পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R80 প্রবাসী Nరిgsరి মনিব এবং অনুচরদ্বয় রীতিমত পোষাক ক'রে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে লঞ্চ থেকে নেমে গেল। যাবার সময় শচীন আবার পাৰ্ব্বতীকে একটু অমুনয়ের স্বরেই বললে, “রাগ করে না লক্ষ্মীটি, ভারী বিশ্ৰী জায়গা। নইলে নিশ্চয়ই তোমায়ু সঙ্গে নিতাম।” পাৰ্ব্বতী বললে, “ধাম না, আমি ত আপনাকে বারণ করি নি।” বলে বোটের কামরায় চলে গেল। মিছে শুধু কথাকাটাকাটি করে ফল নেই দেখে শচীনও প্রস্তুত হয়ে অম্লচর দু-জন নিয়ে বেরিয়ে পড়ল । নদীর ঘাট থেকে একটা ঢালু জমি বেয়ে অনেকখানি উপরে উঠতে হয়। বর্ষার জল নিশ্চয় দুৰ্দ্দম স্রোতে সেই পথে নামে । কারণ স্রোতে ক্ষয়ে যাওয়ায় গভীর খাদে এবড়েথেবড়ো পথ প্রায় লোকচলাচলের অযোগ্য হ'য়ে ছিল । বহু কষ্টে সেইটুকু পার হয়ে তারা কুঠির সামনের বিস্তৃত জমিতে এসে উঠল একটা বিরাট বটগাছের তলায় । এই বটগাছের তলার জমিটুকুই যা একটু পরিষ্কার । তার পরই জঙ্গল, মনে হয় বাড়ির ভিতর পর্য্যস্ত । গাছের পাতায় প্রচ্ছন্ন ছোট ছোট পার্থীর কূঞ্জনে সমস্ত প্রদেশটির জনহীনতা যেন প্রত্যক্ষ হয়ে উঠেছে। এই কালো পুরু মখমলের মত স্তব্ধ অন্ধকারে ছোট পার্থীদের এই মুদু কিচমিচ রূপালী শবে যেন ধ্বনির চুম্কি বসানে চলেছে। বাড়ির দোতলার প্রায় সমস্তটাই এখান থেকে চোখে পড়ে। প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড দরজা, তাদের সমস্ত খড়খড়িগুলি সম্পূর্ণ বন্ধ করে কি যেন একটা গভীর রহস্তের ইতিহাসকে মানুষের কৌতুহলের প্রগল্ভত থেকে গোপনে রক্ষা করছে । শচীন্দ্র খানিক ক্ষণ এদিক-ওদিক দেখে বললে, “ভোলাদ, দেখ তো ঘাট-পৰ্য্যন্ত নিশ্চয় কোন বাধানো পথ ছিল, একটু খুঁজলেই পাওয়া যাবে।" এই বলে সে নিজেই প্রথম এগিয়ে গেল পথের সন্ধানে। বড় বড় বটের ঝুরি নেমে জায়গাট প্রায় অন্ধকার ক’রে রেখেছে। উপর দিকে চাইলে চাপ চাপ অন্ধকারের অবকাশপথে সামান্য সামান্য আকাশের টুকুরো দেখা যায় মাত্র। সেই অবকাশপথ বেয়ে যে আলোটুকু নামে, তাতেই দুপুরবেলা গাছের তলার অন্ধকারটা অনেকখানি স্বচ্ছ দেখায়। তবু গাছের গুড়ির আশপাশের অন্ধকারগুলো যেন সব কিস্তৃত মূৰ্ত্তি ধরে গুড়ি মেরে হযোগের প্রতীক্ষায় নিৰ্ব্বাক নিশ্চল হয়ে আছে । নিঃশব্দে তার। চলেছে। শচীন্দ্র, ভোলানাথ, বাহাদুর সিং । ওর জুতোর আওয়াজটাও এই গাছের তলার ভিজে অন্ধকারে বেস্থর কর্কশ শোনাচ্ছে । মনে হয় স্তব্ধতার ছানারা এই হঠকারীদের স্পৰ্দ্ধায় চকিত হয়ে অন্ধকার কোটর থেকে যেন উকি মেরে পরম্পর চোথঠারাঠারি করছে আর বিরূপ বিস্ময়ে একেবারে নিৰ্ব্বাক হয়ে গেছে । হঠাৎ ভোলানাথ বজ্ৰকণ্ঠে সমস্ত আতঙ্কের রাজ্যকে উচ্চকিত ক’রে ধম্কে উঠলে, “এই বেটা হনুমান !” শচীন্দ্র চমকে পিছন ফিরে যা দেথল তাতে সে হাসবে না কাদবে ঠাওর করতে পারল না । ভোলানাথের মত শিকারের অভিজ্ঞতা না থাকলে সেদিন যে একটা কাণ্ডই ধটত একথ এক রকম জোর ক’রেই বলা যায় । গাছের গুড়ির কাছে অন্ধকারটা ধেখানে একটু গাঢ়, তার নীচে একটু লক্ষ্য করলে একটা লোহার বেঞ্চি দেখা যায় ; কতকাল আগে কুঠির সাহেবর। নদীর হাওয়া খাবার জন্য বেঞ্চিটা গাছতলায় পেতেছিল তার ঠিক নেই। বটের জটগুলি তখনও এই লৌহাসনকে স্পর্শও ক’রে নি। তার পর এই দীর্ঘ পঞ্চাশ বৎসর ধীরে ধীরে ধীরে এই সর্পিল শিশুজটগুলি কথন অতবড় লোহার আসনটিকে প্রায় সম্পূর্ণ আচ্ছন্ন ক'রে এনেছে, ত৷ কেউ দেখেও নি । অবশেষে বহুদিন পরে একটি বৃহৎ অজগর তার সন্তানসস্তুতি নিয়ে সেই বটজটাচ্ছন্ন কোটরে পরম নিশ্চিন্তে বসবাস ক'রে বহু জটাজটিল সেই প্রকাণ্ড বটবৃক্ষটিকে তার আহার ও বিহার ভূমিরূপে পরিণত করে তুললে। এই লৌহ-কোটরের একটি ছিদ্রপথে অজগর-মাতার কোন একটি চঞ্চল শিশু তার লীলায়িত পুচ্ছটিকে বোধ করি বায়ু সেবনেরই উদ্দেশ্বে বাইরে প্রসারিত ক'রে দিয়ে থাকবে। বাহাদুর সিংএর রেখামাত্র নয়নপথে এই দৃশুটি গোচর হবামাত্র তার চিত্তে রসিকতা-প্রবৃত্তি একটু প্রবল হয়ে উঠল। এবং কোমর থেকে কুকুরীটি বার করে সে নি:শব পদসঞ্চারে সেই বেঞ্চটির দিকে অগ্রসর হতে লাগল। মৎলব, সেই শিশু অজগরের দুঃশাসিত পুচ্ছটিকে কিঞ্চিৎ সংযত করা।