পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

良之8 প্রবাসী ఫ్రెNడి 8 లి ফরাসী ভাষার কথা—রাসীন বা ভলতেয়ারের ফরাসী ভাষা। রবীন্দ্রনাথের প্রকৃতিতে, আবহাওয়ায় পাই রোমাণ্টিকের চিত্তস্ফূৰ্ত্তি—তাই তার ভঙ্গির লক্ষণ ঋজুতা ততখানি নয় ষতখানি কারুতা, স্বচ্ছতা ততখানি নয়, যতখানি বর্ণবিলাস, সারল্য নয় সালঙ্কারিত। চিস্তার ভাবের অমুভাবের কত রকমারি গমক প্রতিধ্বনি তার ভাষা ফুলিঙ্গের মত প্রতিপদে চারিদিকে ছড়িয়ে চলেছে। ব্যঞ্জনার সূক্ষ্মতা, বক্রোক্তির রেশ, চলনের লীলায়িত সোঁকুমাৰ্য্য আমাদিগকে আর এক জগতের দুয়ারে প্রতিনিয়ত নিয়ে চলে। প্রত্যক্ষের, বিচারবিতর্কের, যুক্তির যে ধারা ও ধরণ তাতে রবীন্দ্রনাথের রচনারীতি গঠিত বা নিয়ন্ত্রিত হয় নি। স্পর্শালু চিত্তের, তীব্র বোধশক্তির, নিবিড় উন্মুখী আদর্শপ্রিয়তার যে সহজাত বিবেক বা আকর্ষণ বিকর্ষণ তাই দিয়েছে তার ভাষার গড়ন ও গতি। তর্কবুদ্ধি বা যুক্তি এখানে তার পৃথক স্বাতন্ত্র্য নিয়ে দাড়ায় নি—সে জিনিষ এক সরস প্রাণের অপরোক্ষ অনুভবের যেন পরোক্ষ ফুরণ । দৃঢ়গ্ৰন্থি, গাঢ়বন্ধ, প্রশাস্ত প্রসন্ন হওয়ার অবকাশ বা প্রয়োজন এ ভাষার তেমন নেই— তার প্রয়োজন আবেগ, বেগ, ধার—এ যেন রবীন্দ্রনাথের নিজেরই মুরসভাতলে নৃত্য ক'রে চলে যে হিলোলবিলোল উৰ্ব্বশী তারই পায়ের ছন্দ । কিন্তু তাই বলে উচ্ছসিত, কেবলই ভাবাবেগফেনিল এ ভাষা নয়—এখানেও আছে বাধন, সংযম ; বঁধন সংযম ছাড়া ভাষার পারিপাট্য-সৌষ্ঠব কখনও আসতে পারে না । তবে সে বাধন এখানে নির্ভর করে লীলায়িত গতির আপন ছন্দের উপর—তার যুতি, তার নিজস্ব পদক্ষেপের মাপের উপর । ক্লাসিক-রীতিতে প্রতিফলিত বুদ্ধির স্বচ্ছতা, মুক্তির বাধন ও দৃঢ়তা, প্রমাণ-ক্রমের নিরাভরণত (যথা, ম্যাথু আৰ্ণল্ড ) কিন্তু কবির রচনায়, কবির গষ্ঠ য়চনাতেও দেখা দেয়, বুদ্ধির লজিক হয়ত নয়, কিন্তু অমুভবের লজিক—এ লজিক আরও জীবস্তু সচল । বাংলার তৃতীয় যে ভাষা-শিল্পী—আমি বলছি শরৎচন্দ্রের কথা—তার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বৈরূপ্য আমরা এখানে লক্ষ্য করতে পারি। শরৎচন্দ্রের ভাষা বঙ্কিমের মতই ঋজু স্বচ্ছ সরল—তবে বঙ্কিমে সব সময়ে মণ্ডন অলঙ্কার অপছন্দ করেন না—কিন্তু শরৎচন্দ্র একস্তি নিরাভরণ। কিন্তু এই নিরাভরণতার হেতু তার যুক্তিতন্ত্রত নয়—হেতু, তিনি দৈনন্দিন ভাষা, সাধারণের ভাষা, সকলের সহজ মুখের ভাষার ছাচে ঢেলে র্তার ভাষা গড়েছেন, তবে তাকে মেজেঘষে পরিষ্কার ক’রে ঝরঝরে তকৃতকে ক’রে নিয়েছেন। স্পষ্টত ঋজুতা সত্ত্বেও বঙ্কিমের হ’ল গুণীজনের ভায-নাগরিক বা পৌর ভাষা ; শরৎচন্দ্রের বলা যেতে পারে “গ্রামিক” ( গ্রাম্য বলা দোষ হবে ) বা জনপদ ভাষা । তবে শরৎচন্দ্রের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সাদৃপ্ত এইখানে যে উভয়ের ভাষাই গতিমান, এমন কি থর গতিমান, বেগময় এমন কি তীব্র বেগময়। যদিও গতির ভঙ্গীতে বৈসাদৃপ্ত রয়েছে । রবীন্দ্রনাথের ভাষা দ্রুত চলেছে বটে কিন্তু একেবেকে, এদিক সেদিক ঘুরে ফিরে, আশেপাশে দেখে শুনে, অফুরন্ত মন্তব্য বক্তব্য প্রকাশ করতে করতে, কৌতুহলের ঝলক ছড়াতে ছড়াতে—তাতে ফুটে উঠেছে আলপনার লীলায়িত রেখাবলী। শরৎচন্দ্র চলেন সোজ৷ তার লক্ষ্যে—জ্যামিতিক সরল রেখায় হয়ত নয়—তার পথ ঈষৎ বক্ৰ-বৃত্তাভাস--তীরমার্গের মত। এবং এ বক্রতা এসেছে আবেগের অস্তমুখী গাঢ়তা ও তীব্রতার চাপে। দামাস্কাস ইস্পাতের মত তা শাণিত ক্ষুরধার, নমনীয় অথচ মৃদু । বলা যেতে পারে রবীন্দ্রনাথের গতি হ’ল ঝরণার – বহুল ধ্বনিতে বিচিত্র বর্ণে তা সমৃদ্ধ । শরৎচন্দ্রের হ’ল নিঃশব্দে আকাশচারী লঘুপক্ষ পার্থীর গতি। বঙ্কিমের মধ্যে আমরা পাই প্রশান্ত প্রসাদগুণ, পরিচ্ছিন্ন পারিপাট্য—রবীন্দ্রনাথে কারুকাৰ্য্যবলয়িত বৈদগ্ধ্য—শরৎচন্দ্ৰে সবেগ সারল্য। রবীন্দ্রনাথের অলঙ্কারিতার কথা আমি বলছি। কিন্তু মনে রাখতে হবে এ অলঙ্কার স্কুল ভূষণ আদৌ নয়। দ্রাবিড় প্রসাধনের গুরুভার এখানে অণুমাত্র নেই—আধুনিক গয়নার মত তা হালকা পাতলা ; সোনার তার পিটিয়ে অতি সরু করে তবে তা দিয়ে যেন বহুভঙ্গ লতাপাত৷ কাটা হয়েছে—এ কারুতা হ’ল চারুতা। কারণ তার কাজ হুক্ষ মিহি-চিকণ বাহ আড়ম্বর, স্থল হস্তের অবলেপ নেই—অঙ্গে অঙ্গে তার রয়েছে সৌকুমাৰ্য্য, বলয়িত লাস্ত । আজ বাংলা ভাষা নিত্য নূতন হষ্টির জন্য উন্মুখী উদ্ব্যগ্র। অনেক নব সেবকের হাতে সে যে উন্মার্গগামী হয়ে পড়বে, তাও স্বাভাবিক। এদিক দিয়ে রবীন্দ্রনাথের উদাহরণটি