জ্যৈষ্ঠ না মেনে চলতেই পারি নে। আবার একালের যে মহৰ্ষিহিন্দুধৰ্ম্মকে জঙ্গম ক’রে গেছেন, তার বংশধর হয়ে আমি আধুনিক জাতিভেদ প্রথা কেমন ক'রে বরদাস্ত করি ? বর্ণ বলতে ত গায়ের রং নয়, ম েরং, অর্থাৎ চরিত্র বোঝায় ; যেখানে সমান মতি-গতির লোক একত্র থাকে, তাকে বলে আশ্রম ; যা ধ’রে রাখে বা এক সঙ্গে বাধে, তারই নাম ধৰ্ম্ম । কাজেই বর্ণাশ্ৰমধৰ্ম্ম মানাতে আমি বুঝি— যে আদর্শ, রুচি, ব্যবহার প্রভৃতি নিয়ে জীবন-যাত্র, সেগুলি যাদের মধ্যে এক-রকমের, তারা বড় সমাজের মধ্যে এক-একটা দল বেঁধে থাকা । এটাই যে স্বাভাবিক, সুবিধেজনক ও সমস্ত সমাজের পক্ষে বলকারক, তা কে অস্বীকার করবে ? আর স্পষ্টই ত দেখা যায় যে, সহশিক্ষার দৌলতে এই রকমেরই দল-বাধার সুযোগ হবে । কিন্তু যে জাতিভেদ প্রথা আমাদের স্থাবর সমাজে এখন দাড়িয়ে গেছে সেটা কি, মা মন-প্রাণ-চরিত্রের যতই মিল থাকু না কেন, দৈবাৎ কে কার ঘরে জন্মে ফেলেছে ভাই ধরে মানুষকে যাবজ্জীবন আলদ আলাদা গণ্ডীর মধ্যে আটক রাখা,—কেউ গণ্ডী পার হবার চেষ্ট করেছে কি স্থাবর দলের মধ্যে দে-মার দে-মার শব্দ ! যে দিন-কাল পড়েছে, তাতে এ-ব্যাপার যেমন অশোভন তেমনি অনিষ্টকর,--হিন্দু-সমাজের সকল ক্ষেত্রে ছড়িভঙ্গী অবস্থা তর অকাট্য সাক্ষী দিচ্ছে । ভরসা এই যে, সহশিক্ষাই হোকৃ, আর যে-রকমেরই সৎ-শিক্ষা হেক্, তার চোটে এ পাপ আর টিকছে না । ওদিকে স্থাবরপন্থী ভেবে সারা যে, পুরুষ-মানুষের সঙ্গে বুদ্ধি ঘষ-মাজ করলে নারীর নারীত্ব, সতীর সতীত্ব থ’সে যাবে। বিদুমী গাগী ত প্রশ্নের উপর প্রশ্ন তুলে উপনিষদের ঋমিকে ঝালাপাল ক’রে তুলেছিলেন ; কিন্তু কৈ, তার নারীত্ব বা সতীত্ব সম্বন্ধে নিন্দের কোন কথা পড়িও নি, শুনিও নি। তাতে ক'রে আমার সন্দেহ হয় যে, আমার সহ-যোদ্ধার উতলা হবার আসল কারণ আর কিছুই নয়, সহশিক্ষিতা পত্নী সকল অবস্থায় পতিকে দেবতা মানতে, তার সেবাদাসীগিরি করতে, রাজি নাও হতে পারেন । চৌপর দিন রাধ আর বাড়া, ছেলের পর ছেলে ঠেকও ; রসাল বই পড়ে সময় ও স্বভাব নষ্ট ক'র না ; সহশিক্ষা সম্বন্ধে দু-চারটি ক 克&娜 ಘ್ হাওয়া-খাওয়ার ব"মৈল-মেশার ছুতোয় হৈ হৈ ক’রে বেড়িও না ; যে “মা” বলতে স্থাবরপন্থী অজ্ঞান, তাই হয়ে থাক—ত, ছেলেপিলেকে মানুষের মত মানুষ করার উপযুক্ত হও না-হও, বাপে খাইয়ে-পরিয়ে বঁচিয়ে রাখতে পারে তার চেয়ে বেশী ছেলে হতে হতে যদি মায়ের শরীর ভাঙে, প্রাণটা যায়, তাতেই বা কি ? এ এক চমৎকার সতীত্বের আদশ বটে ! এটাই যদি কায়েম রাখতে হয়, তাহলে আমি হার মেনে বলি, সহশিক্ষা মোটেই চলবে না, যাকে মহ-শিক্ষা বলা যায় এমন কোন হিকৃমৎ বার করতে হবে। তবে কি আমাদের মেয়েদের মেম-সাহেব বানিয়ে তুলতে চাই ? আরে রাম ! শাণ্ডিল্য-আসিত-দেবল-প্রবরস্ত বে আমি, আমার নামে শেযটা পাশ্চাত্য-পক্ষপাতিতার কলঙ্ক ! ত হয় না। আমি ত বলি, পিতামহ ব্যাসদেব থাকতে আমরা আদর্শের খোজে বিদেশে-বিভুঁইয়ে ঘুরি কেন ? ধিনি মহাভারত-ভরা উপদেশ দিয়েছেন, তিনি কি আর সতীত্বের কথা ছেড়ে গেছেন ? সে বিষয়ে গঙ্গাদেবীর জবানীতে শুনুন । গঙ্গাদেবীর রূপ-লাবণ্যে বিমোহিত হ'য়ে যখন রাজা শাস্তঙ্গ মৃদু-মধুর বচনে তাকে অমুনয় করতে লাগলেন, তখন গঙ্গাদেবী যা জবাব দিলেন তার বাংলা মৰ্ম্ম এই--- “মহারাজ ! তুমি আমায় কামনা ক’রে সম্মানিত ক’রছ বটে, কিন্তু ভগবানের অভিপ্রায়ে কয়টি সস্তান উপযুক্তরূপে ভূমিষ্ঠ করার ভার আমার উপর পড়েছে ; কাজেই আমাকে ভেবে-চিন্তে উত্তর দিতে হচ্ছে । তোমার শ্রেষ্ঠ কুলশীলের কারণে তোমাকে আমার সেই সস্তানদের পিত হবার উপযুক্ত মনে করি, তাই আমি তোমার সহধৰ্ম্মিণী হয়ে তোমার সঙ্গে থাকব । কিন্তু কখনে যদি তোমার আচরণে সেই আসল উদ্দেশ্বের ব্যাঘাত হ’তে দেখি, তবে আমি তোমায় পরিত্যাগ করব ।” এবং অবশেষে গঙ্গাদেবী সে কারণে রাজাকে ছেড়েও গিয়েছিলেন । দেখুন দেখি ! আমাদের মুরসিক পিতামহ কেমন ছোট্ট গল্পচ্ছলে সতীকে কত কি ভেবে পতি বরণ করতে হয়, কি ভাবে পতির সঙ্গে ঘর করতে হয়, কি হ’লে পতির সঙ্গ ছাড়তে হয়, সবই পরিষ্কার বলে দিলেন। সহশিক্ষার
পাতা:প্রবাসী (ষট্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।