পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ÉEstasi কণ্ঠস্বর পুনরায় শোনা গেল, হাতের এ-পিঠ আর ও-পিঠ---সব সমান---এই বিশেটাই কি কিছু কম যায়। আমি সাড়া দিলাম,—অত বকছ কি ঠানদি । ঠানদি শূন্তে আস্ফালন করিতে লাগিলেন, ভালমামুষ সেজে বসে আছেন যেন কিছু বুঝি নে আমি । ঠানদির রকম দেখিয়া আমার হাসি পাইতেছিল । তার এই ধরণের মধুর আপ্যায়ন রোজই আমার অদুষ্টে জুটিয়া থাকে। ঠানদির চোখের সম্মুখে গিয়া অপেক্ষাকৃত উচ্চকণ্ঠে হাক দিলাম, তোমার হ’ল কি ঠানদি ? ঠানদি ঝঙ্কার দিয়া উঠিলেন, সে-খবরে তোর দরকার কি ! এসেছেন মায়া দেখাতে, যেন ঐ মায়াকান্নায় আমার মন ভিজবে। এই যে মেয়েট না খেয়ে রাগ করে চলেই গেল, জামি ত আজ আর বরাতে ভাত জুটবে না— তা ব’লে ডেকেছি, একবার । খেল খেল, ন-খেল মা খেল—বয়ে গেল । ইতিমধ্যে শু্যামলী আসিয়া ঠানদির অঞ্চলাগ্র ধরিয়া তার গ; ঘেষিয়া চুপ করিয়া দাড়াইল। দেখিলাম—কিন্তু ন-দেখার ভান করিয়া বলিলাম, মেয়েটা না পেয়ে থাকবে— আমি বরং ডেকে আনছি। আমার এই অভিনয় করিবার প্রয়াসটুকু ঠানদি বিফল হষ্টতে দিলেন না । আমি নীরবে সরিয়া পড়িলাম। কিন্তু আমার কৌতুহলী চক্ষুজোড়া ওদের প্রহরায় নিযুক্ত রহিল । ঠানদি শুমলীর হাত ধরিয়া হিড় হিড় করিয়া টানিয়া আনিয়া ভাতের থালার কাছে বসাইয়া দিলেন, কহিলেন, এগুলো গিলবে কে শুনি ? শু্যামলী হি হি করিয়া হাসিয়া উঠিল, আমি-আমি দিদিমা—মধ্যপথে হঠাৎ থামিয়া গিয়া খামলী পুনরায় কহিল, তোমার ঘরে আমি আর খাব না। তুমি মাকে বলেছ তোমার জিনিষপত্তর আমি চুরি করে খাই। পুনরায় ঠানদির ডাক আসিল, শোন বিশে শোন, মেয়েটার কথা শুনে যা । এবারে আর বিলম্ব হইল না । ঠানদি পুনরায় বলিতে লাগিলেন, তুই ত বাপু দিনরাত ঘরেই বসে আছিল, শুনেছিস আমার মুখে এমন কথা কোন দিনও r ঠানদি এমন ভাবে আমার মুখের দিকে চাহিলেন অস্তঃসলিলা فتكه سويسوع যেন আমার একটি মাত্র উত্তরে সকল গোলযোগের অবসান হয়। আমি কথা কহিলাম না। ঠানদি পুনরায় কি বলিতে গিয়া ঝর ঝর করিয়া কাদিয়া ফেলিলেন । ঠানদির এমন ধৈর্ধচুতি আমার চোখে এই প্রথম। বিম্মিত বিহবল দৃষ্টিতে_ আমি তার শীর্ণ, লোল, কদাকার মুখখানার দিকে চাহিয়া রহিলাম । সে-মুখে কেমন একটা ভীতিব্যাকুল ভাব, যেন কেহ জোর করিয়া তার পাজরের হাড় ক-খানা খুলিয়া লইতে বল প্রয়োগ করিতেছে । শুামলী একবার আমার, একবার ঠানদির মুখের প্রতি চাহিয়া চাহিয়া বলিতে লাগিল, বা রে তুমি কাদছ কেন••• আমি ত আর তোমায় কিছু বলি নি । তুমি বল না বিশুদ– & কিন্তু সেই মুহূৰ্ত্তে মুখ ফুটিয়া একটি কথাও আমি বলিতে পারিলাম না । বলিবার মত আছেই বা কি ! তা ছাড়া এমন করিয়া কঁাদিতে ঠানদিকে আমি আজ পর্য্যস্ত দেখি নাই। আজিকার ঘটনা আমার কাছে সম্পূর্ণ নূতন । ঠানদির বাহিরের কাঠামোটাই যে র্তার অস্তরের প্রতীক নয় এ-খবর আমি বহুবার পাইয়াছি কিন্তু তবুও তাকে একটু আলাদা চোখে দেখিতাম । ভাবিত্তাম, নারীর স্বভাবকোমলতার সত্যকারের অভাব তার মধ্যে বড় বেশী, তাইতেই তার বহিরাবরণ এত রুক্ষ । কিন্তু আমার সে ধারণা আজ উণ্টাইয়া গেল । ঠানদির দিকে চাহিয়া অামায় থাকিয়া থাকিয় মা’র কথা মনে পড়িতে লাগিল । এমনি কান্না অামি তার চোখেও একদিন দেখিয়াছিলাম যেদিনে ইংরেজের হইয়া যুদ্ধ করিতে আমি দেশত্যাগ করিয়াছিলাম। আজ মা বাচিয়া নাই, কিন্তু তার সেক্ট অশ্রুসজল মুখখান ষে আমি ভুলি নাই তাহ আজ নূতন করিয়া পুনরায় উপলব্ধি করিলাম । ঠানদিকে আমি যতটা জানি যতটা চিনিয়াছি এতটা আর কাহারও পক্ষে সম্ভব নয়, এমনি একটা মিথ্যা অহঙ্কার আমার মধ্যে ছিল । কিন্তু আজ আমি আমার বুখা দস্তুকে শাসন করিলাম । ঠানদি সজল চোখে আমার প্রতি চোখ তুলিয়৷ মৃদুকণ্ঠে কহিলেন, মেয়েটাকে ওরা সময়মত খেতে দেয় না, কথায় কথায় কিল চড়টা লেগেই আছে। পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়ায়—