পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহজে শিখিতে পারে। প্রশ্ন উঠবে, প্রথম শিক্ষার্থীর পাঠ্যপুস্তকে কোন বিজ্ঞানকে প্রাধান্ত দেওয়া উচিত। বিজ্ঞানালোচনার ইতত্ত্বও বিচার করিলে দেখা যায় যে পদার্থবিদ্য, রসায়ন, ভূবিদ্য প্রভৃতি চর্চার বহুপূর্বে প্রাচীন মানব সমাজে জ্যোতিমের আলোচনা আরম্ভ হয়। আদিম মানবের মনে চন্দ্র, স্বর্য, নক্ষত্র প্রভৃতি দ্যোতিষ্ক অতি কৌতুহলের বস্তু বলিয় প্রতিভাত হইয়াছিল। অল্পবয়াদের মনোবিকাশেও এই প্রাচীন ধারার অনুবতন দেখ যায়, এজন্ত তাহদের শিক্ষার জন্য প্রাথমিক বিজ্ঞান হিসাবে বালকবুদ্ধিগ্রান্স সরল জোতিযের উপযোগিত শ্রেষ্ঠ । গ্রন্থকার কি উদ্দেস্তে জ্যোতিযের প্রাধান্ত দিয়াছেন জানি ল' কিন্তু ইহাতে র্তাহার পুস্তকের গৌরব বৃদ্ধি পাইয়াছে বলিয় মনে করি। এরূপ পুস্তক বাংল ভাষার সম্পদ। লোকে এই পুস্তকের সমাদর করিবে সন্দেহ নাই। শ্ৰীগিরীন্দ্রশেখর বসু আবরণ মোচন—ত্ৰবেণীমাধব দাস প্রণীত। খ্ৰীবিন্দুমাধব স্বাস কর্তৃক গাইবান্ধ হইতে প্রকাশিত। পৃষ্ঠা ৫৩। মুল্য ছয় আনা মাত্র । লেখকের মতে জাতিঙ্গেপ্রথা হিন্দুসমাজের অধঃপতনের প্রধান কারণ ; ইহার মুলোচ্ছেদ বা আমুল পরিবর্তন ন হইলে প্রকৃত স্বাধীনতা লাভের কোন আশা নাই। পুস্তিকাখানিতে অনেক ভাবিবার বিষয় আছে । শ্রীঅনঙ্গমোহন সাহ তৃণখণ্ড—“বনফুল” সুচিত । কলিকাত, রঞ্জন প্রকাশালয় ২৫-২ মোহনবাগান স্লো হইতে প্রকাশিত । তৃণপও কয়েকটি চিত্রের সমষ্টি। লেখক ডাক্তার ও কবি ; ডাঞ্জারকবি র্তাগর জীবনের কয়েকটি অভিজ্ঞত এখানে লিপিবদ্ধ করিয়াছেন। তিনি জীবনের একটা যুক্তিপূর্ণ সঙ্গত অর্থ, একট লজিকের সন্ধান করিতে গিয় বার্থ হইয়াছেন । তাই তাহীর মনে হইয়াছে জীবনের স্রোভাবতেতিনি একটি তৃণখণ্ড মাত্র, ভাগিয়া যাইতেছেন ; সে ভাসার মধ্যে কোন নীতি, কোন ছন্দ, কোন পোর্বাপর্ষই নাই ; সংসারের স্থখদু:গের, হাসিকান্নার আলোছায়ার ছকের মধ্যে স্থায়শাস্ত্রের কোন বিধানই চলে না। আজ যাহাকে অষ্ঠায় বলিয়া নিন্দ করিতেছি কালই নুতনরূপে তাহাকে অভিনন্দন করিয়া লইতেছি, পরের মধ্যে যাহাকে নিন্দনীয় বলিতেছি নিজের মধ্যে তাহারই একটা সঙ্গত অর্থ ও যুক্তি খুজিয়া পাইতেছি ; আজ যাহা মিথ্য: কাল