পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ প্রতিক্রিয় স্বরূপই বোধ হয় প্রশংসায় উচ্ছসিত হ’য়ে বললে, “কি আশ্চৰ্য্য আপনার এই ভোলাদ । যতই ওকে দেখছি আর ওর কথা শুনছি, আমার মনে হচ্ছে যেন ও সেই নাইটদের যুগ থেকে এ যুগে হঠাৎ কেমন ক’রে খসে পড়েছে । আচ্ছা, সেদিনও তে ভোলাদাই আপনাদের সঙ্গে ছিল, না ?” “কোন দিন ?” পাৰ্ব্বতী অনবধানে এলাহাবাদে কুম্ভমেলার ঘটনার উল্লেখ করতে গিয়ে হঠাৎ সচেতন হয়ে থেমে গৈল এবং মনে মনে নিজের অন্যমনস্কতাকে প্ৰগল্‌ভত মনে ক’রে একটু লজ্জিত হয়ে চুপ করলে। শচীন্দ্রও প্রশ্ন করেই বুঝেছিল পাৰ্ব্বতী কোন দুদিনের কথা নি . প্রশ্ন করতে গিয়ে চুপ ক'রে গেল । সেও আর দ্বিতীয় বার প্রশ্ন না ক'রে চুপ করেই রইল। তার মনের মধ্যে সেইদিনকার সব ছবি সুস্পষ্ট হ’য়ে ভেসে উঠল—এবং একটা গভীর দীর্ঘনিশ্বাস তার বুক ভেঙে বেরিয়ে এল । কমলের স্মৃতি তার কাছে এখন একটা গভীর বিষাদপূর্ণ অভাবের দুঃখ, কিন্তু তার পুত্রের অভাব তার মনের মধ্যে তীব্র স্পর্শযোগ্য প্রত্যক্ষ বেদনার এই জব্‌চ বোধ করি তার অবসর সময়ে কমলের চিস্তকে যদিই বা সে মনের মধ্যে আলোচল করত অনুপস্থিত কমলের সাহচর্য্যের কিন্তু থোকার কথাকে সে মনের মধ্যে আমল দিতে প্রস্তুত ছিল না । মত | মত ; নিজের নিজের স্বপ্নে আচ্ছন্ন হয়ে নি:শব্দে দু-জনে বোটে ফিরে গেল । ( >० ) দুপুরে পেয়েদেয়ে পাৰ্ব্বতী বললে, “চলুন, শচীন বাবু জলিবোটটা নিয়ে একটু বেড়িয়ে আসি ৷ পিসীমাকে তো আর ডাঙায় নামানে যাবে না। এই লঞ্চের কোটরে বসে বসে তার বোধ হয় কোমরে বাত ধ’রে গেল। চলুন একটু বেযে ঐ চড়াটায় ধাওয়া যাকৃ। চধা ক্ষেতটেত দেখলে তিনিও একটু ধাতে আসবেন। ভারী চমৎকার লাগছে জায়গাট মানুষের মন RNరిపి আমার । সমস্ত দিন কিছুতেই এই ইদুরের গৰ্ত্তে বসে থাকতে পারব না ।” শচীন বললে, “আচ্ছ বেশ ত ; মাল্লার খাওয়া-দাওয়া সেরে নিকৃ। আমি ততক্ষণ ভোলাদা আর বাহাদুর সিংকে নিয়ে বাড়ি আর জমিট একটু তদারক ক’রে আসি । ঘণ্টাখনেকের মধ্যেই ফিরে আসব, তোমরা প্রস্তুত থেকে। 17 “বেশ ত লোক। আমি হঁ৷ ক’রে ঘণ্টাপানেক এথানে বসে পানকৌড়িদের ডুবসাতার দেখব, না ? সেটি হচ্ছে না। আমি হ’লাম নারী-প্রতিষ্ঠানের প্র-নেত্রী, আর আমি থাকব পিছনে পড়ে ? যেতে হয় আমিও যাব । আমার ভবিষ্যৎ আস্তান আমায় দেখে-শুনে নিতে হবে না ?” শচীন একটু মুস্কিলে পড়লো। নদীর ধারে ধারে সকালে তারা যেটুকু বেড়িয়ে এসেছিল তার মধ্যে বিপদের আশঙ্ক। বড়-একটা ছিল না। কিন্তু এই নিশ্চিত অজ্ঞাত বিপদের মধ্যে বিশেষ আপত্তি ছিল । বাঘের পায়ের যে দাগ তার খালের ধারে দেখেছিল, তা মোটেই পুরনো নয়। তা ছাড়া এই এত কালের পোড়ো বাড়ির মধ্যে কোন দিক দিয়ে যে কি বিপদ কখন হ’তে পারে তা বলা শক্ত। তারা নিজের ত পোষাকটোষাক পারে, চামড়ার পটি পায়ে বেঁধে, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এক রকম ক’রে নিজেদের রক্ষার উপায় করেই যাবে। কিন্তু এই শ্বাপদসঙ্কল বনপথের ভিতর দিয়ে, অসংখ্য অজ্ঞাত বিপদের মধ্যে ঐ বাড়িতে একটি মেয়েকে সঙ্গে ক’রে যাওয় হতেই পারে না । সে এক রকম বিব্রত হয়েই বলে উঠয়া, “ন, না, তোমাকে নিয়ে ওখানে যাওয়া যাবে না । ভারি মুস্কিলে পড়া যাবে শেযকালে। কত রকম বিপদ হতে পারে কিছু বলা যায় না । তুমি থাক, আমরা খুব শীগগির ফিরে আসব।" তার পর পাৰ্ব্বতীর মুখ ভার দেখে বললে, “লক্ষ্মীটি, অবুঝ হয়ে না ; বুঝতেই ত পার---" পাৰ্ব্বতী কোন কথা না ব’লে নদীর অন্ত পারেব ধু-ধু-করা চরের দিকে চেয়ে চুপ করে রইল। সে বুঝেই চুপ করলে, ন, অভিমানে মন ভার করে রইল, তা বোঝা গেল ন} |