পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রবাসা একটি মহাগ্রস্থ যাহার শেষ গও বাহির হইতে বাকী আছে এবং অদূর ও দূর ভবিষ্যতে যেমন যেমন কিছু বাহির হইবে সঙ্গে সঙ্গে বাহির হইতে কিছু বাকীও থাকিয়! যাইবে-শাস্ত্র বলিতে থাকিবেন, “সম্ভবামি যুগে যুগে " বিশ্ববিদ্যালয়ের পদবী-সম্মান-বিতরণ-সভা কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গত বাষিক কনভোকেগুনে অর্থাৎ ( রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ) পদবী-সম্মান-বিতরণ-সভায় কবিসাৰ্ব্বভৌম বাংলায় লিখিত র্তাহার অভিভাষণ পাঠ করেন । এই সভায় বাংলা ভাষায় বক্তৃত৷ এই প্রথম झ्झेल । কবি তাহার অভিভাষণে বলিয়াছেন— "দুর্ভাগ্য দিনের সকলের চেয়ে দুঃসঙ্গ লক্ষণ এই বে. সেই দিনে স্বতঃস্বীকাৰ্য্য সত্যকেও বিরোধের কণ্ঠে জানাতে হয় ।” বঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষায় কনভোকেশুনের বক্তৃতাকে যে একটি গৌরবের বিষয় বলিয়া সাংবাদিকদিগকে ও অন্ত কাহাকেও কাহাকেও বলিতে হইয়াছে, “বিরোধের কণ্ঠে” সে সম্বন্ধে এই টিপ্পনী করিতে হইতেছে, যে, বঙ্গের যেকোন সভায় বাংলার ব্যবহার যে কৰ্ত্তব্য তাহা একটি স্বতঃস্বীকার্য্য সত্য, সুতরাং সেই সত্যের অনুসরণ জয়ধ্বনির সহিত ঘোষিত হওয়া “দুর্ভাগ্য দিনের একটি “দুঃসহ লক্ষণ”। তথাপি, আমাদিগকে স্বীকার করিতে হইতেছে, যে, যাহা স্বতঃস্বীকাৰ্য্য, যে বাধাবশতঃ তাহ এ পর্য্যস্ত কাৰ্য্যতঃ স্বীকৃত হয় নাই, সেই বাধা অতিক্রাস্ত হওয়া গৌরবের বিষয় এবং প্রধানতঃ র্যাহাদের চেষ্টায় তাহা অতিক্রাস্ত হইয়াছে র্তাহারা ধন্যবাদভাজন । আর একটি স্বতঃস্বীকাৰ্য্য সত্য এবার কনভোকেশুনে কাৰ্য্যতঃ স্বীকৃত হইয়াছে—বাঙালী ছাত্রেরা ধুতি পরিয়া পদবী-সম্মান লইতে পারিয়াছে। গাউনের পরিবর্তে দেশী কোন রকম শোভন পরিচ্ছদ ব্যবহৃত হইতে পারিলে পরিবর্তনটি পূর্ণাঙ্গ হইবে। কাগজে বাহির হইয়াছিল যে, কবি এই কারণে গাউন পরিতে রাজী হন নাই যে, উহাতে একটা অবাস্তবতা ( unreality ) আছে। তাহা সত্য। কবি এই বলিয়া তাহার বক্তব্য আরম্ভ করেন— এদেশে অনেক কাল জানিয়ে আসতে হয়েছে যে, পরভাষার মধ্য দিয়ে পরিশ্রুত শিক্ষায় বিদ্যার প্রাণীন পদার্থ নষ্ট হয়ে যায় । SNSBNご ভারতবর্ষ ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো দেশেই শিক্ষার ভাষা এবং শিক্ষার্থীর ভাষার মধ্যে আত্মীয়তাবিচ্ছেদের অস্বাভাবিকতা দেখা যায় না । যুরোপীয় বিদ্যায় জাপানের দীক্ষা এক শতাব্দীও