পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পশ্চিমের যাত্রী শ্ৰীসুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় [৪] ভিয়েনা-ফ্রয়ড-এর সঙ্গে দেখা ভিয়েনার অশীতিবর্ষদেশীয় জ্ঞানবৃদ্ধ আচাৰ্য ফ্রয়ড,কর্তৃক প্রবর্তিত মনস্তত্ববাদ আজকালকার চিন্তাধারায় একটা যুগান্তর এনে দিয়েছে। এই মনস্তত্ত্ববাদটা কি, তা বিশেষজ্ঞরা বাঙলায়-ও সাধারণের উপযোগী ক'রে জানাবার চেষ্টা ক'রেছেন । আমি ও বিষয়ে অব্যবসায়ী, তাই অনধিকারচচ্চ করবো না । আমার বন্ধুদের মধ্যে ক'লকাতায় শ্রযুক্ত গিরীন্দ্রশেখর বস্থ আছেন, তিনি ক'লকাতার ‘সাইকো-আনালিটিকাল সোসাইটি-র সভাপতি, আর ফ্রয়ড-দর্শনের অন্যতম প্রধান ব্যাখ্যাত ; পাটনার অধ্যাপক শ্রযুক্ত রঙ্গীন হালদারও ফ্রয়ড-এর মতবাদের আর একজন অভিজ্ঞ পরিপোষক । এবার ইউরোপ-ভ্রমণের কালে ভিয়েনায় আসবে শুনে, বিশেষ নিৰ্ব্বন্ধ আর উৎসাহের সঙ্গে বন্ধুবর হালদার মহাশয় আমায় ধরলেন, নিশ্চয়ত যেন আমি ভিয়েনায় থাকৃতে থাকৃতে একবার ফয়ড-এর সঙ্গে দেখা ক'রে আসি ; আমার নিজের বিশেষ আলোচ্য বিদ্যার সঙ্গে ফয়ড-এর যোগ না থাকলেও, অন্ততঃ পক্ষে ভারতবর্ষে ফয়৬-এর যে সমস্ত বন্ধু, অনুরাগী আর সম-দ্রষ্টা আছেন, তাদের হয়েও যেন তার সঙ্গে একবার সাক্ষাৎ ক'রে আসি । আধুনিক কালের বিজ্ঞানময় দর্শনশাস্ত্রের দিগগজদের মধ্যে ফ্র ড হচ্ছেন অন্ততম ; সুতরাং তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসাট তে। পরম আনন্দেরই কথা হবে ; তাই ভিয়েনায় গেলে তার সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা নিশ্চয়ই ক’রবে,—এই কথা শুনে, হালদার মহাশয় বিলাত-যাত্রার দিনই গিরীন্দ্র বাবুর কাছ থেকে ফ্রয়ড-এর কাছে লেখা আমার সম্বন্ধে এক পরিচয়-পত্ৰ অামায় এনে দেন । বীর বার ব’লে দেন, কথাপ্রসঙ্গে যেন ফ্রডকে আমি দুই-একটি গভীর তাত্তিক বিষয়ে তার অভিমত জিজ্ঞাস করি । ভিয়েনায় পৌছে হোটেলে উঠে দুই-এক দিন পরে ফ্রয় ড এর খোজ নিলুম। পোর্টিয়ের বা হোটেলের দ্বারীর কাছে জানলুম - ভিয়েনায় শহরের ভিতর ফ্রয়ড, আর থাকেন না ; আমাদের হোটেলের কাছেই Berggasse ব্যর্গ-গাসসে নামের রাস্তায় একটা বাড়ীতে এখনও তার চিঠিপত্র যায়-টায় বটে, কিন্তু ভিয়েনার উত্তরে Kobenzl কোবেনৎসল পাহাড়ের কাছে শহরতলীতে তিনি থাকেন। তিনি বুদ্ধ, অমুস্ত, দুৰ্ব্বল , তাই আর কারে সঙ্গে দেখা করেন না। টেলিফোন ছোন না ; টেলিফোন ক’রে কোনও ফল নেই, তার সেক্রেটারীদের কেউ গোড় থেকেই সাক্ষাতের বন্দোবস্ত ক'বতে অস্বীকার করবে ; বিশেষ কারণ না থাবলে তার সঙ্গে দেখা করা একরকম অসম্ভব। তাকে চিঠি লিখলে পরে, যদি তিনি উচিত মনে করেন তা হ’লে দেখা করতে রাজী হ'য়ে অতুকূল ভাবে লিখতে পারেন। আমি তখন গিরীন্দ্র বাবুর পূরিচয়-পত্রের সঙ্গে আমার কার্ড, কার্ডে আমার ভিয়েনার ঠিকান, আর আমি যে তার ভারতীয় বন্ধুদের পক্ষ হতে তার সঙ্গে দেখা করতে আসছি সে কথা জানিয়ে, যবে যখন যেখানে তার সুবিধা হবে, তদনুসারে দেখা করতে প্রস্তুত ত উল্লেখ করে, খামে সব পূরে' ডাকে ছেড়ে দিলুম, তার ভিয়েনার শহরের বাড়ীর ঠিকানায় । তিন দিন পরে টেলিফোনে হোটেলে খবর এল'—আগামী কাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় ভিয়েনার উনিশের পল্লীতে Strassergasse খ্রীস্সর-গাস্সে রাস্তার ৪৭ সংখ্যক বাড়ীতে তিনি সাক্ষাতের সময় ঠিক ক’রে জানাচ্ছেন। হোটেল থেকে সোজা আধ ঘণ্ট। পথ ট্রামে গিয়ে ষ্ট্রাস্সরগাসসেতে পৌছানো যায়। মিনিট পনর আগেই ফ্ৰয়ড-এর বাড়ীতে এসে পড়লুম। নিৰ্দ্ধারিত সময়-মত হাজির হবার জন্য রাস্তায় একটু পায়চারী করা গেল। উচু পাহাড়ে পথ, বাইসিকিল চড়ে যাওয়া চলে না, দু-চার জন ছোকরাকে দেখলুম বাইসিকিল থেকে নেমে বাইসিকিল হাতে ধ’রে নিয়ে যাচ্ছে, খাড়াই