পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ ‘ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার বিবরণ গু তত্ত্ববোধিনী পত্রিক হইতে উদ্ধত ৷ বঙ্গভূমিতে ব্রহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার বৃত্তাস্ত লিখিতে হুতলে রাজা রামমোহন রায়েরই ধৰ্ম্মসংঘটিত বিবরণ প্রণীত করিতে হয়। পরম শাস্ত্র প্রতিপাদ্য সনাতন ব্রহ্মোপাসনা এদেশ মধ্যে এককালে বিস্মৃত হইয়াছিল। কেবল তিনিই তাহাকে বিনাশের গ্রাস হইতে রক্ষা করিয়াছেন, নানা শাস্ত সন্ধান দ্বারা তাহার চিত্ত সংস্কৃত হইয়া এই হৃদয়ঙ্গম ঠষ্টল যে সৰ্ব্বকারণ পরব্রহ্মের উপাসনাই সত্য ধৰ্ম্ম এবং কেবল তাহাই পরম পুরুষার্থের একমাত্র কারণ। এই পরম ধৰ্ম্মকে তিনি একান্ত চিত্তে অবলম্বন করিলেন, ও স্বদেশীয় মনুষ্যকে আত্মজ্ঞান দ্বারা তৃপ্ত করিবার জন্য যত্নবান হইলেন । কিন্তু অনেক কাল পর্য্যস্ত ধনসাধনাদি বিষয় ব্যাপারে আবৃত থাকাতে নান। স্থানে তাঙ্গার অবস্থিতি করিতে হইয়াছিল ; আপনার প্রিয় কায্যে বহুদিবস মনোনিবেশ করিতে সমর্থ হয়েন নাই। পরস্তু ১৭৩৫ শকে রঙ্গপুর হইতে তিনি কলিকাতা নগরে আগমন পূর্বক বিচার দ্বারা ও গ্রস্তাদি প্রকাশ দ্বারা ব্রহ্মোপাসনা রূপ সত্য ধৰ্ম্ম স্থাপনে অত্যন্ত উদ্যোগী হইলেন । তৎকালে স্বদেশস্থ লোকদিগের মধ্যে শ্ৰীযুক্ত গোপীমোহন ঠাকুর, বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায়, জয়কৃষ্ণ সিংহ, কাশীনাথ মল্লিক, রাজা পীতাম্বর মিত্রের পুত্র বৃন্দাবনচন্দ্র মিত্র, গোপীনাথ মুনসী, রাজা কালীশঙ্কর ঘোষাল, রাজা বদনচন্দ্র রায়, স্বারিকানাথ ঠাকুর ও প্রসন্নকুমার ঠাকুর তাহার নিকট সর্বদ গমনাগমন করিতেন, এবং তাহার যথেষ্ট প্রতিষ্ঠা করিতেন । কিন্তু রাজা পৌত্তলিক ধর্মের অনাদর পূর্বক যখন সৰ্ব্বত্র তত্ত্বজ্ঞানের প্রসঙ্গ উত্থাপন করিতে প্রবৃত্ত হইলেন, তখন অনেকেই তাহার সংসর্গে বিরক্ত হইয় তাহার সহবাস ও আলাপাদি পর্য্যন্ত পরিত্যাগ করিলেন। কেবল ঐযুক্ত দ্বারিকানাথ ঠাকুর, রাজা কালীশঙ্কর ঘোষাল, জয়কৃষ্ণ সিংহ ও গোপীনাথ মুন্সীর সহিত র্তাহার হৃদ্যতা স্থিরতর রহিল । ১৭৩৭ শকে রাজা মানিকতলার উদ্যানগৃহে আত্মীয় সভা স্থাপন করিলেন, কিয়ৎকাল পরে সে স্থান পরিবর্ত হইয়া র্তাহার ষষ্ঠীতলার বাটীতে সভা হইত, তদনন্তর কতক দিবস তাহার শিমুলিয়াস্থিত ভবনে সভা হইয়া পুনৰ্ব্বার মানিকতলার উদ্যানে আরম্ভ হইয়াছিল। কলিকাতায় রাজা