তাহ। সত্যের আকারে দেখা দিতেছে । ইহাই জীবন, ইহাই মহাপ্রাণের স্রোতাবত, ইহাই জগৎ যাহা অহরহ পরিবত% নের ভিতর দিয় নব নব রূপে চলিতেছে । স্থায় অস্ত্যায়ের কোন সনাতন মানদণ্ডে ইহাকে বিচার করা যায় ন । মানুষের বুদ্ধি ও দৃষ্টি যেখানে একান্ত সীমাবদ্ধ, যেখানে মানুষ কোন কিছুরই শেষ কথা জানিতে পারে ন, শেষ রূপ দেখিতে পায় না, সেখানে নিন্দ কবি কাহাকে, মিথ্য বলিব কাহাকে ? কোন মুঢ় অভিমানে বিচারকের আসন গ্রহণ করিব ? যদি সে আসন গ্রহণ করি তবে নিজেই দেখিব যে পদে পদে ভুল কল্পিতেছি। ইহাই তৃণখণ্ডের মূলকখী । কিন্তু লেখক দার্শনিকও নহেন, নীতিকথা প্রচার করাও তাহার উদ্দেগু নহে ; তিনি রসিক কবি ; সংসারের লজিকহীন দুঃখের প্রতি তাহার স্বগভীর সহানুভূতি আছে ; সেই ভাবেই তিনি জীবনকে নানারূপে দেখিয়াছেন এবং তাঁহারই কথ: কিছু এখানে প্রকাশ করিয়াছেন । ডাক্তণপ্লেক্স জগৎ রোগীর জগৎ ; সে জগতে বীভৎস রসের প্রকাশ অতি সহজে হয় ; ভূণখণ্ডের কয়েকটি চিত্রে বীভৎস রসের ইঙ্গিত বে নাই তাহ' নহে ; কিন্তু তাহাকে ছাপাইয় ফুটিয়া উঠিয়াছে লেখকের মানুষের দুঃখবেদনার প্রতি অপরিসীম সমবেদন ও দরদ। কিন্তু সে দরদের মধেr স্বাকামি নাই, তাহ অকারণে অসময়ে অশ্রুবিসর্জন করিয়া নিজেকে ভারমুক্ত করিতে চাহে নাই ; যে অশ্রু জমিয় উঠিয়াছে তাহ: লেখকের বুকেরই মধ্যে, চোখে ফোটে নাই। বরং স্থানে স্থানে লেখক মিনিসিজমের স্থান করিয়াছেন । কিন্তু সে ভানও টিকে নাই ; তাহার অন্তরের করুণাগমুদ্বেল মামুনটি গ্রন্থের সর্বত্র আত্মপ্রকাশ করিয়াছে। জাপাপী এক চিত্রকরের সুদীর্ঘ একটি ছবি দেখিয়াছিলাম ; তাহ: খণ্ডে পণ্ডে অঙ্কিত ; প্রত্যেক পণ্ডই একটি স্বতন্ত্র ছবি ; কিন্তু একটি স্বল্প যোগসুত্র এই গণ্ডগুলিকে একত্রে বাধিয়া রাখিয়াছিল এবং শেষ ছবিটিতে প্রথম ছবিটি পরিণতি লাভ করিয়াছিল। তৃণপও পড়িতে পড়িতে সেই ছবির কথা মনে হইল । সেই জগাই ইহাকে উপন্যাস না বলিয়, ছবিসমষ্টি বলিয়াছি । - সকলের তৃণখণ্ড পড়িয় ভাল লাগিবে কিল। জানি ন;, আধগল্প তে: লাগিয়াছে। স্থানে স্থানে ইহার রিয়ালিজম্ ক্ষণিকের জন্ত মনকে রূঢ় আঘাত দিবে ; কিন্তু জীবনই যে সেই রকম ; ইহার রিয়ালিজম যাহাকে বিমুখ করিয় দিল সে জীবনের সমগ্র রূপ দেখিল