায় প্রশ্ন করিল। ঠানদি বেশ উৎসাহের সহিত গল্প বলিতে লাগিলেন । পুরাতনের পুনরাবৃত্তি । র্তার মাতাপিতার অশ্র সজল বিদায়ক্ষণ হইতে আরম্ভ করিয়া বেহারাদের পরিশ্রাস্ত কণ্ঠের হম হম শব্দটি পৰ্য্যন্ত র্তার গল্প হইতে বাদ পড়িল না । কিন্তু শুমলীর ইহাতে মন ওঠে না, বলিতে থাকে, তুমি ফাকি দিচ্ছ দিদিম । তোমার বাবা যে সোনার গয়নাগুলো দিয়েছিল তার কথা একেবারে বল নি। সেই যে গো তোমার গা থেকে টেনে খুলতে গিয়ে হাত কেটে রক্ত বেরিয়েছিল। মাগে, তোমার বরটা কি যাচ্ছেতাই। ছেলেমামুষের আবোলতাবোল বকিয়া যাওয়া ইহা লইয়া থামক মাথা ঘামাইবার মত কোন যুক্তিই খুজিয়া পাইতেছিলাম না। কিন্তু ঠানদির কোটরগত চোখ দুইটা সহসা ধ্বক ধ্বক করিয়া জলিয়া উঠিল। শুামলী সভয়ে চুপ করিল। ঠানদি বাজিয়া উঠিলেন, মরবার আর জায়গা পাও না, আমায় এয়েছো জালাতে । চোখ তুলিয়া দেখি খামলী তত ক্ষণে সরিয়া পৃড়িয়াছে। আর ঠানদি আপন মনে বকিয়া চলিয়াছেন, যত সব আগাছ - দের ঝোঁটিয়ে বিদায় ক’রে-এ-গুণ নেই সে-গুণ আছে--- বাপ ত দিনস্তে ডেকেও জিজ্ঞেস করে না---সংমা বেটীও হয়েছেন সাপের সসুই-দেবে এখন খেতে পিঠের উপর দিয়ে । ঠানদি জোরগলায় ইাকিলেন, এক বার এদিকে গুনে ষ বিস্ত । হাতের কাজ গুটাইয়া রাখিয়া ঠানদির কাছে উপস্থিত হইতে আমার একটু বিলম্ব হইয় গেল । ঠানদি