পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যদিও মূল সংস্কৃতে এখন মাত্র দুইখানি পুস্তক পাওয়া যায়— তত্ত্বসংগ্ৰহ-কারিকা ও জ্ঞানসিদ্ধি। ঐ সকল কাৰ্য্য আচাৰ্য্য শাস্তরক্ষিতের ভারতবাসকালের কীৰ্ত্তি। ভোটদেশে তাহার ধৰ্ম্মপ্রচারের কাহিনী অতি আশ্চৰ্য্য। - ১৯ খ্ৰীষ্টব্দে ভোট সম্রাট স্রোঙচন-স্গেমের পঞ্চম উত্তরাধিকারী খ্ৰী-ম্রোং-ন্দে-বচন সিংহাসন আরোহণ করেন, তিনি তখন বালকমাত্র। এই সম্রাটই তিব্বতের ধৰ্ম্মাশোক। সে-সময় চীন ও ভোটদেশে ঘনিষ্ঠ বৈবাহিক সম্বন্ধ ছিল এবং লাসায় ঐ কারণে অনেক চীনা বৌদ্ধ ভিক্ষুর সমাগম হইত। সম্রাটের ধৰ্ম্মলিপা তাহাতে তৃপ্ত না হওয়ায় তিনি ধৰ্ম্মে ও ধৰ্ম্মগ্রন্থে জ্ঞানবান কোন আচার্যাকে আনিবার নিমিত্ত ভারতে লোক পাঠান। ভোট রাজদূত প্রথমে বজাসন অর্থাৎ বুদ্ধগয়া গিয়া সম্রাটের দরুণ পূজা নিবেদন করেন, পরে নালন্দায় যান। আচাৰ্য্য শাস্তরক্ষিত নেপালে আছেন, সেখানে এই সন্ধান পাইয়া নেপালে গিয়া তিনি আচার্ধ্যের সম্মুখে সম্রাটের ভেট রাখিয়া রাজার প্রার্থনা নিবেদন করেন। আচাৰ্য্য স্বীকৃত হওয়ায় বহু সম্মানের সহিত লাসায় আনীত হন। সেখানে তাহার উপদেশ যথেষ্ট ফলপ্রস্থ হয়, বিশেষতঃ তরুণ রাজা অত্যন্ত প্রভাবিত হইলেন। কিন্তু সভাসদৃবর্গ ও অন্য অনেকে ইহাতে অসন্তুষ্ট হইয়া, ঐ সময়ে দেশে পীড়ায় ও অন্য যে সকল উপদ্রবের প্রকোপ চলিতেছিল, শাস্তরক্ষিতের শিক্ষার ফলে স্থানীয় দেবদেবীদের রোষই তাহার কারণ বলিয়া প্রচার করেন। ইহাতে শান্তরক্ষিত নেপালে প্রত্যাবৰ্ত্তন করেন ( খ্ৰীঃ ৭২৪ ) । তিনি চলিয়া আসিলে চীন দেশের সঙশী প্রদেশের বহু বিদ্বান বৌদ্ধ লাসায় আগমন করেন। দরবারে তাহাদের বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করা হয়, রাজাও যথেষ্টরূপে প্রভাবিত হন। কিন্তু কিছুকাল পরে রাজার পুনৰ্ব্বার বর্ষীয়ান ভারতীয় আচাৰ্য্যকে আনিবার ইচ্ছা হয় এবং এইরূপে রাজনিমন্ত্রণে আচাৰ্য্য শাস্তরক্ষিত দ্বিতীয় বার লাসায় গমন করেন ( খ্ৰীঃ ৭২৬ )। ভোট ইতিহাসে লিখিত আছে যে, এইবার স্থানীয় দেবদেবীর রোষ হইতে রক্ষা পাইবার জন্ত তিনি উড়িষ্যারাজবংশোদ্ভব আচাৰ্য্য পদ্মসম্ভবকে আনয়ন করিতে সম্রাটকে অনুরোধ করেন। কথিত আছে আচাৰ্য্য পদ্মসম্ভব আসিয়া মন্ত্রবলে ভোটদেশের দেবদেবী ডাকিনী-যোগিনী যক্ষিণী-সপিণী ভূতপ্রেত যক্ষবেতাল আদিকে পরাস্ত করিয়া বৌদ্ধধৰ্ম্মে সহায়তা করার প্রতিজ্ঞায় উহাদের আবদ্ধ করিয়া ছাড়েন । আচাৰ্য্য তাহার পর সম্রাটের সাহায্যে লাস হইতে দুই দিনের পথ দক্ষিণে ব্ৰহ্মপুত্রতটে