পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

▪Uግ8 প্রবাসী >Nご8NS স্তুপ নিৰ্ম্মাণ করা হইয়াছে। চৈত্যশালার বিশাল স্তম্ভগুলিতে কোথাও কোথাও নিৰ্ম্মাণকারীদিগের নাম খোদিত আছে । চৈত্যাগারের পাশে ভিক্ষুদিগের থাকিবার জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কক্ষও আছে। উপরে স্বন্দর জলাশয় । এই সবই আধ মাইল চড়াইপথের মধ্যে । কালে হইতে নাসিক গেলাম। এই স্থানের আশপাশে অনেক লেনি ( গুম্ফi ) আছে । সেগুলি দেখা সম্ভব নয়, এই ভাবিয়া ১২ই ডিসেম্বর পাচ মাইল দূরস্থিত পাণ্ডব গুম্ফা দেখিতে গেলাম। এখানে কালের মত অতটা চড়াই নাই ৷ গুম্ফাপার্থে অসংখ্য মহাযান দেবদেবীর মূৰ্ত্তি রহিয়াছে। বড় চৈত্যশালায় বিশাল বুদ্ধ-প্রতিমা আছে। অন্য এক চৈত্যশালার চৈত্য কাটিয়া ব্রাহ্মণ্য দেবতার প্রতিমা রচনা করা হইয়াছে । শিলালিপিতে ব্ৰাহ্মণ ভক্ত শক রাজকুমার উষবদাত এবং তাহার কুটুম্বিনীর লেখও আছে। এই শকবংশই খ্ৰীঃ পূঃ প্রথম শতাব্দীর কিছু পূৰ্ব্বে নিজ দেশ শকস্থান (সীস্তান ) হইতে আসিয়া সিন্ধু-গুজরাত প্রদেশ এবং তথা হইতে উজ্জয়িনী ও মহারাষ্ট্র অধিকার করেন। উজ্জয়িনীর শকরাজ নহপান ইতিহাসপ্রসিদ্ধ নৃপতি । উষবদাত ইহারই জামাতা। পৈঠনরাজ গৌতমীপুত্র সাতকণি খ্ৰীঃ পূঃ ৫৩ সালে নহপান বা তাহার কোনও বংশজকে সংহার করিয়া উজ্জয়িনী উদ্ধার করেন । এই গৌতমপুত্র সাতকর্ণিই বিক্রমাদিত্য নামে প্রসিদ্ধ । নাসিক হইতে আমার বেরূল যাইবার ইচ্ছা ছিল । বেরুল এখন “এলোরা” রূপ বিকৃত নামেই পরিচিত । ঔরঙ্গাবাদ ষ্টেশনে নামিবামাত্রই এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করিলাম। প্লাটফর্শ্বের বাহিরে আসিবামাত্রই পুলিসের সামনে হাজির হইতে হইল। নাম বলিতে আমার কোনও আপত্তি ছিল না, কিন্তু সেখানে পুলিস সিপাই অপমানসূচক ভাষায় বাপ-আদির নাম জিজ্ঞাসা করায় আমি কিছু বলিতে অস্বীকার করিলাম। ফলে আমাকে টানিয়া প্রথমে থানায় পরে তহশলদারের কাছে লইয়া হয়রান করা হইল । হায়দরাবাদের নবাবের উচিত বাহিরের লোকের জন্য পাসপোটের ব্যবস্থা করা । যাহা হউক, তহশীলদার মহাশয় ভালোক ছিলেন। তিনি, মাম্রাজ-গভর্ণরের ঐদিনে বেরূল দর্শন এইরূপ ব্যবহারের কারণ নির্দেশ করিয়া আমায় ছুটি দিলেন। পরদিন মোটরযোগে নয়টার সময় বেরূলে পৌছিলাম। ঐ মোটর-বাসে এক আমেরিকান সঙ্গী হইলেন। পথে বুঝিলাম ইনিও আমারই অবস্থাপ্রাপ্ত। ঐযুক্ত স্থখর । ইহার নাম ) ওহীয়ে ওয়েস্লীয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ( আমেরিকা ) ধৰ্ম্মপ্রচার বিভাগের অধ্যক্ষ । ইনি অঙ্কোরবাটআদির ভারতীয় ভব্য প্রাচীন বিভূতি সকল দর্শন করিয়া ভারতে আসিয়াছেন । ইহার হৃদয় মানবোচিত সহানুভূতিপূর্ণ। আমরা কৈলাস মন্দির হইতে দর্শন আরম্ভ করিলাম । এক বিশাল শিবালয়—অঙ্গন, স্বার, কক্ষ, আগার, হস্তিবাহন, নানা মূৰ্ত্তি চিত্র ইত্যাদি সমস্তষ্ট—মহাপর্বতগাত্র ছেদন করিয়া নিৰ্ম্মিত ও গঠিত হইয়াছে । ইহা দেখিয়া আমেরিকান মিত্র বলিলেন, “ইহার সম্মুখে অঙ্কোরবাট দাড়াইবার উপযুক্ত নহে। ইহা অতীত ভারতের সম্পত্তি ; দৃঢ় মনোবল, হস্তকৌশল, সকলেরই সজীব স্বরূপ-পরিচায়ক ।” বেরূলে ডাকবাংলা বা দোকান-পাট কিছুক্ত নাই। গুহার নিকটে পুলিস চৌকী আছে । পুলিস সিপাহীর মুসলমান এবং অতি সংলোক ! বলিবামাত্র যথাসাধ্য যাত্রীদিগের সহায়তা করিতে প্রস্তুত । এই সজ্জনদিগের প্রদত্ত রুটি ও কৈলাস গুহার ঝরণার জলে, আমাদের প্রাতরাশ সম্পন্ন হইল। তাহার পর বৌদ্ধগুহার অংশ ধরিয়া সমস্ত দেখিতে আরম্ভ করিলাম ৷ কৈলাসের বাম ভাগে বারোটি বৌদ্ধগুহ । পরে ব্রাহ্মণ-গুহাবলী আছে, তাহার মধ্যস্থলে কৈলাস । অন্তদেশে চারিটি জৈন গুহা আছে । বস্তুতঃ এই সকল গুহাকে পৰ্ব্বতে কত্তিত প্রাসাদরাজি বলা উচিত । আমাদের সৌভাগ্য, পূৰ্ব্বদিন মান্দ্রাজের গবর্ণর আসায় গুহাবলী পরিষ্কার করা হইয়াছিল । সুতরাং চামচিকার দুর্গন্ধ হইতে উদ্ধার পাইয়াছিলাম। সূৰ্য্য অস্ত গেল। আমরা তখন শেষ জৈনগুহা দৰ্শন সমাপ্ত করিয়াছি। ফিরিবার সময় আমার মনে কেবলই আমাদের সেই পূৰ্ব্বপুরুষদের কথা মনে আসিতেছিল যাহারা এইরূপে পৰ্ব্বত কাটিয়া নিজেদের শ্রদ্ধা ও কীৰ্ত্তির অক্ষয় নিদর্শন রাখিয়া গিয়াছেন । হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধৰ্ম্মের বিচিত্র রূপকলাকৌশল, বহুশতাব্দীব্যাপী অতুলনীয় সহিষ্ণুতা, কৃতি ও হৃদয়ের শক্তির পরিচায়ক এই নিদর্শন সত্যই কি অপূৰ্ব্ব নহে ?