পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ ছেলেমানুষ-এবং একটু রাগী স্বভাবের হ'লেও দোষ ত তাদেরই। সে-ই এসে অবধি ক্রমাগত বেচারীকে অতিষ্ঠ ক'রে তুলেছে । বাড়ির মধ্যে দুর্গার আর চিহ্ন খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। দুই ভাই থেতে বসেছে, বৌদিদি দেওয়া-থোওয়া করছেন। তারও গল্পীর মুখ, বোনের ব্যথা র্তারও মনে বিঁধেছে নিশ্চয় । লজ্জায় স্থধানাথের মনে হ’তে লাগল, একছুটে এ-বাড়ির ত্রিসীমানা পেরিয়ে চলে যায়। নীরদ পান চিবোতে চিবোতে তাড়াতাড়ি পোষাক পরছে, সুধানাথ বলল—দাদা, আমিও আসি ? নীরদ বলল—কোন দরকার নেই। লম্ব ঘুম দাও। আজ আমি কাছারী থেকে সব জেনে-গুনে আসি। দরকার হ’লে কাল যেও । সুধানাথ বলল—তার চেয়ে ঘুরে আসি না কেন । একা—কাজকৰ্ম্ম নেই—সময় কাটে কি ক’রে ? —আর এক দফা ঝগড়া বধিয়ে নিও, সময় উড়ে যাবে। সুখে থাকতে ভূতে কিলোয় তোমায় ষ্টুপিড,– কৃত্রিম ক্রোধে নীরদ সুধানাথের দিকে চোখ পাকাল -- আমাদের কেউ একথা বললে ত আর ঘাড় ধ'রে ঠেলে না-দেওয়া পয্যন্ত মডি নে । মৃধানাথ আর প্রতিবাদ করল না । আলো খেলে গেল । একী তার মনেও অাশার ঐ ত মেয়ে-ঝগড়া করতে না পেরে এতক্ষণ তার দম আটকে আসছে নিশ্চয় । এমন চুপচাপ কতক্ষণ থাকবে আর ?...এটা সেটা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুম এসে গেছে । ঘুম ভাঙতে বেলা পড়ে এল । পাশেই মুখ ধোবার জল, ডিবেয় পান সাজানো । মাহুষ নেই। সুধানাথ সোজা ভিতরে চলে এসে ডাকল—বৌদি ? লীলা দুর্গার চুল বঁধেছিল । উঠে এসে তাড়াতাড়ি আসন পেতে দিল। গম্ভীর আনতমুখে দুর্গ ঘর থেকে চলে গেল । নিশ্বাস ফেলে সুধানাথ বলল—বোঁদি, আমার দোষ হয়েছে মানি । কিন্তু দোষটা কি শুধু এক পক্ষের ? বোনের পক্ষ নিয়ে রাগ করে তুমিও চুপচাপ বসে আছ—কিন্তু আমি দেওর না হয়ে ভাই হতাম যদি, এমন মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারতে ? লীলা বাধা দিয়ে তাড়াতাড়ি বলে উঠল—ন, না, ভাই— সপণঘণত RSసి তোমার দোষ কি ? আমন বললে কোন পুরুষমানুষের রাগ না-হয় বলে । আমাদের উনি যদি হতেন, চিরজন্মের মত আর মুখ দেখতেন না। ও দুগগ দুগগ, সত্যি বডড আদিগ্যেতা মেয়ের— বিরক্ত মুখে অলক্ষের দিকে তাকিয়ে আবার বলতে লাগল-ঐ রকম করে । রাগ ক’রে এক বেলা দু-বেলা খায় না, কথা বলে না। উনি আম্বন ওঁর কাছে মুখ গোমড়া ক'রে থাকবার জো নেই। পাঁচটা বেজেছে ত—উনি এই এলেন বলে--- অতএব তখন নীরদের আশায় স্বধানাথ মিনিট গুণত লাগল । সন্ধ্যার পর আবার সেই দালানের থাটে দুই জনে বসেছে । মৃধানাথ বলল—তার পর, কোটের খবর বল। কাজ যদি এমনি এমনি হয়ে যায়, কালই আমি চলে যাব, দাদ নীরদ বলল—কে তোকে এখানে জলবিছুটি দিচ্ছে, বল দিকি ? লীলা ঝঙ্কার দিয়ে উঠল—আর কে ? তোমার ঐ আহলাদী ঠাকরুণ। সেই সকাল থেকে আলাপ বন্ধ । এক দিনের জন্য এসেছে, ঝগড়াঝাটি ওর কাহাতক ভাল লাগে ? হো হে ক'রে ছাদফাট হাসি হেসে নীরদ বলল—অবস্থা গাঢ় হয়ে উঠেছে, বল। একটা দিনে এত উন্নতি ? আশ্চৰ্য্য ত! কিন্তু আসামী গেল কোথায় ?--আরে, অারে,-পালাস নে বোন, কথা বলতে হবে না—তুই আয় এখানে— ছুটে গিয়ে নীরদ দুর্গার হাত ধরে নিয়ে এল। মেজের উপর ঝুপ ক'রে দুর্গ বসে পড়ল। নীরদ বলল—আহা হা, ওখানে কেন ? ঐ টুলের উপর গিয়ে বোস। কাল বাজনা হয়েছে, গান শুনিয়ে দাও আজকে । আরে কথা না বল না-ই বললে—গান গাইতে দোষ কি ? ঘাড় নীচু ক'রে দুর্গ সেই যে বসল, কিছুতে আর নড়ান গেল না । নীরদ পাশে এসে কত বোঝাতে লাগল—অত রাগ করে না। রাগরঙ্গগুলো সব আগেভাগে হয়ে গেলে শেষকালের জন্য থাকবে কি ? শোন ভাই, কথা রাখ– একবার এক ফঁাকে উঠে দুৰ্গা পালিয়ে গেল। একেবারে বিছানায় গিয়ে পড়ল। নীরদ বলতে লাগল –ধর, ধর,— ।