বসম্যম্ (সমৃ-য়ে ) বিহার নিৰ্ম্মাণ ( অগ্নি-স্ত্রী-শশবর্ষ= ৭৩৭ খ্ৰী: ) আরম্ভ করিয়া দ্বাদশ বর্ষ পরে (ভূমি-স্ত্রী-শশবর্ষ = ৭৩৮ খ্ৰীঃ) তাহার নিৰ্ম্মাণ শেষ করেন। সমূ-য়ে বিহার উদস্তপুরী বিহারের নমুনায় তৈয়ারী এবং ইহা দ্বাদশপ্রাঙ্গণযুক্ত ; ইহাই ভোটদেশের প্রাচীনতম বিহার। বিহার নিৰ্ম্মিত হইলে বৌদ্ধধৰ্ম্মের বহুল প্রচারের পর, তিনি ভোট দেশে ভিক্ষু-আচার কিরূপে গ্রহণ করিতে হয় দেখাইবার জন্য দ্বাদশ জন মূল সৰ্ব্বাস্তিবাদীকে আহবান করিয়া তাহাদের সম্মুখে জল-মেযবর্ষে ( ৭৪২ খ্ৰী: ) য়ে শেস রঙ, পো ( জ্ঞানেন্দ্র ) আদি সাত জন ভোটীয়কে ভিক্ষু করেন । আচাধ্য শাস্তরক্ষিত র্তাহার ভোটীয় শিষ্যবর্গের সহিত কয়েকখানি সংস্কৃত পুস্তকের অনুবাদ করিয়াছিলেন কিন্তু ছুএকটি ভিন্ন সেগুলির কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না। কথিত আছে, আচাৰ্য্য অন্তিম সময়ে শিষ্য খ্ৰী-স্রোঙকে ডাকিয়া বলেন যে এদেশে অস্তবিবাদ আরম্ভ হইলে তাহার ছাত্র কমলশীলকে যেন ভারতবর্ষ হইতে আনা হয়, তিনি বিবাদ ভঞ্জন করিয়া দিবেন। আচার্ষ্য শাস্তরক্ষিত তখন প্রায় শতবর্ষবয়স্ক বৃদ্ধ, (আনুমানিক ৭৫ - খ্ৰী: ), সে-সময় কোন দুর্ঘটনায় তাহার এই স্বদীর্ঘ ও যশোময় যাত্রা সমূয়েতে শেষ হইয়া গেল। তাহার পবিত্র দেহাবশেষ আজও সমূ-য়ের এক চৈতো, অতীতে ভারতীয় পণ্ডিতদের বাৰ্দ্ধক্য ও জরার প্রতি অবহেলা ও কৰ্ত্তব্যে দৃঢ়সংকল্পের জলন্ত দৃষ্টান্তস্বরূপ বিরাজ করিতেছে। র্তাহার দেহান্তের পর ভিক্ষুদের মধ্যে বিবাদ-বিসম্বাদ আরম্ভ হইলে রাজা আচার্য্যের উপদেশমত কমলশীলকে নিমন্ত্রণ করিয়া আনিলে তিনি লাসায় আসিয়া শাস্ত্রার্থ প্রচার করিয়া বিবাদের শাস্তি করেন। আচাৰ্য্য শাস্তরক্ষিতকে তিব্বতে বৌদ্ধধৰ্ম্ম-সংস্থাপক বলিয়া ভোটবাসিগণ মানিলেও, সিংহলে যেরূপ মহেঞ্জের স্মৃতিপূজার উৎসব হয়, আচার্ঘ্যের উদ্দেশ্বে সেরূপ কিছু ভোটদেশে হয় না। কারণ খুজিতে বেশীদূর যাইতে হইবে না। ভোটদেশে ভগবান বুদ্ধের স্বাভাবিকতাপূর্ণ, মধুর, সরলহদয়স্পশী স্থত্রের ততটা সম্মান নাই, যতটা ভূতপ্রেত-যাদুমন্ত্রের আছে। শাস্তরক্ষিত যদিও তন্ত্রগ্রন্থ লিখিয়াছিলেন, তথাপি তিনি গম্ভীর দার্শনিকই ছিলেন, স্বতরাং তাহাতে ভোটবাসীদের ভূক্তশাস্তিমন্ত্র-ক্ষুধার উপশম হয় নাই। পদ্মসম্ভব ও অন্য লোক পাইয়া বোধ হয় তাহা হইয়াছিল, এই কারণেই অতি বৃহৎ গুম্বা ছাড়া অন্য কোথাও পণ্ডিত বোধিসত্বের ( শাস্তরক্ষিত) চিত্র বা মূৰ্ত্তি দেখা যায় না, যে-স্থলে পদ্মসম্ভবের চিত্র ঘরে ঘরে অাছে। [ ক্রমশঃ ]