পার হয় নি । তার বিদ্যারম্ভের প্রথম সুচনায় শিক্ষণীয় বিষয়গুলি অগত্য বিদেশী ভাষাকে আশ্রয় করতে বাধ্য হয়েছিল । কিন্তু প্রথম থেকেই শিক্ষাবিধির একাস্ত লক্ষ্য ছিল স্বদেশী ভাষার অধিকারে স্বাধীন সঞ্চরণ লাভ করা । কেননা যে-বিদ্যাকে আধুনিক জাপান অভ্যর্থনা করেছিল সে কেবলমাত্র বিশেষ সুযোগপ্রাপ্ত সঙ্কীর্ণ শ্রেণীবিশেষের অলঙ্কারপ্রসাধনের সামগ্ৰী ব’লেই আদরণীয় হয় নি, নির্বিশেষে সমগ্র মহাজাতিকেই শক্তি দেবে ই দেবে ব'লেই ছিল তার আমন্ত্রণ । এই জন্যই এই শিক্ষার সর্বজনগম্যতা ছিল অত্যাবশ্যক । যে শিক্ষা ঈর্ষপরায়ণ শক্তিশালী জাতিদের দম্ভ্যবৃত্তি থেকে জাপানকে আত্মরক্ষায় সামর্থ্য দেবে, যে শিক্ষা নগণ্যতা থেকে উদ্ধার ক’রে মানবের মহাসভায় তাকে সম্মানের অধিকারী করবে সেই শিক্ষার প্রসারসাধন-চেষ্টায় অর্থে বা অধ্যবসায়ে সে লেশ মাত্র কুপণত করে নি। সকলের চেয়ে অনর্থকর কুপণতা বিদ্যাকে বিদেশী ভাষার অন্তরালে দূরত্ব দান করা —ফসলের বড়ো মাঠকে বাইরে শুকিয়ে রেখে টবের গাছকে আঙিনায় এনে জলসেচন করা । দীর্ঘকাল ধ’রে আমাদের প্রতি ভাগ্যের এই অবজ্ঞা আমরা সহজেই স্বীকার ক’রে এসেছি । নিজের সম্বন্ধে অশ্রদ্ধা শিরোধার্য্য করতে অভ্যস্ত হয়েছি, জেনেছি যে সম্মুখবর্তী কয়েকটা মাত্র জনবিরল পঙক্তিতে ছোটো হাতার মাপে ব্যয়কুণ্ঠ পরিবেষণকেই বলে দেশের এডুকেশন । বিদ্যাদানের এই অকিঞ্চিৎকরত্বকে পেরিয়ে যেতে পারে শিক্ষার এমন ঔদার্য্যের কথা ভাবতেই আমাদের সাহস হয় নি, যেমন সাহারা-মরুবাসী বেদুরিনরা ভাবতেই সাহস পায় না যে, দূরবিক্ষিপ্ত কয়েকটা ক্ষুদ্র ওয়েসিসের বাইরে ব্যাপক সফলতায় তাদের ভাগ্যের সম্মতি থাকতে পারে । আমাদের দেশে শিক্ষা ও অশিক্ষার মধ্যে যে প্রভেদ সে ঐ সাহার ও ওয়েসিসেরই মতো, অর্থা • পরিমাণগত ভেদ এবং জাতিগত ভেদ । আমাদের দেশে রাষ্ট্রশাসন এক কিন্তু শিক্ষার সঙ্কোচবশত চিত্তশাসন এক ত’তে পারে নি । বতমান কালে চীন জাপান পারস্ত আরব তুরস্কে প্রাচ্য-জাতীয়দের মধ্যে সর্বত্র এই ব্যর্থতাজনক আত্মবিচ্ছিন্নতার প্রতিকার হয়েছে, হয় নি কেবলমাত্র আমাদেরই দেশে । বলা বাহুল্য, তাহার কারণ সেই সব দেশ স্বাধীন, আমাদের দেশ পরাধীন। র্তাহার বক্তৃতার শেষে এই প্রার্থনাটি ছিল— হে বিধাতা, দাও দাও মোদের গৌরব দাও দুঃসাধ্যের নিমন্ত্রণে দুঃসহ দুঃখের গর্বে। টেনে তোলো রসাত্ত ভাবের মোহ হ’তে সবলে ধিক্কত করে৷ দীনতার ধুলায় লুণ্ঠন ৷ দূর করে চিত্তের দাসত্ববন্ধ, ভাগ্যের নিয়ত অক্ষমতা,