না, কিন্তু বে: দেখিল সে ধন্ত হইল । - শ্রীতানাথনাথ বসু ছন্দ-বাণী ( কবিতা) – শান্তি পাল । ক্লন পাব্লিশিং হাউস ২৭২, মোহন বাগান রে, কলিকাতা; মূল্য এক টাকা ; পৃষ্ঠাঙ্ক ৪৩ ৷ এই গ্রন্থের কবিতাগুলিকে মোটামুটি চার শ্রেণীতে ভাগ করা চলে, ছন্দ-প্রধান কবিতা, রুদ্র রসের কবিতা, পল্লীকবিতা ও প্রেমের কবিতা । • - মাতন, সাত মাষ্টল ১৯৩৬, ১৫ • • মিটারস্, ছন্দ-প্রধান কবিত । এই কবিতাগুলিতে ছন্দের লীল এমন স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল যে কবি ভাষাকে লইয়া যথেচ্ছা ব্যবহার করিয়াছেন, বিদেশী ও দেশী শব্দের যুগল অঞ্চ - অবলীলাক্রমে ঢালাইয়াছেন । সাধারণ পাঠকের এই কবিতাগুলি ভাল লাগিবে--ইহ নি:সংশয়ে বলা বায় । আবিসিনিয়া, শ্মশান রদ্র রসের কবিতা । জগতের অত্যাচরিত উৎপীড়িতদের জন্য কবির দরজ কাব্যমুন্তি গ্রহণ করিয়াছে ; রুদ্র রসের সঙ্গে করুণ রসের মিশ্রণ ঘটিয়াছে ; কবিতা দুটিতেও ছন্দের ঐশ্বৰ্য্য আছে। পল্লী বর্ষ, ধান ক্ষেত, কৃপণের ব্যথা ও বরষায় পল্লীকবিতা । শান্তি বাবু প্রথমত পল্লীকবিতা দিয়া কাব্যজীবন আরম্ভ করিয়াছিলেন, কিন্তু কোন কোন পল্লীকবির স্থায় সেই খানেই থামিয়া যান নাই । পল্লী ছাড়াও আর দশটা বিষয়ে তাহার ঔৎসুক্য আছে ; দশটা বিষয়ে তাহার ঔৎসুক্য আছে বলিয়াই উহার পল্লীকবিতাও সার্থক হইয়াছে । আবিহুত, উৎকণ্ঠা, পলাতক, তুমি আর আমি, স্বনার, অন্ধকার, আবেদন, প্রেমের কবিত। এই গ্রন্থের নাম ছন্দ-বীণা হইলেও ছন্দের তার অপেক্ষ প্রেমের তারে বেশী বঙ্কার উঠিয়াছে। যাহারা শান্তি বাবুকে পল্লীকধি বলিয়াই জানেন তাহার। এ সব কবিতা পড়িয়া বিস্মিত হইবেন : আমরা হই নাই । শ্রীপ্রমথনাথ বিশী ভম-সংশোধন শ্ৰীমতা শাস্তু। দেবী রবীন্দ্রনাথের “পাশ্চাত্য ভ্রমণ” বহির সমালোচনায় লিপিয়াছিলেন, যে, “ইউরোপ প্রবাসীর পত্রে’র সেই গল্পটি বাঙ্গ পড়িয়াছে, যাহাতে এক ইংরেজ মহিলার শয়নকক্ষের বাহিরে দাড় করাইয়া রবীন্দ্রনাথকে বেহাগ রাগিণীর গান গাওয়াইবার কথা আছে। ইহা ভুল। গল্পটি "জীবনস্মৃতি”তে আছে। লেখিকা এই ভ্রম সংশোধন করিয়া আমাকে সিঙ্গাপুর হইতে চিঠি লিখিয়াছেন ;. রবীন্দ্রনাথ ঠাহাকে চিঠি লিখিয়া ইহা জানাইয়াছিলেন । —“প্রবাসী’র সম্পাদক