রামমোহন রায় চত, কিন্তু বেদ ব্যাখ্যার নিয়ম তৎকালে ছিল না । RSS সায়াহ্নকালে আত্মীয় সভাতে বেদপাঠ ও ব্রহ্ম-সঙ্গীত “ . রাজার অধ্যাপক শ্ৰীযুক্ত শিবপ্রসাদ মিশ্র বেদ পাঠ করিতেন ও গোবিন্দ মালা ব্ৰহ্ম সঙ্গীত গান করিত। খ্ৰীযুক্ত দ্বারিকানাথ ঠাকুর মহাশয় তথায় সময় সময় উপস্থিত হইতেন । ঐযুক্ত ব্ৰজমোহন মজুমদার, রাজনারায়ণ সেন, রামনৃসিংহ মুখোপাধ্যায়, দয়ালচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, হলধর বসু, নন্দকিশোর পম এবং মদনমোহন মজুমদার ইষ্ঠার শ্রদ্ধাম্বিত হইয়া ; ব্রহ্মোপাসনা রূপ পরম ধৰ্ম্মকে অবলম্বন করিলেন। সেই কাল অবধি ভূরি আলোচনার পরেও যখন অদ্যাপি এ ধর্শ্বের প্রতি লোকের বিষম দ্বেষ অবসন্ন হয় নাই, তখন সেই অন্ধ কালে তাহার। যে লোকাপবাদ হইতে নিষ্কৃত থাকিবেন ইহা কদাপি সম্ভব নহে। তাহাদিগের প্রতি লোকে স্বেচ্ছাচারী ও নাস্তিক শব্দ পৰ্য্যস্ত প্রয়োগ করিত। শ্ৰীযুক্ত জয়কৃষ্ণ সিংহ যিনি পূর্বে রাজার প্রিয়তম বন্ধু ছিলেন, তিনিও তাহার দ্বেষী হইয়া এমত অসত্য অপবাদ প্রচার করিতেন যে আত্মীয় সভাতে গোহত্যা হইয়া থাকে। কিন্তু রাজা রামমোহন রায় স্বীয় প্রতিজ্ঞাত কধ্যে কোন প্রকারেই পরাত্মথ হইলেন না। . স্পষ্ট শত্রু যাহারা তাহার নানা মতে তাহার বিরোধি; আচরণে সচেষ্ট হইল, আর যাহারা তাহার মিত্ররূপে স্বীকারকরিত তন্মধ্যেও অনেকে কেবল স্বার্থপর মাত্র ছিল । শ্ৰযুক্ত বৈকুণ্ঠনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় যিনি আত্মীয় সভার নির্বাহক ছিলেন তাহার অতি কপট ব্যবহার ছিল, তিনি রাজার সম্মুখে ব্রাহ্মধৰ্ম্মে আচল ভক্তি জানাইতেন, অথচ শ্রযুক্ত হরিমোহন ঠাকুরের নিকট প্রত্যহ গমন করিয়া বৈষ্ণব ধৰ্ম্মে দৃঢ় শ্রদ্ধ প্রকাশ করিতেন। অনেক ব্রাহ্মণ পণ্ডিত রাজার নিকট উপস্থিত হইয় দেবানন্দ ও পৌত্তলিকদিগের প্রতি দ্বেষ উক্তি করিতেন, ৪ আপনারদিগকে অতি শুদ্ধচিত্ত আত্মজ্ঞাননিষ্ঠরূপে ব্যক্ত করিতেন, রাজা আশুতোষ স্বভাবে র্তাহারদিগকে অতি স্ববোধ জ্ঞান করিয়া ধন দান করিতেন । কিন্তু তাহার রাজার নিকেতন হক্টতে বহির্গত হইবা মাত্র আপনারদিগের প্রচ্ছন্ন বেশ পরিত্যাগ পূর্বক তাহার প্রতি অতি কুশ্রাব্য কটুক্তি করিতে কিছু ত্রটি করিতেন না। শ্ৰযুক্ত রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা শ্ৰীযুক্ত নন্দকুমারবিদ্যালঙ্কার যিনি সন্ন্যাস আশ্রম গ্রহণ করিয়া হরিহরানঞ্জ