পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ আমাদের মালগুলি লগেঞ্জ-আপিসের হেপাজতে রেখে দিলুম, অরুণ বাবু তার গাড়ী পেয়ে তাতে চড়ে বসলেন। সারাদিন পূৰ্ব্ব-পরিচিত ভেনিস শহরে সান-মার্কে অঞ্চলটায় ঘুরে বেড়ালুম। চমৎকার লাগল। তের বছরে বিশেষ কোনও পরিবর্তন লক্ষ্য হ'ল না। প্রথমেই আমরা টমাস কুকের আপিসে গিয়ে ভিয়েন-পর্য্যস্ত টিকিট কিনলুম– তৃতীয় শ্রেণীর টিকিটের জন্য নিলে ১৩০ লির, অর্থাৎ প্রায় ৩০ টাকা। শহর দেখার সঙ্গী হ'লেন আমাদের আসামী সহযাত্রী দু-জন—শ্ৰীযুক্ত কুলধর চলিহা ও ঐযুক্ত গুণগোবিন্দ দত্ত । ভেনিসের সান-মার্কের চত্বর, সান-মার্কোর গির্জা, অতীত কালের ভেনিসের শাসক “দোঞ্জে" উপাধিধারী রাজার বাড়ী, সান-মার্কোল চত্বরের ধারে সব দোকান, আর আশেপাশে কতকগুলি সরু সরু রাস্তায় দোকান-পাট, ঘোর গেল । সান-মার্কোর গির্জা আমার অতি প্রিয় । বিজাষ্ট্ৰীয় রীতিতে তৈরি খ্ৰীষ্টান ধর্থেব এই মন্দিরট রাসকিন প্রমুখ অনেক শিল্প-রসিককে মুগ্ধ করেছে। এর ভিতরের মোসাতকৃ কাজ এই রীতির চিত্রশিল্পের এক উৎকৃষ্ট নিদর্শন । গির্জাটত ঘুরেফিরে খুব দেখা গেল । ১৯১১ সালে ভেনিসে এসে চার-পাচ দিন ধ’রে এই গির্জাট বেশ করে দেখে নিয়েছিলুম। এরূপ সুন্দর পরিকল্পনাব দেবমন্দির দেখে তৃপ্তি আমার হয় না । ভিতরটায় ছাতের নীচের দিকে যেন সোনা চলে:-- সোণালী জমির উপর লাল কাংলা নীল রঙের কাচের কুঁচি দিয়ে বিজান্তীয় রীতিতে অঙ্কিত চিত্রের মোসাইক । মন্দিরের মধ্যকার নানা রঙীন পাথরের থাম, রঙীন পাথরের নক্সাদার মেঝে, আর উপরের দু-একটা কাচের জানাল দিয়ে স্বৰ্যরশ্মি এসে ভিতরে গম্বুজ ক'টর নীচে জমাট আধো-আঁধারকে যেন বড়ে বড়ো টুকরো করে কেটে দিয়েছে । এই মন্দির দর্শন-প্রসঙ্গে ১৯২২ সালের একটি ক্ষুদ্র ঘটন। আমার বেশ মনে আছে । আগে ইটালী-স্ত্রমণকালে দেখেছি, প্রায় সব গির্জার ভিতরে, বেশ লক্ষণীয় স্থানে একটা ক'রে ইস্তাঙ্গর *TFE -- La chiesa e la casa di Dio : vietato sputard–“গির্জ হচ্ছে ভগবানের ঘর ; পথ-ফেলা নিষিদ্ধ।" এই সান-মার্কে গিজাতে ব’সেই আমার অভিজ্ঞতা হয় যে এইরূপ ইস্তাহারের আবগুকত ইটালীতে & تقييد পশ্চিমের যাত্রী તેS ছিল,—বোধ হয় এখনও আছে। সান-মার্কে গির্জায় একটা বিজান্তীয় যুগের icon বা মেরীর চিত্র আছে--যীশুকে কোলে ক'রে মা-মেরীর ছবি ; এটা এই মন্দিরের একট বড়ো জাগ্রত দেবতা । এই চিত্রের সামনে বসে, ১৯২২ সালের দর্শনের সময়ে এক দিন দেখি, এক দল পাদরী ব’লে খুব ঘটা ক’রে litany বা মা-মেরীর শত নাম জপ করছে। সামনসামনি চেয়ারে দু-সারিতে জন আষ্টেক পাদরী বসেছেন, সবুজ আর জরী দেওয়া খুব জমকালে পোষাক প'রেছেন, কালে পাদরীর পোষাকের উপরে। এক দল একটা ক'রে লটিন মন্ত্র স্বর করে পাঠ করেন,—যেমন Mater Dei “মতের দেষ্ট" অর্থাৎ “দেব-মাত” বা “ঈশ্বর-মাত,” অন্ত দল তেমনি স্বরে জবাব-স্বরুপ ধুয়া পাঠ করেন—Orn pro nohis “ওর প্রো নোবিস" অর্থাৎ “আমাদের জন্য প্রার্থন করুন।" এই ভাবে ম৷ মেরীর যত গুণবাচক নাম— সg, Rosa Mystica বা “দৈব-রহস্যময়ী গোলাপ-পুষ্প", Mater Dolorosa “মাতের দোলোরোস" বা “দুঃখময়ী ব| বিষাদিনী জননী, Turres cburnea “তুরেস এবুনেআ” বা “গজদন্তময়ী স্তম্ভস্বরূপিণী।” প্রভৃতি—এক দল পাঠ করেন, আর অন্ত দল "আমাদের জন্য প্রার্থনা করুন” এই পৃয় গান করেন। বেশ ভারিঙ্কে পুরুষের গল, বিরাট মন্দির গমগম করছে, সমবেত গীতধ্বনির প্রতিধ্বনি আসছে গির্জাকে যেন কঁপিয়ে দিয়ে। মূৰ্ত্তির সামনে বাতি আছে, ধূপ-ধূনার গন্ধে আর ধোয়ায় মন্দির পরিপূর্ণ, হাতজোড় করে ভক্ত পূজারীর দল বসে আছে, ইটু গেড়ে আছে—ঠিক আমাদের পূজাবাড়ীর ভাব। আমি হিন্দু-সন্তান এই দৃশুর্টকে বেশ উপভোগ করছি, মন্দিরের দুটা থামের মাঝে একটু উচু স্তম্ভ-পাদপীঠে বসে ; সব ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ লাগছিল ; রোমান কাথলিক খ্ৰীষ্টান ধৰ্ম্মের মান দেবতার মধ্যে কেমন ভাবে পিতা ঈশ্বর ও পুত্র যীশুর উপরেও মাত মেরীর পুজার প্রসার লাভ করেছে, তাঙ্ক ভাবছি -কেমন ক'রে সেই জগঞ্জননী ধাঁকে আমরা ভারতবর্ষে উম, যা দুৰ্গ। বা কালী বলে পূজা করি তিনি রোমান কথলিক ধৰ্ম্মে মাতৃ দী মেরীর বিগ্রহ ধারণ করে বসেছেন ত দেখে পুলকিত হচ্ছি--এমন সময়ে দেখি, একটা ইটালীয়ান লোক, ময়লা কাপড়চোপড় ণব, হাতে টুপী, বাইবে থেকে এসে আমি যে