পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহশিক্ষা সম্বন্ধে দু-চারটি কথা ঐসুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর সহশিক্ষার বিষয়ে আলোচনা করতে যদি যা বলবার তী “আমি, আমার” ভাবে বলি, তাতে আশা করি আপনার অহমিক-দোষ ধরবেন না, কেননা এ বৈঠকে বক্তাদের নিজের নিজের কথা শোনবার জন্যেই ডাকা হয়েছে। শিক্ষা বলতে আমার মনে কি কি জিনিষ আসে, আগে তাই আপনাদের সামনে ধরি। শিক্ষা দেওয়ার মানে আমি বুঝি,—যে যা বুদ্ধিবৃত্তি নিয়ে জন্মেছে তাই জাগিয়ে বাড়িয়ে ফুটিয়ে তোলা। তা করতে হ’লে ছাত্রদের বুদ্ধিবৃত্তি নানা উপায়ে খাটাবার অভ্যাস করাতে হয় ; মনোহর ও হিতকারী তথ্য-তত্ত্বের পরিচয় দিতে হয় ; ভাষা ও ললিতকলা দিয়ে ভাব ব্যক্ত ও আদান-প্রদান করার কৌশল যোগাতে হয় । এই চুম্বক ফর্দের মধ্যে এমন কিছুই দেখি না, যা ছেলেমেয়েদের পক্ষে সমান দরকারী নয়, বা যার দরুন ছাত্রের জন্যে এক রকম, ছাত্রীর জন্যে অপর রকমের প্রণালী লাগে । এ কথা মানি যে, মেয়ে-পুরুষ স্বাভাবিক ক্ষমতায় যেটুকু তফাৎ সেই মত সংসারযাত্রায় তাদের কাজকৰ্ম্মও ভিন্ন, তাই বুঝে তাদের রকমারি শিক্ষাও লাগতে পারে ; কিন্তু সে হ’ল দ্বিতীয় আশ্রমের বেলায় । এখন আমরা আজকালকার প্রথম আশ্রমের, অর্থাৎ সাধারণ শিক্ষালয়ের, কথা ভাবছি। তাতে ত দেখা গেল, শিক্ষাপ্রণালীর মধ্যে জাতিভেদের কোন কথাই নেই ; তা হ’লে, যা-কিছু গোল শিক্ষার পাত্র-পাত্ৰী নিয়ে। কাজেই প্রশ্নটা দাড়াচ্ছে এই—আমাদের ছেলেমেয়ের যে কালটা শিক্ষালয়ে কাটায়, যে সময়ে তাদের চরিত্র তৈরি হ’তে থাকে, তখন তাদের মেলামেশা হওয়া, তাদের মধ্যে ভাবের বিনিময় চল, তারা পরস্পরকে বিদ্যাশিক্ষা সম্বন্ধে সাহায্য কর,—এ ব্যবস্থার পক্ষে বিপক্ষে কি বলবার আছে ? মানবলীলাভূমিতে লীলাময় যে নর-নারী-ভেদ বিধান করেছেন তাতে কতই না আধ্যাত্মিক রস ও শক্তির সঞ্চার হয়েছে। তার কিছু ভাগ শিক্ষালয়ের মধ্যে এনে ফেললে আপত্তি কি ? সেখানে কাজ বলুন, খেলা বলুন, বিদ্যাচার্চ বলুন, রসসঞ্চয় বলুন, ছেলেমেয়েরা সে সব মিলে-মিশে করলে উৎসাহ, আনন্দ, সফলত, কত বেড়ে যেতে পারে, তা কি লম্বা ক’রে বোঝাতে হবে? তা ছাড়, এ কথাও সবাই জানেন যে, শিক্ষালয়ের মাটিতে বন্ধুত্বের ফুল বড় সরেশ ফোটে। একে ত ধরাধামের ফুলের মধ্যে এইটেই সেরা তাতে আবার বন্ধুত্ব নরনারীর মধ্যে হ’লে তার বাহার বাড়ে বৈ কমে না। শেষে যদি বিবাহ পর্য্যন্ত পৌঁছয়, তবে সহ-শিক্ষিত দম্পতির পক্ষে সহ-ধৰ্ম্মের উপর গৃহস্থালী পত্তনের সস্তাবনা বেশী ত বলাই বাহুল্য ; যার ফলে সমাজ উজ্জল ও বংশ উন্নত হবার আশা করা যায়। আর, সেদিকে না গিয়ে, যদি নরনারীর বন্ধুত্ব ঘরের বাইরে ছড়িয়ে থাকে, তাতেও বিশ্বমৈত্রীর পথ খোলস হয়ে স্বদেশ ধন্ত হ'তে পারে । আমার ত মন বলে, সকল দেশ সম্বন্ধে এ কথাগুলি সত্য, —আমাদের দেশেই কি খাটবে না ? তবে কেন স্থাবরপন্থীর তরফ থেকে আপত্তির একটা সুর মানসূ-কানে আসছে— “আচ্ছা লোক ত তুমি ! ছেলেমেয়ের শিক্ষালয়ে দিব্যি ভাব জমাচ্ছে, হয়ত নিজে নিজে বিয়ের ঠিক করছে, মাবাপের অতুমতি বা পরামর্শের অপেক্ষ নেই, জাত-কুল বিচারের চেষ্টা নেই ; প্রাচ্য নারীচরিত্রের, প্রাচীন সমাজবাধনের মূলে ঘা দেওয়ার এই ছবি অম্লান বদনে দেখিয়ে তুমি চটক লাগাবার ফিকিরে আছ!” কথার ঝাজে মনে হচ্ছে যেন আপত্তিকারীতে আমাতে সতীত্বের ও জাতিত্বের আদর্শ নিয়ে একটা ঠোকাঠুকি বেধেছে। তা বেশ। কে আমি বাহাদুর নিতে চাই না, তবে ঠোক ঠেকাবার অনুমতি পেতে পারি ত? সেকালের শাণ্ডিল্য ঋষি, আজ পর্য্যস্ত র্যার গোষ্ঠী বজায় রয়েছে, আমি তার গোত্রধর হয়ে সনাতন বর্ণাশ্ৰমধৰ্ম্ম